বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রহিম শেখ

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়, ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন

রহিম শেখ

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়, ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যাংক আলফালাহর ধানমন্ডি শাখায় থাকা ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর চারটি হিসাব থেকে প্রায় ২৮ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়। অথচ চারটি ব্যাংক হিসাবই ছিল ‘জব্দ’। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম সরাসরি এতে ভূমিকা রেখেছেন। তার নির্দেশে ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয়। শুধু এনায়েত উল্লাহর প্রতিষ্ঠানই নয়, গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয়েছে বিএফআইইউ প্রধানের নির্দেশে।

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত ভিডিও ছড়ানোর জেরে আলোচনায় এসেছেন এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম। গতকাল বুধবার দিনভর বিএফআইইউ প্রধানকে বাধ্যতামূলক ছুটি ইস্যুতে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর ও অর্থসচিব। দিনশেষে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্তের স্বার্থে শাহীনুল ইসলামকে ছুটিতে থাকতে বলা হয়েছে। তবে এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্র দাবি করে শাহীনুল ইসলাম গতকাল গুলশান থানায় একটি জিডি করেছেন। 

জানা গেছে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন বিতর্কিত এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি পরিবহন খাতের মাফিয়া হিসেবে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিত। ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। টানা ১৫ বছর দেশের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক তার দখলে থাকলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রয়েছেন পলাতক। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুসারে, খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ৫৩টি ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি ৭২ লাখ ২৯ হাজার ২৮০ টাকা জমার তথ্য মিলেছে।

যার মধ্যে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বিএসএমএমইউ শাখায় ৩ কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪০ টাকা, সিটি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় ৫৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, একই ব্যাংকের পল্লবী শাখায় ১৪ লাখ সাত হাজার টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে ১০ কোটি ২০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, একই হিসাবের বিপরীতে ৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকার এফডিআর, ব্র্যাক ব্যাংকের তিন হিসাবে প্রায় ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকার এফডিআর, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার এফডিআর, সাউথইস্ট ব্যাংকে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং এনআরবিসি ব্যাংকে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা জমার তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া এনা মোটরস নামে ব্যাংক আল-ফালাহর ধানমন্ডি শাখায় ২১ কোটি ২৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, একই প্রতিষ্ঠানের নামে অপর হিসাবে ১৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, একই ব্যাংকের আরেক হিসাবে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা এবং এনা এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যাংক আল ফালাহর ধানমন্ডি শাখায় ২ কোটি ৪৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা থাকার তথ্য মিলেছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এনায়েত উল্লাহ ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে ব্যাংক আলফালাহর ধানমন্ডি শাখায় থাকা এনায়েত উল্লাহর এনা মোটরসের নামে চারটি হিসাব থেকে প্রায় ২৮ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়। তদন্তকারীদের মতে, এ টাকা উত্তোলন অর্থ পাচার প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯-এর ধারা ২৬(৬)-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রমাণে উঠে এসেছে, শাহীনুল ইসলাম সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এতে ভূমিকা রেখেছেন। শুধু এনায়েত উল্লাহর প্রতিষ্ঠানই নয়, গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয়েছে বিএফআইইউ প্রধানের নির্দেশে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএফআইইউ প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এনা পরিবহনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়। ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে অনেক প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের সুযোগ দিয়েছে বিএফআইইউ। দুদক থেকে জানতে চাইলে আমি ব্যাখ্যা দেব। বিএফআইইউর একাধিক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, শাহীনুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অফিসে গুরুত্বপূর্ণ নথি আটকে রাখেন। দক্ষ কর্মকর্তাদের পাশ কাটিয়ে পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ব্যাংক হিসাব উন্মুক্তে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন তিনি। এক কর্মকর্তা বলেন, তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত হলে আরও বহু দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৮ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন বিএফআইইউর তৎকালীন প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস। দীর্ঘদিন খালি থাকার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিয়োগ পান শাহীনুল ইসলাম। তবে গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি যে তিনজনের নাম সুপারিশ করেছিল, সেই তালিকায় শাহীনুলের নাম ছিল না। এরপরও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে তাকে প্রধান হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারির পর এ নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়।
ভিডিও ভাইরাল ও বিতর্ক

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলামের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও গত সোমবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করছে। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে গণমাধ্যমে কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানান, তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকায় শাহীনুল ইসলাম আপাতত ছুটিতে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা গভর্নরের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে অবিলম্বে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর দাবি জানান।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাহীনুল ইসলামের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশিত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ জাতীয় আর্থিক খাতের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। তবে গতকাল যথারীতি অফিস করতে দেখা গেছে শাহীনুল ইসলামকে। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিএফআইইউ প্রধানকে সরকার নিয়োগ দেয়।

তাই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ারও একমাত্র সরকারের, এ ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। কর্মকর্তারা আরও জানান, যে আইনে বিএফআইইউ প্রধানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেই আইনে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর কোনো বিধান নেই। সরকার চাইলে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি), বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বা গভর্নর সরাসরি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু সরকারের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করতে পারে এবং সেই সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে শাহীনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কীসের বাধ্যতামূলক ছুটি, আমি তো অফিস করতেছি’। একই দিন গুলশান থানায় জিডি করেন তিনি। এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্র দাবি করে এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আমার মতো ব্যক্তি কি এমন করতে পারে? এটা ভুয়া এবং আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত। শুরু থেকেই একটা চক্র আমার বিরুদ্ধে লেগে আছে। এটা সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘তার কর্মকা-ে কয়েকটি কোম্পানি ও কিছু ব্যক্তির স্বার্থে আঘাত লাগায় এরকম ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তারা অফিসে আমার মিটিং-সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও জোড়াতালি দিয়ে এআইয়ের মাধ্যমে একটা অসামাজিক ও কুরুচিপূর্ণ ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে।’

এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা জানেন ফ্যাসিস্ট সরকারের পরিবর্তনের পরে দেশের অর্থ পাচার রোধ ও পাচার অর্থ উদ্ধারের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাকে অনেকের শত্রুতে পরিণত হতে হয়েছে। এটি একটি বিশাল কাজ। দেশের মানুষের অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করতে হয়েছে, অনেকের কোটি কোটি টাকা ফ্রিজ করতে হয়েছে। প্রতিদিনই এ কাজ করতে গিয়ে আমার শত্রু তৈরি হয়েছে। এটা সেই শত্রুদের ধারাবাহিকতার অপচেষ্টা। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে এ ধরনের অপকর্মের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এবং মিথ্যা বা প্রোপাগান্ডার এসব ভিডিও থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।’

চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম সম্পর্কে প্রকাশিত আপত্তিকর তথ্য ও ভিডিওচিত্রের বিষয়ে তদন্তে নেমেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গতকাল সন্ধ্যায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অফিস আদেশে জানানো হয়েছে, কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুবকে।

সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এবং পরিচালক (আইসিটি-২ শাখা) মতিউর রহমান। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অফিস আদেশে আরও বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। এর আগে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) বরাবর চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে এফআইডি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট ও সুপারিশের পরিরপ্রক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!