চলতি বছরে ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে দেশে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে নতুন করে ৫৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬ জন। এতে এ বছরের মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫ জনে।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত দৈনিক প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৩৬ হাজার ৬৮২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ৭৪৫ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে প্রতিদিন রোগী বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
চলতি মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাচ্ছে। মাসের প্রথম সাত দিনে যত সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে, তা এ বছরের কোনো মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে বেশি। জনস্বাস্থ্যবিদেরা আগে থেকেই চলতি মাসে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বলেই মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এ মৃত্যু প্রতিরোধে সরকারের কোনো তৎপরতা দেখছি না। প্রতিরোধযোগ্য হওয়ার পরও এভাবে মৃত্যুর ঘটনা সরকারের চরম ব্যর্থতার নিদর্শন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে তিনজনের বয়স ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। বাকি তিনজনের বয়স ২১ থেকে ৩৫-এর মধ্যে। মৃতদের মধ্যে তিনজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। একজন উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে মারা গেছেন। বাকিরা ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে মারা গেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো পুরুষের সংখ্যা বেশি। চলতি বছরে মোট আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ পুরুষ ও ৪০ শতাংশ নারী।
বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সিরা। এই বয়সসীমার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৫০০। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মজীবী ও চলাফেরায় সক্রিয় শ্রেণিই মশার সংস্পর্শে বেশি আসছে। ফলে তাদের মধ্যে সংক্রমণও বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। গত আগস্টেই শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি রোগী। সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজারের বেশি মানুষ। চলত বছরের জুলাই থেকে আগস্ট এবং চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই থেমে থেমে বৃষ্টি এবং তারপর প্রচ- গরম ডেঙ্গুর বংশবিস্তারে ভূমিকা রাখে। নগরকেন্দ্রিক এই রোগ কমাতে মশার বংশবিস্তার রোধ জরুরি।
এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু এবং এতে সরকারের তৎপরতার অভাবের কথা বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, মশা বাড়লে ডেঙ্গু রোগ বাড়বে। মশার নিয়ন্ত্রণ তাই জরুরি। কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রণ না হলে আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়ার ধরন ও মশার প্রজনন চক্র বিবেচনায় এই সময়টি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সেই কাজ যথাযথভাবে করতে পারছে না বলেই মনে করেন মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, এক দিনে ছয়জনের মৃত্যু একটি সতর্কবার্তা। এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে সামনে বড় ধরনের স্বাস্থ্যসংকট তৈরি হতে পারে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন