মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

‘জুলাই নায়ক’ সেই অরিত্র এখন ভিসির চোখে ‘ভিলেন’

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

‘জুলাই নায়ক’ সেই অরিত্র এখন ভিসির চোখে ‘ভিলেন’

ক্যাম্পাসে এক নামে তাকে চেনে সবাই। ‘জুলাই নায়ক’ হিসেবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরিচিতি। নাম বাফিল আহমদ অরিত্র। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)সহ সিলেট শহরজুড়ে যার তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের সংগঠিত করা, তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়াÑ সার্বিকভাবে অরিত্র নতুন মাত্রা এনেছিল সিকৃবির ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে। এ জন্য তাকে পড়তে হয়েছিল জীবনঝুঁকিতেও। শিক্ষাজীবনের ইতিও টানার দ্বারপ্রান্তে ছিল অরিত্র এবং তার সহপাঠীরা। কিন্তু আন্দোলন সফল এবং গণঅভ্যুত্থানে বিজয় নিশ্চিত হওয়ায় অরিত্ররা রক্ষা পায়। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অরিত্র এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট চক্রের টার্গেটে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি হিসেবে অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম যোগদানের পর নানাভাবে অরিত্রের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্টের সেই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তাকে খেঁপিয়ে তোলে। ফল হিসেবে অরিত্র এখন ছাত্রত্ব হারাতে বসেছেন। একাধিকবার তাকে অভিনব ইস্যুতে শো-কোজ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা অরিত্র চোখে এখন রীতিমতো সর্ষেফুল দেখছেন। পড়েছেন উচ্চশিক্ষার স্বপ্নভঙ্গের ঝুঁকিতে। জুলাই নায়ক অরিত্র এখন ভিসির চোখে ভিলেন বনে গেছেন। 
সিকৃবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজেই আইনবহির্ভূতভাবে অরিত্রের ফল প্রকাশ না করতে রেজিস্ট্রারকে লিখিতভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও বিস্মিত করে। শুধু ভিসির ইগো এবং ফ্যাসিস্ট শক্তির ষড়যন্ত্র সফল করতে তাকে নিজের শিক্ষাজীবন বলি দিতে হচ্ছে। নিজের শিক্ষকের বিরুদ্ধে হওয়া একটি অন্যায়ের প্রতিবাদমূলক স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়াই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
তবে ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম দাবি করেন, অরিত্র বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী কর্মকা-ে জড়িত। বলেন, সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দোষী শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে কাটগড়ায় দাঁড় করাতে চাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্টের চেষ্টা করছে সে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় তার ভেতরের শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষায় যেকোনো পদক্ষেপ নেবে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তের প্রতিবেদন সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। 
বাফিল আহমদ অরিত্র বিএসসি ইন কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ছাত্র। তিনি বিভাগের সব পরীক্ষা ও ক্লাসের নিয়মিত শিক্ষার্থী। গত ১৯ জুন বিএসসি ইন কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের স্নাতক সমাপনী পরীক্ষা-২০২৩ এর ফল প্রকাশিত হয়। সেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন অরিত্রও। কিন্তু সেদিনের প্রকাশিত ফলে তার ফল স্থগিত দেখানো হয়। বিষয়টি তাকে এবং তার বিভাগের অনেক শিক্ষককে অবাক করে। এ নিয়ে ওইদিন বিকেলে অফিসে যোগাযোগ করলে তখন তার হাতে ১৮ জুন ইস্যু করা একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়, লিখিত মুচলেকা দিলে তার ফল প্রকাশ করা হবে। সেই মুচলেকায় লিখতে হবে, ফল প্রাপ্তির পর তিনি আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন না। উচ্চশিক্ষার জন্য তাকে অন্যত্র চলে যেতে হবে। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) প্রফেসর ড. আসাদ-উদ-দৌলা স্বাক্ষরিত নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক প্রফেসর আবুল কাশেমের প্রতি হওয়া ‘একটি অন্যায়ের’ এবং ‘ষডযন্ত্রের’ প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাসের কথা উল্লেখ করা হয়। ফেসবুকের ওই স্ট্যাটাস ছাড়া আর কোনো অপরাধের কথা বলা হয়নি। অরিত্র এটিকে বড় কোনো অন্যায় কিংবা অপরাধ মনে করেননি বলে ওই মুচলেকা দিতে রাজি হননি। তিনি আইনি পথে গিয়ে গত ২২ এবং ২৩ জুন ফল স্থগিত প্রত্যাহার, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির সুযোগ চেয়ে এবং যে নীতিমালায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে সেই নীতিমালাসহ সময় চেয়ে পৃথক আবেদন করেন। এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তার আবেদনে সাড়া দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। 
অরিত্র বলেন, আমি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আগামী কমিটিতে আমি সভাপতি পদে প্রার্থিতায় আগ্রহী। আমার শিক্ষা এবং রাজনৈতিক জীবন ধ্বংস করতে এই ষড়যন্ত্র। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সক্রিয় ও নেতৃত্বে থাকা কর্মী হওয়ায় সেই সময় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর একটি শক্তিশালী সিন্ডেকেটের রোষাণলে পড়ি। তারাই এখন আমার স্বপ্ন ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা ভিসিকে প্রভাবিত করছেন। 
তিনি আরও বলেন, আমাকে প্রশাসন এখনো ফল স্থগিতের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানায়নি এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির সুযোগও দেয়নি। আমি জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের একজন সম্মুখযোদ্ধা। 
অরিত্র জানান, তার পিতা শাকিল আহমদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির রিজভী আহমদের রুমমেট ছিলেন এবং গত ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর নয়াপল্টনের বিএনপির অফিসের সামনে থেকে পুলিশের হাতে আটক হন। ১ মাস তাকে গুম করে রাখে ফ্যাসিস্ট সরকার। ১ মাস পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় এবং ২ মাস তিনি কারাগারে ছিলেন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় জিয়া মঞ্চের আহ্বায়ক।
অরিত্র নিজেকে ছাত্রদল কর্মী দাবি করলেও সিকৃবির ভিসি ড. মো. আলিমুল ইসলামের দাবি, সে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। নিজের খোলস পাল্টে ছাত্রদলে অনুপ্রবেশ করেছে। এখন ছাত্রদলের বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী চক্রকে নিয়ে অপতৎপরতায় লিপ্ত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে, ভিসির ঘনিষ্টজন ছাত্রনেতা আবু সাঈদ রবি এই ঘটনার কলকাঠি নাড়ছেন। তিনি পিএইচডি প্রোগ্রামের ছাত্র। তার স্বার্থ সংরক্ষণ করতেই অরিত্রকে ক্যাম্পাসছাড়া করতে চাইছে প্রশাসন। 
এদিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) আসাদ-উদ-দৌলার সঙ্গে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য কারতে রাজি হননি। পরবর্তীতে তার নাম্বারে এসএমএস দিয়েও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে যাকে নিয়ে অরিত্র ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম অরিত্রের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ যে আচরণ করছে, সেটি ‘অন্যায়’ এবং ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পরীক্ষার ফল ডিনের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রকাশ করবেন। ডিন যে ফল প্রকাশের অনুমোদন দেন সেই ফল স্থগিত হয় কীভাবে, কোন আইনে; আমার যেমন বোধগম্য নয় তেমনি একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে একজন মেধাবী ছাত্রের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনÑ এটিও মেনে নেওয়া যায় না। তার অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। তা ছাড়া অরিত্র শিক্ষকের প্রতি তার সহপাঠীদের কুরুচিপূর্ণ আচরণ ও অসম্মানিত করার প্রতিবাদ করেছে মাত্র। সেখানে আসল অপরাধীদের কোনো শাস্তি না দিয়ে উল্টো অন্যায়ের প্রতিবাদকারীর জীবন বিষিয়ে তোলার এই নৈতিকতা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে লালন করে? এটি মারাত্মক অন্যায়। তার প্রতি অবিচার হচ্ছে। 
এ বিষয়ে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুখতারুন ইসলাম বলেন, আমি পরীক্ষার ফল অনুমোদন করে দিয়েছি। অরিত্র সব বিষয়ে পাসও করেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেজাল্ট স্থগিত রেখেছে। 
সূত্র জানায়, ফল প্রকাশের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন প্রফেসর ড. কাজী মেহতাজুল ইসলাম। ভিসি অরিত্রের ফল আটকে দিতে লিখিত জানালে তিনি তার রেজাল্ট না আটকে প্রকাশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। এরপরই তাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে প্রফেসর ড. কাজী মেহতাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সে সময় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকার কথা স্বীকার করলেও অরিত্রের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 
ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত। ক্যাম্পাসের ভেতরে রাজনীতি নিষিদ্ধ। কোনো শিক্ষার্থী রাজনীতি করতে পারবে না। সে রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। এজন্য তার বিরুদ্ধে আমাদের একশন নিতে হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!