সুন্দর ও সুস্থ ত্বক প্রতিটি মানুষেরই কাম্য। কিন্তু ত্বকের যতœ বলতে আমরা বেশিরভাগ সময়ই বাজারে পাওয়া নামকরা ক্রিম, সিরাম বা স্ক্রাবের দিকে ছুটে যাই। অথচ ত্বকের প্রকৃতি না বুঝে পণ্য ব্যবহার করলে সেটি উপকারের বদলে মারাত্মক ক্ষতিও করতে পারে। তাই রূপচর্চার প্রথম ধাপ হচ্ছে, নিজের ত্বকের ধরন চেনা। ত্বকের ধরন অনুযায়ী নিয়মিত পরিচর্যা করলে ত্বক হয় উজ্জ্বল, দাগহীন ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন ত্বকের ধরন এবং ধরন অনুযায়ী ত্বকের যতœ-
ধরন বোঝার উপায়
ত্বকের ধরন সাধারণত পাঁচ ধরনের, শুষ্ক, তেলতেলে, মিশ্র, সংবেদনশীল এবং স্বাভাবিক। সকালে মুখ ধোয়ার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আয়নায় তাকালে এবং হাতে স্পর্শ করলে ত্বকের প্রকৃতি বোঝা যায়। শুষ্ক ত্বক টানটান লাগে, তেলতেলে ত্বকে নাক-কপালে উজ্জ্বল ভাব দেখা যায়, মিশ্র ত্বকে টি-জোন তেলতেলে ও গাল শুষ্ক থাকে, আর সংবেদনশীল ত্বক সামান্য পণ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখায়। যদি মুখে কোনো বিশেষ সমস্যা না থাকে এবং তেল-জলের ভারসাম্য ঠিক থাকে, তবে তা স্বাভাবিক ত্বক হিসেবে ধরা হয়।
শুষ্ক ত্বক
শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতার ঘাটতি বেশি থাকে, ফলে খোসা ওঠা বা রুক্ষ অনুভূতি হয়। এ ধরনের ত্বকের জন্য প্রয়োজন গভীর ময়েশ্চারাইজিং রুটিন। হালকা, ক্রিমি ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে দিনে ও রাতে হায়াল-রোনিক অ্যাসিড বা শিয়া বাটারযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ঘষে স্ক্রাব করা বা অ্যালকোহলযুক্ত টোনার এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ এগুলো ত্বককে আরও শুষ্ক করে তুলতে পারে।
তেলতেলে ত্বক
তেলতেলে ত্বক দেখতে উজ্জ্বল হলেও এটি ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডসের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সঠিকভাবে তেল নিয়ন্ত্রণই এই ত্বকের প্রধান কাজ। জেল বা ফোম বেসড ক্লিনজার দিয়ে দিনে দুবার মুখ ধোয়া উচিত। নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার এবং স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা নিয়াসিনামাইড ব্যবহার ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমাতে সহায়তা করে। তবে বারবার মুখ ধোয়া বা ভারি ক্রিম লাগানো এই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মিশ্র ত্বক
মিশ্র ত্বকে একসঙ্গে দুই ধরনের সমস্যা দেখা যায় একটি হলো, টি-জোন তেলতেলে এবং গাল শুষ্ক। তাই পরিচর্যায়ও দরকার ভারসাম্য। মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে গাল এবং নাক-কপালে ভিন্ন ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, টি-জোনে হালকা জেল ময়েশ্চারাইজার এবং গালে ক্রিম বেসড পণ্য। সপ্তাহে এক-দুবার মৃদু স্ক্রাব ব্যবহার এ ত্বককে ফ্রেশ রাখে, তবে ভারি ময়েশ্চারাইজার সব জায়গায় লাগালে তা সমস্যা বাড়াতে পারে।
সংবেদনশীল ত্বক
সংবেদনশীল ত্বকে সামান্য ভুল পণ্য ব্যবহারেই লালচে ভাব, জ্বালা বা র?্যাশ দেখা দিতে পারে। তাই এ ত্বকের জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত সতর্কতা। সুগন্ধি ও অ্যালকোহলমুক্ত পণ্য ব্যবহার করা উচিত এবং অ্যালোভেরা, সেরামাইড বা ওটসযুক্ত উপাদান ত্বকে স্বস্তি দেয়। নতুন কোনো পণ্য ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করা খুব জরুরি। রুক্ষ স্ক্রাব বা শক্তিশালী অ্যাসিড প্রথমেই ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এগুলো ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
স্বাভাবিক ত্বক
যাদের ত্বক স্বাভাবিক, তাদের সৌভাগ্য অনেক। তেল-জলের ভারসাম্য ঠিক থাকে বলে ত্বকে খুব বেশি সমস্যা দেখা দেয় না। তাই নিয়মিত ক্লিনজ–টোন-ময়েশ্চারাইজার রুটিন বজায় রাখাই যথেষ্ট। সপ্তাহে একবার স্ক্রাব বা মাস্ক ব্যবহার এবং হালকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিরাম প্রয়োগ ত্বককে আরও উজ্জ্বল ও সতেজ রাখে।

