ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে যাবে জামায়াত

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ১২:৩৭ এএম
জামায়াতে ইসলামীর লোগো। ছবি- সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে দল-জোট ও ভোটের সমীকরণ। আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় ভোট, নির্বাচন কমিশনের এমন রোডম্যাপ ঘোষণার পর স্বাগত জানিয়েছে সবাই।

জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিছু বিষয়ে মনঃক্ষুণ হলেও সময় নিয়ে আপত্তি নেই তাদের। ফলে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সন্দেহ-অবিশ্বাসও দূর হয়েছে অনেকটা। সরকারের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। 

তবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শক্ত অবস্থান থাকলেও ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

তবে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ না উচ্চকক্ষে পিআর হবে এমন আলোচনায় নময়নীতা দেখা যাচ্ছে দলটির মধ্যে। একই সাথে দেশের জনগণ যদি পিআর পদ্ধতি না চায়, তবে  দাবি থেকে সরে আসবে জামায়াত। তবে তার জন্য দলটি চায় গণভোট।

দেশের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক সঠিক নির্বাচন প্রয়োজন বলে মনে করেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সম্প্রতি প্রেসক্লাবে এক সভায় দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে নি¤œকক্ষ বা উচ্চকক্ষসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মধ্যেমে সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত আছে জামায়াত বলেও জানান তিনি। 

এদিকে, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি বা আরও কিছু অমীমাংশিত বিষয় নিয়ে যে রাজনৈতিক দলগুলো শক্ত অবস্থানে রয়েছে, তারা মূলত সরকার এবং প্রধান বিরোধী দলকে কিছুটা চাপে রাখার কৌশল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবনে এক বৈঠক শেষে ডা. তাহের বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াতের মৌলিক কোনো আপত্তি নেই। তবে জামায়াত উচ্চ এবং নি¤œ উভয় কক্ষেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াতের মৌলিক কোনো আপত্তি নেই। কারণ আমরা আগে থেকেই বলছিলাম, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে, এপ্রিলে হতে পারে। 

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এক সভায় বলেছিলেন, রমজানের আগে হলেই ভালো হয়। আমরা জাতির পক্ষ থেকে উত্তম প্রস্তাব দিতে চেয়েছি। সুতরাং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। এখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। নির্বাচনের তারিখকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। 

তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই, কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু করার শর্তটাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে চাই। সে জন্য ঐকমত্য কমিশনের যে সুপারিশ আছে, সেগুলোকে আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং সেই ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে।

এ ছাড়া আমাদের কিছু বাড়তি পলিটিক্যাল দাবি আছে। আমরা একটি বিষয়ে একমত হয়েছি, সেটি হলো উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। কিন্তু আমাদের দাবি হলো, উচ্চ ও নি¤œ উভয় কক্ষেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। সেই ইস্যুতে আমরা আন্দোলন করব এবং সেটাকে রিয়ালাইজ করার চেষ্টা করব।

সম্প্রতি রাজনীতিতে মূল্যবোধের চর্চার প্রসঙ্গ তুলে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীতে যারা যারা ক্ষমতায় আসবেন বা যেতে চান, তাদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ ও আল্লাহর কাছে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে সব কাজ সম্পাদন করতে হবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে কার্যত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করেছে। দেশ এখন নির্বাচনের ট্রেনে উঠেছে। একই সাথে, পিরআরসহ যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো বাংলাদেশের পেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিত তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হতে পারে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, ফেব্রুয়ারিতে যথাসময়ে সব দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ফেরার সুযোগ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে। 

নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিরে বাস্তবতা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি প্রস্তাব হিসেবে খুবই ভালো। সেখানে ভোট নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ প্রতিটি ভোটের সংসদীয় মূল্য থাকে। যে যাকে ভোট দেবে তার সেটি মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক হলেও রাজনৈতিকভাবে পরস্পর পরস্পরকে গ্রহণ করার মানসিকতা বা অযথা কোনো সরকার বা প্রতিপক্ষকে হয়রানি করাসহ জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক মানসিকতা এখনো সৃষ্টি হয়নি। ফলে নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি।

তিনি আরও বলেন, নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির যে বৈশিষ্ট্য, সেটা এখনো আমাদের মাঝে গড়ে ওঠেনি। তবে ভবিষ্যতে তার জন্য গুণগুলো অর্জন করতে পারি। বিশ্বের কিছু দেশ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করছে আবার চালু করে বন্ধ করছে এমন নজিরও আছে। বাস্তবতার নিরিখে যে পদ্ধতি দলগুলোর কাছে যদি গণতান্ত্রিক এবং জনবান্ধব মনে না হয়, তবে কোনো পদ্ধতিই ফলপ্রসূ হবে না। তিনি আরও বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালুর বিষয়ে চিন্তার সুযোগ আছে। উচ্চকক্ষে পাইলট প্রকল্প হিসেবে পিআর যদি ফলপ্রসূ হয়, সে ক্ষেত্রে নিম্নকক্ষে দেশের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে চিন্তার অবকাশ সৃষ্টি করতে পারে। একই সাথে সেটি আমার দেশের প্রেক্ষাপটে একটি উপযোগী পদ্ধতি হতে পারে বলেন তিনি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এখন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের দিকেই চলতে থাকবে। দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। তাতে দেশ ও মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে। একই সাথে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশ, রাজনীতি এবং সমাজনীতির দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপক পরিবর্তন হবে, যা হবে কল্যাণকর।