পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে স্কুলবাসে ভয়াবহ বোমা হামলায় অন্তত ৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। যার মধ্যে ছয়জনই শিশু। এ ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনার মুখে পড়েছে। দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।
গত বুধবার সকালে খুজদারে ঘটে যাওয়া এ হামলায় আহত হয়েছে আরও বহু শিশু। আহতদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাস্থলের বিভীষিকাময় চিত্র, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্কুলব্যাগ, রক্তাক্ত জুতা এবং ধাতব ধ্বংসাবশেষ আঘাত করে মানবিক অনুভূতিতে।
স্কুলবাসে শিশুদের টার্গেট করে করা এই হামলা শুধু পাকিস্তান নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী এই হামলায় ভারতের ‘প্রক্সি গোষ্ঠীর’ জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো পক্ষই হামলার দায় স্বীকার করেনি এবং ভারত সরকার এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
দুই সপ্তাহ আগেই কাশ্মীর সীমান্তে ভয়াবহ সংঘাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ড্রোন ও আর্টিলারি হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপরেই পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে ২৬ জন নিহতের ঘটনায় ভারতের তরফে পাকিস্তানপন্থি জঙ্গিদের দায়ী করা হয়। সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বেলুচিস্তানের এই নতুন হামলা সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বেলুচিস্তান বহু বছর ধরে রাজনৈতিক বৈষম্য, প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণের অভিযোগ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে অস্থির একটি প্রদেশ। বেলুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) মতো সংগঠনগুলো সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে। তাদের অনেক হামলায় সেনা সদস্য ও সরকারি স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হলেও এবার সরাসরি শিশুদের টার্গেট করায় পুরো অঞ্চলে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
পাকিস্তান সরকার এখন বিশ্বমঞ্চে এই হামলার বিষয়টি তুলে ধরার কথা বললেও ভারতের অবস্থান স্পষ্ট- তারা এ হামলায় জড়িত নয়। ইসলামাবাদ যদিও অতীত হামলার প্রেক্ষাপট দেখিয়ে ভারতের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে চায়, তবুও এখনো পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার আমাদের বলেন, সরকার মনে করে এই প্রদেশে ‘ফেসলেস কোর্ট’ অর্থাৎ বিচারক ও প্রসিকিউটরের পরিচয় গোপন রাখা হবে এমন সন্ত্রাসবিরোধী আদালত প্রয়োজন হতে পারে। কারণ জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রতিশোধের আশঙ্কায় প্রচলিত আদালতগুলো প্রায়ই অভিযুক্তদের দণ্ড দিতে সাহস করে না।
এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী বলেন, স্কুলবাসে হামলার সঙ্গে বেলুচ পরিচয়ের কোনো সম্পর্ক নেই; এটি পুরোপুরি ভারতের উসকানিমূলক কাজ।
সরকার জানিয়েছে, তারা বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে এই ইস্যুটি তুলে ধরছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার ওপর এর প্রভাব এখনো অনিশ্চিত।
আপনার মতামত লিখুন :