ইকবাল পরিবারের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা বেশি দামে ক্রয় করতে বাধ্য হতো প্রিমিয়ার ব্যাংক। ঠিক যেভাবে ইকবাল সেন্টার বা প্রিমিয়ার স্কয়ারের নিজেদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর ভাড়া দিয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে উচ্চহারে ভাড়া আদায় করেছেন, তেমনি নিজের প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা প্রিমিয়ার ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে লাভবান হয়েছে ইকবাল পরিবার। এই আয় থেকে সঠিকভাবে কর দেয়ার ক্ষেত্রেও অনিয়ম হয়েছে বলে জানা যায়।
দীর্ঘ সময় একই ব্যাংকের পরিচালক বা চেয়ারম্যান পদে থাকলে স্বেচ্ছাচারিতা তৈরি হতে পারে সেজন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালক পদে বহাল থাকার মেয়াদ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কোনো কিছুতেই দমেননি ডা. ইকবাল। টানা পাঁচ বছর ব্যাংকের চেয়ারম্যান থেকেছেন। এতে ব্যাংকটিতে তার একক আধিপত্য গড়ে ওঠে। তার ইচ্ছা অনুযায়ী চলে ব্যাংকটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের পর বছর ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকায় ডা. ইকবালের মালিকানাধীন ভারতীয় চেইন রেস্টুরেন্ট বুখারা রেস্তোরাঁ (প্রা.) লিমিটেড থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকে কর্মীদের অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করা হতো। কর্মীদের ট্রেইনিংয়ের জন্য ইকবালের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল রেনেসাঁতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। ব্যাংকটির কর্মীদের অভিযোগ, এ ধরনের অনুষ্ঠান ও খাবারের আয়োজন অনেক মনোমুগ্ধকর হলেও এই খরচ কমানো যেত তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হোটেল ও রেস্টুরেন্টে। তবে সেদিকে নজর না দিয়ে ডা. ইকবালের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করা হয়েছে। ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ভবনে প্রিমিয়ার ব্যাংকের কার্যালয় করা হয়। উচ্চ হারে ভাড়া আদায়ের তথ্য উঠে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে। এ নিয়ে শেয়ার বিজ পত্রিকা ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে জানা যায়, ইকবাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত ভাড়া এবং পরিষেবা চার্জ আদায় করা হয়েছে।
তবে ডা. ইকবালের দাখিল করা আয়কর রিটার্নে তার প্রতিফলন ঘটেনি, যার ফলে প্রদেয় আয়কর এবং ভ্যাটের আনুমানিক ২০০ কোটি টাকারও বেশি ঘাটতি দেখা দেয়। এর মধ্যে দিয়ে বড় ধরনের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪, ধারা ১৯ এবং ধারা ৩২ অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের যথাযথ কর প্রদানের প্রকাশ করা প্রয়োজন। ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২, ধারা ১৫ অনুযায়ী সংগৃহীত পরিষেবা (নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ, জেনারেটর, লিফট) চার্জের ওপর ভ্যাট বাধ্যতামূলক। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২, ধারা ২(থ) অনুযায়ী কর ফাঁকি অর্থ পাচারের জন্য একটি পূর্বনির্ধারিত অপরাধ হিসাবে সংজ্ঞায়িত। এ ধরনের কি কর্মকা-ের কারণে কখনোই ডা. ইকবালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে।