সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ১০:১১ এএম

‘ধরা পড়লে বলবা আমরা ইন্ডিয়া যাচ্ছিলাম’

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ১০:১১ এএম

ভারত থেকে পুশ ইনের পর ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক কয়েকজন। ছবি: সংগৃহীত

ভারত থেকে পুশ ইনের পর ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক কয়েকজন। ছবি: সংগৃহীত

বিএসএফ আমাদের বলেছে যে, আমরা দুটো গুলি মারবো। গুলি মারার পরে তোমরা সব দৌড় মারবা। তো ওরা দুটো গুলি মারে। তখন আমরা সবাই দৌড় মারি। সামনে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ি।

কথাগুলো বলছিলেন জাহানারা খাতুন। শনিবার (২৪ মে) ভোরে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও সীমান্তের ভেতরে তাকে আটক করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। তার সঙ্গে সেদিন ‍আরও ১৬ জনকে আটক করে বিজিবি।

বিজিবি জানায়, তাদের প্রত্যেককেই ভারত থেকে পুশ ইন করা হয়েছে।

জাহানারা খাতুন বলছিলেন, ভারত থেকে ঠেলে বাংলাদেশে ঢোকানোর সময় বিজিবির সামনে পড়লে ‘ বলতে হবে সেটাও শিখিয়ে দিয়েছিলো বিএসএফ সদস্যরা।’

তিনি বলেন, ‘ওরা (বিএসএফ) বললো , যদি ধরা পড়ো তাহলে বলবা যে আমরা ইন্ডিয়া যাচ্ছিলাম, সীমান্তে বিএসএফ তাড়া দেয়ায় আবার চলে আসছি।’

জাহানারা খাতুনকে যেভাবে পুশ ইন করা হয়েছে, একইভাবে গত কয়েক সপ্তাহে চার শতাধিক মানুষকে পুশ ইন করে বাংলাদেশের ভেতরে পাঠিয়েছে ভারত।

যাদের পুশ ইন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যেমন রোহিঙ্গা রয়েছে, তেমনি রয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকও যারা অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে।

কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের ঘটনা কেন ঘটছে? আর বাংলাদেশি নাগরিকরা কেন কাজের খোঁজে ভারতে যাচ্ছেন?

‘মুম্বাই থেকে বিমানে কলকাতা, তারপর পুশ ইন’

জাহানার খাতুনের সঙ্গে  শনিবার (২৪ মে) পুশ ইনের পর বিজিবির হাতে আটক হন যশোরের নুরুন্নাহার, যিনি তিন বছর আগে ভারতের মুম্বাইয়ে গিয়েছিলেন কাজের খোঁজে।

নুরুন্নাহার বলেন,‘আমার এলাকার একজনের সঙ্গে মুম্বাই গিয়েছিলাম। সেখানে রুম ভাড়া করে থাকতাম। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করতাম।

তার বর্ণনা থেকে জানা যায়, গত এপ্রিলের শেষ দিকে  মুম্বাইয়ে ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। সেখানে ১৫ দিন আটক রেখে যাচাই-বাছাইয়ের পর বিমানে করে তাদের পাঠানো হয় কলকাতা। এরপর কলকাতা থেকে বাসে করে আনা হয় বাংলাদেশ সীমান্তে। ভোর রাতে তাদের ঢুকিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকায়।

নুরুন্নাহার বলেন, ‘আমাকে রুম থেকেই সিআইডি ধরছিলো। এরপর যাচাই-বাছাই করে। আমার বাড়ি কোথায়, কবে আসছি এই জিজ্ঞাসা করে। পরে মোবাইলে আমার বাংলাদেশের ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখাই। তারপর আমাকে কলকাতা হয়ে সীমান্তে নিয়ে আসে। মোট তিনটা গাড়ি ছিল। দুইটা গাড়ির লোকদের অন্য দিক দিয়ে পার করেছে। আর আমাদের পার করেছে আরেক দিক দিয়ে। ভূট্টা খেত, জঙ্গল, পানি এই সবকিছুর মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে অন্ধকারের মধ্যে আমরা এগুতে থাকি। আমরা তো এখানকার কিছুই চিনি না। পরে একসময় বিজিবি আমাদের দেখতে পেয়ে আটক করে’

নুরুন্নাহার ও জাহানারাসহ ১৭ জনকে একসঙ্গে সীমান্তে ঠেলে দেয় বিএসিএফ।

কাজের সন্ধানে ভারতে কেন?

দিনাজপুরের তরিকুল ইসলাম। সাত মাস আগে পাথর ভাঙার কাজে যোগ দিতে অবৈধভাবে গিয়েছিলেন ভারতের রাজস্থানে। কিন্তু দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশি ধরতে অভিযান শুরু হলে গতমাসে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

তিনি বলেন, কাজের সন্ধানেই ভারত গিয়েছিলাম। বাংলাদেশেও কাজ আছে। কিন্তু এখানে বছরের বারো মাসের মধ্যে কাজ পাওয়া যায় তিন মাস। কিন্তু তিন মাসের ইনকাম দিয়ে কি গোটা বছর চলবে? তাই ইন্ডিয়াতে যাই, সেখানে পাথর ভাঙার কাজ সবসময়ই পাওয়া যায়। মাসে আঠারো/বিশ হাজার টাকা ইন্ডিয়ান রুপি বেতন দেয়। কিন্তু থাকা-খাওয়ার খরচ কম। ফলে হাতে টাকা থাকে।’

তিনি বলেন, তার গ্রামের অনেকেই ভারতে গিয়ে কাজ করেছেন। তাদের টাকা পাঠানোর খবরে তিনিও কাজে যেতে উৎসাহিত হন।

তরিকুল ইসলাম বলেন,‘ওখানে পাথর ভাঙার কাজটা নিঃশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর। প্রচুর ধূলা-বালি হয়। এই কাজগুলো বাংলাদেশিরাই করে। মালিকও জানে যে এরা বাংলাদেশ থেকে আসছে। কিন্তু কিছু বলে না। কারণ ওদের শ্রমিক দরকার। আর আমাদের দরকার টাকা।’

তরিকুলের মতোই ভারতের রাজস্থানে গিয়েছিলেন পাশের গ্রামের খালেক মন্ডল। 

ভূমিহীন পরিবারের খালেক বলেন, ‘কৃষিকাজ ছাড়া আর কোনো কাজ পারি না। কিন্তু বাংলাদেশে কৃষিকাজের যে অবস্থা, তাতে সংসার চালানোর মতো সারা বছর কাজ পাওয়া যায় না। আমার তো পড়ালেখা নাই। ঢাকায় বা অন্য কোথাও যে যাবো, কে আমাকে চাকরি দেবে? এইজন্য ভারতে গেলাম। পাথর ভাঙার কাজ করলে মাসে বেতন পনের হাজার রুপি পাইতাম। প্রতিমাসে বাড়িতেও টাকা পাঠানো যায়।’

কাঁটাতারে মই, বেড়া টপকে ভারতে

সীমান্তে যখন কাঁটাতারের বেষ্টনী এবং কঠোর নজরদারি, তখন কাজের জন্য অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার ঘটনা কীভাবে ঘটছে? আবার কাজের ফাঁকে অনেকেই বাংলাদেশে ফেরতও আসছেন। সেটাই বা কীভাবে হয়?

এমন প্রশ্নে দুটি উত্তর পাওয়া যায়। প্রথমটি হচ্ছে, কাঁটাতারের বেষ্টনি কেটে ভারতে ঢুকে পড়া। এ কাজে বড় আকারের প্লায়ার্স ব্যবহার করা হয়।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কাঁটাতারের ওপরে মই লাগিয়ে বেড়া টপকে ওপারে চলে যাওয়া।

তরিকুল ইসলাম বলেন,‘সীমান্তের কাছে দালাল থাকে। আমরা বলি লাইনম্যান। প্রথমে লাইনম্যান আমাদেরকে আশ্রয় দেয়। তারপর যখন সীমান্তের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় বিজিবি বা বিএসএফের কেউ থাকে না। তখন সুযোগ বুঝে মই লাগিয়ে দেয়া হয়। দুই পাশেই মই থাকে। আমরা পার হয়ে যাই। ওপারে আবার লাইনম্যান থাকে। সে আমাদের রিসিভি করে নেয়।’

সম্প্রতি ভারত থেকে দেশে ফেরার সময় বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে বিজিবির হাতে আটক হন দিনাজপুরের স্বপন চন্দ্র সরকার।

অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের অভিযোগে তাকে পাসপোর্ট আইনে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালত থেকে জামিন পান তিনি।

স্বপন চন্দ্র সরকার বলেন,‘দুইপাশেই লাইনম্যান আছে। আমি এগারো হাজার টাকা দিয়ে পার হয়েছিলাম চার মাস আগে। এইবার ফেরার সময়ও এগারো হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ঢোকার পর গ্রেপ্তার হয়ে যাই।’

বাংলাদেশের সীমান্তে বিজিবির টহল কার্যক্রম নিয়মিত চললেও খোদ বিজিবিই বিভিন্ন সময় স্বীকার করেছে যে বিশাল সীমান্ত এলাকা সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারি সম্ভব নয়। তবে এর মধ্যেই ভারত থেকে সাড়ে চারশত জনেরও বেশি মানুষের পুশ ইনের ঘটনা নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যাদেরকে পুশ ইন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আবার অন্তত ৪০ জন আছেন রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব যাচাই করে কোনো বাংলাদেশি পাওয়া গেলে আইন মেনে হস্তান্তরের কথা বলেছে ভারতকে।

কিন্তু এই অনুরোধের পাশাপাশি বাংলাদেশি নাগরিকদের কেউ কেউ কেন অবৈধভাবে ভারতে ঢুকছে এবং এটা কীভাবে বন্ধ করা যাবে সেটাও এখন বাংলাদেশের সামনে বড় প্রশ্ন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!