শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম

সাংগঠনিক বিপর্যয়ে ছাত্রদল

ছাত্রদলের বিপর্যয়ে হতভম্ব বিএনপি, খুঁজছে কারণ

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম

ছাত্রদলের বিপর্যয়ে হতভম্ব বিএনপি, খুঁজছে কারণ

জাতীয় নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভরাডুবি বিএনপির জন্য একটি ‘কঠিন বার্তা’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।  বিশ্লেষকেরা বলছেন, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ডাকসুর নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছে ছাত্রশিবির। নির্বাচনে অধিকাংশ পদে জয় পেয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পড়েছে ইতিহাসের অন্যতম বড় ধাক্কায়।  শুধু পরাজয় নয়, অনেক পদে দ্বিতীয় স্থানেও পৌঁছতে পারেননি তাদের প্রার্থীরা। ছাত্রদল এমন একটি ধাক্কা খেল, যা বিগত সরকারের আমলেও তাদের খেতে হয়নি।  

সাংগঠনিক বিপর্যয়ে ছাত্রদল:  

ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান রাজপথের নেতারা বলছেন, সাংগঠনিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত শহিদ জিয়াউর রহমান গঠিত ছাত্রদল। ৫ আগস্টের আগের ছত্রদল আর বর্তমান সময়ের ছাত্রদলের মধ্যে পার্থক্য অনেক। প্রশ্ন হলোÑ ৫ আগস্টের পরে ছাত্রদলকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করা হলো কেন? ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, আধিপত্য বিস্তার, যোগ্যদের অবমূল্যায়ন ও নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা অনিশ্চয়তার কথা উঠেছে। যার কারণে ডাকসুতে ভরাডুবি ও রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে ছাত্রদল। এ জন্য নতুন কমিটি চাইছেন ছাত্রদলের অনেকেই। তাদের দাবিÑ ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছিরের পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতৃত্বহীনতা এবং শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুধাবনে ব্যর্থতাÑ এসবই ছাত্রদলের বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, ক্যাম্পাসে উপস্থিত না থাকা, সারা দেশে বিএনপির কিছু নেতার অরাজনৈতিক আচরণ, দুর্বল প্রচার এবং বিভক্ত নেতৃত্ব শিক্ষার্থীদের কাছে আস্থাহীন হয়ে পড়েছে সংগঠনটি। অন্যদিকে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে সচেষ্ট হয় ইসলামী ছাত্রশিবির। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নানা কর্মসূচি, আহতদের পাশে দাঁড়ানো এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা দ্রুত আলোচনায় আসে। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও নতুনত্ব দেখিয়েছে সংগঠনটি। নিজেদের পরিচিত নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে তারা নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহতদের প্রতিনিধি এবং সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীকে প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করে চমক দেখিয়েছে। এই বহুমাত্রিক কৌশল দাগ কেটেছে শিক্ষার্থীদের মনে। প্রচারণায় তারা সংগঠিত ও সক্রিয় উপস্থিতি বজায় রেখেছে। প্রতিটি হল এবং বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের বার্তা। এর প্রতিফলন মিলেছে নির্বাচনের ফলে।

বিশ্লেষকদের মতে, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হওয়া প্রধান ছাত্রসংগঠনগুলোর একটি ছিল ছাত্রদল। অথচ এবার সংগঠনটি ডাকসুতে ২৮টি পদের একটিতেও জিততে পারেনি। বিপরীতে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে জয়ী হয়েছে, যা স্বাধীনতার পর থেকে সংগঠনটির সবচেয়ে বড় সাফল্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ডাকসুতে এমন ভরাডুবির পর ছাত্রদলে ব্যাপক সংস্কারের দাবি রাখে। কেননা ঐতিহ্যগতভাবে জাতীয় নির্বাচনে ছাত্রদল মূল দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

চাঁদাবাজি, দখল ও কোন্দলে ভাবমূর্তি সংকট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিএনপি ও ছাত্রদলের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। এটা শুধু ছাত্রসংগঠনের নির্বাচন নয়, বরং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি কঠিন বার্তা বহন করছে। অনেকে মনে করেছেন, তারা যদি ছাত্রদলকে ভোট দেন এবং জেতান, তাহলে শেষ পর্যন্ত বিএনপি শক্তিশালী হবে। এটা তারা চাননি। কারণ দলটি ইতিমধ্যেই নানা অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণেই ছাত্রদল ডাকসুতে সম্মানটুকু হারিয়েছে।

নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থেকে ছাত্রলীগ বাদ পড়ায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে শিবির। এই নির্বাচনে ছাত্রদলের ব্যর্থতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেনি, বরং জাতীয় পর্যায়ে দলটির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে বলে দলীয় নেতা ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই পরাজয় থেকে বিএনপি শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হলে সামনে ফল হবে ভয়াবহ।  

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচন বিএনপির জন্য একটি শিক্ষা। দলটি যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে দেখছিল, সেখানে এখন পরিবর্তন আসতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে কৌশলগতভাবে কাজ করতে হবে। তা ছাড়া ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়বে। জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠন দেখিয়েছে, এখন বিএনপিই তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনের পর জামায়াত নতুন গতি পেয়েছে এবং বিএনপিকে এই বাস্তবতায় আরও মনোযোগ দিতে হবে।

অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শিবিরের জয় জামায়াতকে বিপুল শক্তি জোগাবে। অবশ্যই এটি তাদের জন্য সুখবর। বিএনপিকে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সামনে এগোতে হবে। তা ছাড়া চাঁদাবাজি, দখল ও দলীয় কোন্দল ইতিমধ্যেই বিএনপির ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলেছে, যার প্রতিফলন ডাকসু নির্বাচনে স্পষ্ট। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বর্তমান সহ-সভাপতি ও সভাপতি প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ডাকসু নির্বাচনের ফল মানুষের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।  ছাত্রদলের এমন ভরাডুবি কেউ মানতে পারছেন না। এক শ্রেণির মানুষ ভাবছে, ছাত্রদলের হার আর বিএনপির হারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যার কারণে অনেকেই এখন ছাত্রদলের কমিটি ভাঙার কথা বলছেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক যুগ্ম সম্পাদক জানান, ছাত্রদল ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজিতে যুক্ত হয়ে মরে গেছে। একে জীবিত করতে হলে ডাইনামিক ছাত্রনেতাদের সামনে আনতে হবে।  

ছাত্রদলের এক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, ডাকসুতে জেতার পর শিবির নেতারা এখন ব্যাপক আলোচনায়। জাতীয় নির্বাচন এলে তারা এলাকায় ফিরে তাদের এই অর্জনকে কাজে লাগিয়ে ভোট চাইবেন এবং এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বেই। এর থেকে শুধু ছাত্রদল না বিএনপিরও শিক্ষা নেওয়া উচিত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ছাত্রদলসহ বিএনপির সব সংগঠনকে শক্তিশালী করা ও বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনে কাজ করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছাত্রদলের কমিটি ভাঙতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী দলের একটি প্রতিনিধিদল কাজও শুরু করেছে। কারণ, ডাকসুর এমন ফলাফলে তারেক রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসাজশ করে শিবির ডাকসু নির্বাচনে জয় পেয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেছেন, এই ফল জাতীয় নির্বাচন বা রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।  

দীর্ঘদিন একই কমিটিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ:

পুরোনো মুখদেরই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দায়িত্ব দেওয়ার সংস্কৃতি, বছরের পর বছর ধরে একই কমিটি এবং আঞ্চলিকতার প্রবল প্রভাবে নেতৃত্ব বিকাশে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। অথচ একসময় এ সংগঠনটির ওপর ভর করেই সারা দেশে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই সংগঠন পরিচিতি লাভ করেছিল। তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে সময়ের ব্যবধানে এখন আর সেই দিন নেই ছাত্রদলের।  দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকায় ধীরে ধীরে মিইয়ে গেছে ছাত্রদলের দাপটও। সক্রিয় কার্যক্রম দূরের কথা, দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছিল না কমিটি। বিগত সরকারের সময় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের মারমুখী অবস্থানে সারা দেশে ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়ে ছাত্রদল। এরপর ডাকসুর নির্বাচনে হেরে সংগঠনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সাবেক ও বর্তমান নেতারা অনেকেই উদ্বিগ্ন।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, প্যানেল ঘোষণার পর ছাত্রদলের বর্তমান ও প্রাক্তন সবাই এক এবং অভিন্ন হয়ে কাজ করলেও ছাত্রদল জয়লাভ করতে পারেনি। এরও কারণ রয়েছে, তা হচ্ছেÑ নতুন জেনারেশনকে চিন্তা করে প্যানেল করা উচিত ছিল। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!