ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

চিরুনি অভিযান দুই দিনে গ্রেপ্তার ৩২৩৭ জন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ০১:৪৭ এএম

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষিত চিরুনি অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে। গত ১৩ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সারা দেশে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও ভয়ংকর অপরাধীদের আটক করতে চিরুনি অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেন। চিরুনি অভিযানের দুই দিনে সারা দেশ থেকে ৩ হাজার ২৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

চিরুনি অভিযান পরিচালনা নিয়ে গত মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি বাহারুল আলম শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে আইজিপি দেশের রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। তিনি চিরুনি অভিযান জোরদার করতে রেঞ্জ ডিআইজি ও এসপিদের কঠোর নির্দেশনা দেন। জুম মিটিংয়ে আইজিপি অভিযান জোরদার করতে এসপিদের বিশেষ নির্দেশনা দেন। অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের কোনো ছাড় না দেওয়ার নির্দেশসহ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে পৃথক সভা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন অপরাধ বিভাগের উপ-কমিশনার, জোনের সহকারী কমিশনার ও ওসিদের কার্যক্রমে অধিকতর গতি আনার নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ডিবিকে তিনি দিয়েছেন বিশেষ নির্দেশনা। ওই নির্দেশনা পাওয়ার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান ও ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ডিবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রণয়ন করেন অভিযানের ছক। ছক অনুযায়ী অভিযানে নামার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে বৈঠকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ১২৭টি চেকপোস্ট স্থাপন করে পুলিশ তল্লাশি চালায়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পুলিশের কার্যক্রম একেবারে ভেঙে পড়ে। পরে ধীরে ধীরে পুলিশ তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসে। অনেক চেকপোস্ট স্থাপন ও তাদের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটি চেকপোস্টে কার্যক্রম শুরু হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিরুনি অভিযান ঘোষণার পর ডিএমপি মঙ্গলবার থেকে এসব চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি শুরু করে।  

ডিএমপি ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, চিরুনি অভিযানে আমরা সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ছাড়াও ছিনতাইকারী, ডাকাত, চোর এবং প্রতারকদের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ডাকাত, ছিনতাইকারী ও প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি বলেন, অভিযানে আমরা নিকট অতীতের ঘটনাগুলোকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। 

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, বিশেষ অভিযানসহ নানা অভিযানে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশ থেকে ১ হাজার ৫৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা এবং ওয়ারেন্টের আসামি ১ হাজার ৭ জন। অন্যান্য ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৬৫ জন। অভিযানে দুটি পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিন, একটি উজি সাবমেশিনগান, চার রাউন্ড গুলি, তিনটি চাইনিজ কুড়াল, একটি কিরিচ, একটি লোহার রেত উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বুধবার ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশ থেকে ১ হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা এবং ওয়ারেন্টের আসামি ১ হাজার ১১৮ জন। অন্যান্য ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫৪৭ জন। অভিযানে একটি ওয়ান শুটারগান, একটি দেশীয় একনলা বন্দুক ও ৩৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।