- এর সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই: পরিবেশ উপদেষ্টা
বিদেশে বাংলাদেশের অবশিষ্ট যেসব মিশনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি রয়েছে, তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি মিশনে টেলিফোনে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। গতকাল রোববার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। অন্যদিকে ছবি অপসারণ করা হয়ে থাকলেও এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো ‘সম্পর্ক নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
জানা গেছে, গত শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে ফোন করেন। ফোনে কূটনীতিকদের নিজেদের মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া অন্য মিশন, উপমিশন থেকে ছবি সরানোর জন্য অন্যদের জানাতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন ও উপমিশন রয়েছে। এর মধ্যে ৬৫টির বেশি মিশন ও উপমিশন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওয়াশিংটন, দিল্লি, বেইজিংসহ বেশির ভাগ মিশন থেকে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর এসব ছবি সরানো হয়।
ইউরোপ, আমেরিকা অঞ্চলে কর্মরত কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে জানা গেছে, বিদেশে বাংলাদেশের যে মিশনগুলো রয়েছে, সেখান থেকে আগেই সরানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির ছবি। তবে এ ছবি রাখা না রাখার কোনো নির্দেশনাও ছিল না বলে জানান তাঁরা।
এদিকে বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি নামিয়ে ফেলার নির্দেশনার যে খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা পত্রিকার খবরে জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ছবি অবসারণ করা হয়ে থাকলেও এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো ‘সম্পর্ক নেই’।
গতকাল ঢাকার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে নাম প্রকাশ না করে সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, বিদেশে বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট, কূটনীতিকদের অফিস এবং বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অঞ্চলভিত্তিক কয়েকজন রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারকে টেলিফোনে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সচিবালয়ে এ বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এটা আদৌ কোনো বার্তা দেয় কি না জানি না। আমি পত্রিকায় দেখেছি। সরকারি পর্যায়ের সব মহলের সিদ্ধান্ত হলে সেটা লিখিত থাকত। সরকার আদৌ এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না জানি না। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এটা আলোচিত হয়নি। সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলে সভায় আলোচিত হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করার দাবি জানিয়ে আসছে। এর মধ্যে ছবি অপসারণের এমন উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের আগ্রহ’ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের পদক্ষেপ কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে কি নাÑ এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ছবি অপসারণ হয়ে থাকলে এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। একটা ছবির সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।
‘এনসিপির একজন নেতা বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না’Ñ এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, সরকারের পরিকল্পনা তো প্রধান উপদেষ্টা নিজে স্পষ্ট করেছেন। এর সঙ্গে সরকারের অবস্থান বদলের সম্পর্ক নেই।
এনসিপির ‘কিংস পার্টি’ তকমা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কী নামে ডাকল সেটা আসল নাম হয়ে যায় না। এনসিপির নাম এনসিপি। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়তো তাকে কিংস পার্টি ডাকছে। কিন্তু আমরা যারা উপদেষ্টা পরিষদে আছি, তাদের সাথে কোনো পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। কখনো আমরা শুনি যে, আমরা বড় একটা রাজনৈতিক দলের কথা শুনে সব করে ফেলছি। আবার শুনি, কিংস পার্টির কথা শুনে সব করে ফেলছি। আবার শুনি, ইসলামিক পার্টির কথা শুনে সব করে ফেলছি। যে যার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে কথা বলে। সরকার সরকারের মতো আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্তগুলো নেয়।
এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে প্রচ্ছন্ন একটি দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছেÑ এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, এখন অবাধ বাকস্বাধীনতার সময়। যার যে রকম মন চায় সে সে রকম বলছে। তার রাজনৈতিক অবস্থানে কোনো একটা কিছু সুইটেবল হলে সে এক রকম বলছে, সুইটেবল না হলে আরেক রকম বলছে। আমাদের পক্ষ থেকে এটার ব্যাখ্যা আসার প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দেবে।