মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৭:০৩ এএম

ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন কেন্দ্র সিকৃবি! ফ্যাসিস্ট প্রেমিক ভিসি আলিমুল!

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৭:০৩ এএম

ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন কেন্দ্র সিকৃবি! ফ্যাসিস্ট প্রেমিক ভিসি আলিমুল!

সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয় (সিকৃবি) পরিণত হয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন কেন্দ্রে। আর এই কাজের আঞ্জাম দিচ্ছেন স্বয়ং ভিসি প্রফেসর ড. আলিমুল ইসলাম। অভিযোগ উঠেছে, গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার একেবারে বিপরীত মেরুতে তার অবস্থান। ’২৪-এর শহিদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে বাংলাদেশ, সেখানে তার ঠিক উল্টো বলয়ের ফ্যাসিস্টরা বুক ফুলিয়ে চলছে সিকৃবিতে। বিভিন্ন পদে থেকে ভিসির প্রিয়পাত্র হিসেবে কাজ করছেন তারা। এমনকি অনেক পদ থেকে ফ্যাসিস্টবিরোধী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সরিয়ে বসিয়েছেন চিহ্নিত দোসরদের। গণঅভ্যুত্থানের সময় যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে, ছাত্রসমাজের বিপক্ষে শান্তি সমাবেশ করেছেন, অবস্থান ধর্মঘট করেছেন, তারাই এখন গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন। তাদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সিকৃবিতে পরিচিতি পেয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. আলিমুল ইসলাম। তার ফ্যাসিস্ট-প্রেম এখন সর্বজনবিদিত। 

অভিযোগ রয়েছে, প্রফেসর ড. আলিমুল ইসলাম সিকৃবিতে যোগদানের পর তিনি অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষক কর্মকর্তাদের আলাদা করে নেন; তাদের ঠাঁই হয় গুরুত্বপূর্ণ পদে। সেখানে ফ্যাসিস্টের দোসর হলেও তার আপত্তি নেই। তার পছন্দের এলাকার মধ্যে রয়েছেÑ নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর ও পাবনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অঞ্চলপ্রীতি ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনই যেন ভিসি আলিমুলের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর ড. আলিমুল ইসলাম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন এবং ২০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের শিক্ষকদের নানাভাবে বঞ্চিত এবং অঞ্চলভিত্তিক বলয় তৈরির। যোগদানের পরপরই রেজিস্ট্রার পদ থেকে সরিয়ে দেন বিএনপি মতাদর্শের শিক্ষক ড. আতাউর রহমানকে। তার বদলে রাজশাহী অঞ্চলের প্রফেসর আশরাফুল ইসলামকে ইনচার্জ রেজিস্ট্রার করেন। যদিও পরবর্তীতে সেই পদে তাকেও রাখা হয়নি। সেখানে তার অঞ্চলেরই আরেক শিক্ষক ড. মো. আসাদুদৌলাকে অতিরিক্ত দায়িত্বে দেওয়া হয়। যদিও তিনিও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। 

এ ছাড়াও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে যারা বর্তমান আছেন তাদের অধিকাংশই ফাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত। সম্প্রতি এই দপ্তর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বর্ষীয়ান প্রফেসর ড. এমদাদুল হককে। যিনি বিএনপি মতাদর্শী হিসেবে পরিচিত। তার বদলে জুনিয়র কিন্তু ভিসির এলাকার লোকÑ কৃষি বনায়ন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সামিউল আহসান তালুকদারকে পরিচালক করা হয়েছে। ড. সামিউল আহসান আওয়ামী স্বৈরশাসকের আস্থাভাজন শিক্ষক হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সাদা দলের সদস্য হলেও তিনি আওয়ামী আমলের সর্বাধিক সুবিধাভোগী শিক্ষকদের একজন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বিগত সব ভিসির কাছ থেকে সর্বাধিক সুবিধা নিয়েছেন তিনি।

এ ছাড়া তার স্ত্রীও আওয়ামী সরকারের বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ নিয়ে সিকৃবিতেই ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। যে ফেলোশিপ এতটাই বিতর্কিত ছিল যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ফেলোশিপ বাতিল করেছিল। এ ছাড়াও আগের ভিসিদের সময়ে ড. সামিউলকে দেওয়া সুযোগকে কেন্দ্র করে খোদ আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যেই ছিল তীব্র অসন্তোষ। তার দপ্তর দ্বারা পরিচালিত ২০২৩-২৪ সেশনের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের সময় আওয়ামী লীগের ৪০ শিক্ষক নিয়ে কমিটি গঠন করেন। ড. সামিউলের নিয়ন্ত্রণে থাকা কমিটির সদস্যরাও ছিলেন ফ্যাসিস্টপন্থি। এ ছাড়াও তিনি পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার সহযোগী হিসেবে যারা আছেন সবাই আওয়ামী সরকারের আমলে পদধারী শিক্ষক।

সম্প্রতি সিকৃবি ভিসি আলিমুল আওয়ামী লীগের পদধারী তার এলাকার মাৎসচাষ বিভাগের শিক্ষক ড. সাখায়াত হোসেনকে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সহযোগী পরিচালকের পদের দায়িত্ব দেন। তিনি সাদা দলের সেক্রেটারি থাকলেও, তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. জামাল উদ্দিন ভুঁইয়ার সহযোগিতায় নানা স্পর্শকাতর কমিটিতে নাম লিখিয়ে সুবিধা নিয়েছেন। একটি সূত্র জানায়, ড. সাখায়াত গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে ছিলেন বিগত বছরগুলোয়। এ ছাড়াও তার ভাই শাহাদাত হোসেন আওয়ামী জামানায় নিয়োগপ্রাপ্ত অফিসার হিসেবে সিকৃবির সংস্থাপন শাখা-১ এ কর্মরত।

ভিসি হিসেবে যোগদানের পরপর নানা পদে রদবদল করলেও পরিচালক অর্থ ও হিসাবের পদ পরিবর্তন করেননি। কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের প্রফেসর ড. রুহুল আমিনকে ওই পদে রেখে তার প্রিয়পাত্রে পরিণত করেছেন। ড. রুহুলের ভাইরাল হওয়া ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটে দেখা যায়, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ ভক্ত। শেখ হাসিনার সাগরপাড়ের ছবি শেয়ার করে আলোচনার জন্মও দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও বিগত সব ভিসিকে তার কাছের মানুষ হিসেবে দেখা গেছে, তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলও করেছেন তিনি। সিকৃবিতে চাকরি দিয়েছেন তার আপন ভাগ্নেকে।

সূত্র জানায়, সিকৃবির প্রক্টর কার্যালয়ের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ভিসির আগমনের কয়েক দিন পর ছাত্র আন্দোলনে কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের প্রক্টর ড. মোজাম্মেল হককে সরিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে। বিএনপি মতাদর্শের শিক্ষক হিসেবে পরিচিত তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে এসেছেন কৃষি অর্থনীতি ও পলিসি বিভাগের ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ। এই ব্যক্তিও ফ্যাসিস্টকালের সুবিধাভোগী একজন শিক্ষক। তিনি গত স্বৈরশাসনামলের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামছুল আলম মোহনের প্রিয়ভাজন ছিলেন। তার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পও পেয়েছেনÑ এমনটাও চাউর রয়েছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদস্থ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানেও বই হাতে তাকে দেখা গেছে।

সম্প্রতি পরিকল্পনা উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স দপ্তরের পরিচালক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুল ইসলামকে। তিনি একজন সিনিয়র শিক্ষক। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যার ব্যাপক আবদান। তার বদলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্যাথলজি বিভাগ প্রফেসর ড. মাসুদুর রহমানকে। ড. ছিদ্দিকুল ইসলামের ১০ থেকে ১২ বছরের জুনিয়র হলেন ড. মাসুদ। তিনি ক্যাম্পাসের সর্বাধিক বিতর্কিত ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের একজন। মাত্রাতিরিক্ত আওয়ামী সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি স্বৈর আমলের ভিসিদেরও প্রিয়ভাজন ছিলেন তিনি। এসবের মাধ্যমে, নানাবিধ সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছেন। তার আপন ভাগ্নে আব্দুল রাকীব রাব্বুকে নিজ প্রকল্পের সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ফায়দা হাসিল করেছেন। ভর্তি পরীক্ষার মতো অতি স্পর্শকাতর কমিটিতে রাখা হয়েছিল তাকে যার জন্য আওয়ামী লীগের শিক্ষকদের মধ্যেও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল সে সময়ে। ৫ আগস্টের পর ড. মাসুদকে দেখা গেছে ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সুরক্ষা দিতে। তিনি ইতোপূর্বে প্রশ্নফাঁসের কেলেঙ্কারিতে ক্লাস পরীক্ষা থেকে বহিষ্কৃত ছিলেন বছর দুয়েক। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আপন ভাগ্নের পরীক্ষায় পরীক্ষক থেকে বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছিলেন। অভিযোগ আছে, তিনি অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে তার স্ত্রীর নামে ‘মিথ্যা’ মামলা করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, স্পর্শকাতর এত অভিযোগ থাকার পরও কেবল ভিসির নিজের এলাকা ‘বগুড়ার লোক’ হওয়ায় তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।

এদিকে সিকিউরিটি অফিসার আশফাক আহমেদ, যিনি বিএনপি সমর্থক তাকে সরিয়ে ভিসি আলিমুল তার অঞ্চলের তোফাজ্জল হোসেনকে সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। যিনি লাইব্রেরিতে উপ গ্রন্থাগারিক হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি তাকেও সরিয়ে স্বৈরশাসকের সুবিধাভোগী শিক্ষক ড. মোহন মিয়াকে দিয়েছেন। যিনি কখনো বিএনপি কখনো আওয়ামী লীগ হিসেবে ভোল পাল্টাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলের মদদপুষ্ট হয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন নানা সুযোগ সুবিধা। আপন বোন জামাই সহিদ আলীকে প্রিভেন্টিভ শাখার অফিসার বানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ট্রেজারার ড. মাহবুব ই ইলাহীর সহযোগিতায় জামায়াতে ইউটার্ন নিয়ে বাগিয়েছেন নানা পদ। তার চাকরিসংক্রান্ত বিষয়ে ধারাবাহিকতা না থাকলেও তিনি হয়েছেন শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরির যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান। 

এদিকে পরিচালক পরিবহন পদে দায়িত্বে ছিলেন বিএনপি সমর্থিত সাদা দলের সিনিয়র প্রফেসর কৌলিবিজ্ঞান ও প্রাণী প্রজনন বিভাগের ড. মো. নাজমুল হক। সিকৃবি ভিসি তাকে সরিয়ে বসিয়েছেন ড. সুলতান আহমেদকে। তিনি ড. নাজমুল হকের জুনিয়রও। প্রফেসর ড. নাজমুল হককে হজরত শাহজালাল (র) হলের প্রভোস্ট করা হয়েছে। জুনিয়র প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কাউছার হোসেন যেখানে  প্রভোস্ট কনভেইনর হিসেবে আছেন। অভিযোগ আছে, ড. কাউছার হোসেনও বিগত স্বৈরশাসকের দোসর ভিসি ড. জামাল উদ্দিন ভুঁইয়া, ড. মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, ড. মো. মনিরুজ্জামানেরও কাছের মানুষ ছিলেন। তিনি সাদা দলের সেক্রেটারি থাকলেও তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. জামাল উদ্দিন ভুঁইয়ার নিয়োগ বাণিজ্যের সহযোগী ছিলেন।

এ ছাড়া সূত্র জানায়, ভিসি আলিমুল যোগদানের পর সাদা দল ও এ্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য প্রফেসর ড. নাসরিন সুলতানা লাকীকে একজন সহযোগী প্রফেসরের সমমর্যাদার সহযোগী পরিচালক পদে নামিয়ে দিয়েছিলেন। সম্প্রতি ভিসি ছাগল ও ভেড়ার ফার্মে পরিচালক হিসেবে মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের জুনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুল আজিজকে দেওয়ায় তিনি ‘অসম্মানিত’ হয়ে পদ প্রত্যাহার করেছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, দূররে সামাদ রহমান ছাত্রী হলের প্রভোস্ট হিসেবে দেওয়া হয়েছে কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের ড. শাহজাহান মজুমদারকে। সিকৃবিতে অনেক নারী শিক্ষক থাকার পরও তার নিয়োগে ছাত্রীরা আপত্তি জানায়। কিন্তু ভিসি আলিমুল তা পাত্তা দেননি। ড. শাহজাহান মজুমদার বিগত স্বৈরশাসকের দোসরদের সুনজরে ছিলেন। বিগত ভাইস চ্যান্সেলর ডা. জামালউদ্দিন ভূঁইয়ার বাসায়ও তাকে দেখা গেছে দাওয়াতি মেহমান হিসেবে। তিনি বাগিয়ে নিয়েছিলেন স্বৈরশাসকের ‘শুদ্ধাচার’ নামক পুরস্কার। জানা যায়, ট্রেজারারের দলে যোগ দিয়ে তিনিও বিভিন্ন কমিটির সভাপতি ও সদস্য বনে যাচ্ছেন।

এদিকে সম্প্রতি ২০২৪-২০২৫ ওরিয়েন্টেশন কমিটির মতো শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে দেখা গেছে স্বৈরশাসকের আস্থাভাজন শিক্ষকদের ব্যাপক উপস্থিতি। তার মধ্যে অধিকাংশই শান্তি মিছিল ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগের সময়ে হাসিনা সরকারের পতাকাতলে পদাধিকারী শিক্ষক।

ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. শরিফুন্নেছা মুনমুন, কৃষি বনায়ন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ড. অসিম সিকদার, মৌলিক বিজ্ঞান ও ভাষা শিক্ষা বিভাগের রাহুল ভট্টাচার্য,  অ্যাগ্রিকালচার  কনস্ট্রাকশন ও এনভায়রনমেন্ট বিভাগের জয়বর রহমান, কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের ড. সাখাওয়াত হোসেন, ড. সাজ্জাদ হোসেইন, কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ড. ওমর শরিফ, এনিম্যাল ও ফিশ বায়োটেকনোলজি বিভাগের ড. কাজী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ড. বিশ্বজিৎ দেবনাথ, সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনÑ তারা প্রত্যেকেই ছিল আওয়ামী লীগের নিয়োগপ্রাপ্ত ও গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদসহ নানাবিধ পদের পদাধিকারী শিক্ষক। শান্তি মিছিলেও দেখা গিয়েছিল তাদের সরব উপস্থিতি।    

গত স্বৈরশাসকের আমলে পদ গ্রহণ করা শিক্ষক ড. কাজী মেহেতাজুল ইসলাম একাধারে কন্ট্রোলার ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সম্প্রতি একজন ছাত্র বাফিল আহমেদ অরিত্রের রেজাল্ট-সংক্রান্ত ইস্যুতে ভিসির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাকে কন্ট্রোলার শাখা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ড. এম রাশেদ হাসনাত দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থান না করেও গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট আইকিউএসির পরিচালকের পদ দখল করে আছেন। তিনি বিগত স্বৈরশাসকের প্রিয়ভাজন হয়ে বাগিয়ে নিয়েছিলেন শাহপরান হলের তৎকালীন প্রভোস্ট পদ। ল্যাবরেটরি উন্নয়ন খাতের সর্বাধিক সুবিধা ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন, যেখানে অন্যান্য বিভাগ পেয়েছিল ২০-২৫ লাখ টাকা। তিনি স্বৈরশাসকের সময় সবচেয়ে বড়ো ও গুরুত্বপূর্ণ  কমিটি ‘অ্যাপা’-এর চেয়ারম্যান পদও পেয়েছিলেন হাসিনা সরকারের দোসর হয়ে। তিনি আই-কিউ এসিতে তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন রাকিবুল রাব্বুর মাধ্যমে। বর্তমান ভিসি অডিটরিয়ামের দায়িত্ব দিয়েছেন তৎকালীন আওয়ামী স্বৈরশাসকের ভিসির দলের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক কীটতত্ত্ব বিভাগের ড. আব্দুল মালেককে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে ভিসি যাকে রেখেছেন, তিনিও একজন বিতর্কিত আওয়ামী লীগের অনুসারী।  এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে তার নানাবিধ কর্মকা-ের খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে ভিসি আলিমুলের বিরুদ্ধে ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগও প্রকট হয়েছে। বাফিল আহমেদ অরিত্রসহ কয়েকজন বিএনপিপন্থি শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছিল গত রমজানে একটি ইফতার মাহফিলের কারণ দেখিয়ে। সেই একই শিক্ষার্থীকে আওয়ামী লীগ তকমা দিয়ে সম্প্রতি শোকজ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে। তার রেজাল্টও স্থগিত করা হয়েছে, অনাকাক্সিক্ষত বিষয়কে ইস্যু বানিয়ে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বাধিক অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে সিকৃবিতে। ইতিপূর্বে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও নজর নেই কর্তৃপক্ষের। এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে শিবিরপন্থি ও ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীদের।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, পিএমএসি হাসপাতালে কোনো সার্কুলার ছাড়া ডা. রায়হানুন্নবি নামক এক শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যিনি ভেটেরিনারি এনিম্যাল ও বায়োমেডিক্যাল অনুষদের শিক্ষক ড. এমদাদুল হকের সুপারভিশনে এমএসও করছেন। অথচ নিয়মানুযায়ী তিনি কোনো ছুটি গ্রহণ করেননি। মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ডা. শফিকুল ইসলামও চাকরি করেই এমএস সম্পন্ন করছেন। এ ছাড়া অন্যান্য নানা বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীকে চাকরির পাশাপাশি এমএস করার অবৈধ সুযোগ দিচ্ছেন ভিসি আলিমুল ইসলাম।  তিনিই নির্দেশনা দিয়ে এই বিভাগে প্রদেয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবেদনও ঊর্ধ্বগামী করতে দিচ্ছেন না। সম্প্রতি তার নির্দেশনায় অনুষদের ১৪টি বিভাগের চেয়ারম্যান এ বিষয়ে মিটিং করলেও সিদ্ধান্তের অভাবে শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো ঝুলে আছে। গড়িমসি করছেন সেমিস্টার শেষ হওয়ার জন্য।

ভিসি দপ্তরের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এ নিয়ে কথা বলতে গেলে একজন নারী শিক্ষককে ইভটিজিং করে চরম অপমান করেছেন স্বয়ং ভিসি আলিমুল। তিনি সিকৃবি ক্যাম্পাসের একমাত্র নারী শিক্ষক, যিনি জুলাই আন্দোলনের সময় মাঠে ছিলেন। যে কারণে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও ফ্যাসিবাদী শিক্ষকদের রোষানলেও পড়েতে হয় তাকে। তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও কোনো প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দিয়েও তিনি এ ঘটনার কোনো প্রতিকার পাননি। 

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতম সম্পর্কে থাকা শিক্ষক প্রাণী-পুষ্টি বিভাগের ড. জসিমউদদীন এখন ভিসির অনুকম্পায় হযরত শাহ পরান (রা.) হলের প্রভোস্ট। আওয়ামী লীগের সময় তিনি সিকিউরিটি গার্ডের নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছেন তার আপন ভাগ্নে মিজানকে। মিজান বর্তমানে ভিসি আলিমুল ইসলামের দেহরক্ষী। এ ছাড়া ড. জসিমউদদীন চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তার আপন ভাই লুৎফর রহমানকেও। যিনি বর্তমানে সিকৃবির গুরুত্বপূর্ণ সেকশন অর্থ শাখায় ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত। 

এ ছাড়া গত স্বৈরশাসকের দোসর হয়ে বাবাকে কৃষক শ্রমিক লীগের লিডার হিসেবে পরিচয় দিয়ে সিকৃবির ভিসির দায়িত্ব পাইয়েছিলেন ডিন, বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের প্রফেসর ড. মেহেদি হাসান খান। তার ছুটির ঘাপলা থাকায় তিনি গ্রেড ওয়ানে ইতিপূর্বে আবেদন করার সুযোগ পাননি। কিন্তু ২০২৫-এ আবেদন করে তিনি ২০২৩ সালের জুলাই থেকে গ্রেড ওয়ান পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই যারপরনাই অবাক হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেছেন, ২০২৩-এর জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শতাংশ ফিলআপ ছিল। কীভাবে উনি কার বদলে ঢুকে পড়লেন, তা অবাক করার মতো। তবে বর্তমান ভিসি যেহেতু আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন, ফলে আওয়ামী লীগের শিক্ষক  ড. মেহেদির পক্ষে এমনটা হওয়া সম্ভব। 

এদিকে আওয়ামী প্রেমের এতসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভিসি ড. আলিমুল ইসলাম। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, এসব মিথ্যাচার। যারা এসব তথ্য দিয়েছে তারা সঠিক তথ্য দেয়নি। আমি যাদের সরিয়েছি, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরিয়েছি। এতে আমার ব্যক্তিগত কোনো লাভক্ষতি নেই। আওয়ামী লীগের কাউকে আমি পুনর্বাসন করিনি, এমনকি কাউকে বঞ্চিতও করিনি।

এদিকে এসব তথ্য এই প্রতিবেদককে কে সরবরাহ করেছে, তা জানতে চান। প্রতিবেদক তা জানাতে অস্বীকার করলে ভিসি আলিমুল এ নিয়ে আর কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।

সিকৃবির ভিসি ড. আলিমুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কথা হয় ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম ফায়েজের সঙ্গে। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। অভিযোগ সঠিক হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!