ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পরিবর্তন হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন

সেলিম আহমেদ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ০৮:০৭ এএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের পর এবার নানা পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইনেও। ২০১৮ সালের এই আইনের মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন আইনমতে, মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা বেসমারিক নাগরিক, সশস্ত্র বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, মুজিবনগর সরকার ও তার অন্যান্য বাহিনী, নৌ কামান্ডো, কিলোফোর্স, আনসার, বীরাঙ্গনা, মুক্তিযুদ্ধকালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসাপাতালের ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। তবে বিদেশে অবস্থান করে বিশ্বজনমত গঠনকারী পেশাজীবী, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দূতরা মুক্তিযুদ্ধের সহকারী হিসেবে গণ্য হবেন। আর মুজিবনগর সরকারে সম্পৃক্ত এমএনএ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী, কলাকুশলী, প্রবাসী সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন বলে জানা গেছে। 

এমন নানা সংশোধনী এনে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইনটি সংশোধন করে মূলত জামুকা আইনের অধ্যাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হয়েছে। এ আইনেও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ হিসেবে অভিহিত হবে। শিগগিরই অধ্যাদেশটি জারি হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র। 

সূত্রমতে, বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ছিলÑ ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া যাঁহারা দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও জামায়াতে ইসলামী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন এইরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুজিব বাহিনী, মুক্তিবাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ই.পি.আর. নৌ কমান্ডো, কিলো ফ্লাইট, আনসার বাহিনীর সদস্য এবং নি¤œবর্ণিত বাংলাদেশের নাগরিকগণ, উক্ত সময়ে যাহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন।’ 

নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং যে সকল ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করিয়া ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাহাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন এইরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাঁহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ই.পি.আর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলোফোর্স, আনসার সদস্য এবং বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত নাগরিকগণও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হইবেন। অর্থাৎ, নতুন সংজ্ঞায় বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পাশাপাশি তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামকে দায়ী করা হয়েছে। 

এ ছাড়া আগে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও জামায়াতে ইসলামী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত যুদ্ধ। 

আর নতুন সংজ্ঞায় বলা হচ্ছেÑ মুক্তিযুদ্ধ অর্থ হলো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আল-শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধ। 

এর বাইরে ট্রাস্টের আইনে আগে প্রধানমন্ত্রী পদাধিকারবলে সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন দেওয়া চারজন সংসদ সদস্য ট্রাস্টের সদস্য মনোনীত হতেন। নতুন অধ্যাদেশে সংসদ না থাকলে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রধান উপদেষ্টার চারজন প্রতিনিধি ট্রাস্টের সদস্য মনোনীত হবেন। 

গতকাল বুধবার দুপুরে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্তের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব বিষয় চূড়ান্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীর সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমসহ (বীর প্রতীক) বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।