বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের নতুন প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা’। এর আগে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘জুলাই সনদ’-এর খসড়া পাঠিয়েছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর এ অঙ্গীকারনামা প্রকাশ করা হয়।
অঙ্গীকারনামার ভূমিকায় বলা হয়, বাংলাদেশের সাংবিধানিক কনভেনশনের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধোত্তর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যত কোনো সংবিধান না থাকা সত্ত্বেও ওই সময়ের সব কার্যাবলি ১৯৭২ সালের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। একইভাবে, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতির অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হওয়া এবং পরবর্তীতে পদে প্রত্যাবর্তনের মতো আইনবহির্ভূত কার্যক্রম রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে বৈধতা পেয়েছিল।
অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়, এসব অভিজ্ঞতার আলোকে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই দলিল প্রণয়ন করেছে।
অঙ্গীকারনামার মূল প্রতিশ্রুতিগুলো হচ্ছেÑ জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ: ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবনদান, রক্তদান, ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগকে সম্মান জানিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। এটি হবে জনগণের দীর্ঘ সংগ্রাম ও আকাক্সক্ষার প্রতিফলন এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল।
জনগণের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন :
রাষ্ট্রের মালিক জনগণÑ এ মর্মে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দল ও জোটের মাধ্যমে। তাই ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-কে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্ন কিছু থাকলে জুলাই সনদের বিধানই প্রাধান্য পাবে।
সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার :
জুলাই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত প্রশ্ন উঠলে তার চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার থাকবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের হাতে।
আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না :
অঙ্গীকারনামায় স্পষ্ট করে বলা হয়, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ বলে গণ্য হবে। এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা বা কর্তৃত্ব কোনো আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।
সংবিধান ও আইন সংস্কারের প্রতিশ্রুতি :
রাষ্ট্রের কাঠামো, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থায় সনদে যে প্রস্তাব বা সুপারিশ আছে, তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, নতুন আইন প্রণয়ন কিংবা বিদ্যমান আইন ও বিধি পরিবর্তন/সংশোধন করা হবে।
গণঅভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি :
গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা, বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
হত্যাকাণ্ডে বিচার ও শহিদ পরিবারকে সহায়তা :
অঙ্গীকারনামায় ঘোষণা করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত সব হত্যাকা-ের বিচার হবে। শহিদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে এবং শহিদ পরিবারকে যথাযথ সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। আহতদের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং নির্বাচনের আগে অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব কার্যকর : যেসব প্রস্তাব বা সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে, তা কোনো ধরনের কালক্ষেপণ ছাড়াই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।