অন্তর্বর্তী সরকারের সময় স্থানীয় সরকারে কোনো জনপ্রতিনিধি না থাকায় ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা প্রতিরোধে নেই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। ক্রমেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, যাচ্ছে প্রাণও। শুধু সেপ্টেম্বরের ১৮ দিনেই আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ১০ হাজারের বেশি। মোট আক্রান্তের ঘর পেরিয়েছে ৩৬ হাজার। গত বুধবার পাঁচজনের মৃত্যুর এক দিন পরই গতকাল বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৬ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬৪৭ জন। মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন নারী ও একজন পুরুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪১ জন। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ১০৮ জন, ঢাকা বিভাগে ১০২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৮ জন, খুলনা বিভাগে ৩৭ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৮৬ জন পুরুষ ও ৮১ জন নারী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বহন করে এডিস মশা। এই জাতের মশা নালা-নর্দমার নোংরা পানিতে জন্মায় না, বরং জন্মায় মানুষের ঘরের ভেতরে ও আশপাশে জমে থাকা অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার পানিতে। ছাদে ও বারান্দায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে, গাছের টব, ডাবের খোসা ইত্যাদি আধারে জমে থাকা পানিতে। বর্ষাকালে প্রায়ই থেমে থেমে বৃষ্টি হয় বলে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। তাই জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে থাকে এবং এটাকেই ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম বলা হয়। প্রাকৃতিকভাবে জুন থেকেই শুরু হয় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজনন ঋতু।
এমন পরিস্থিতিতে এডিস মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই রোগ সংক্রমণ ও বিস্তারের প্রকৃতি লক্ষ করলে এটা এড়ানোর কিছু উপায় আমরা সহজেই অবলম্বন করতে পারি। সেটা হলো বাসাবাড়ির ভেতরে ও আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া, যাতে এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকানো যায়। দ্বিতীয়ত, মশার কামড় এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকা, বাসা মশামুক্ত রাখার চেষ্টা করা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা। বিশেষভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন শিশুদের ব্যাপারে। তাদের খালি গায়ে না রাখা, কেননা এডিস মশা সাধারণত শরীরের উন্মুক্ত অংশে বসে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সতর্কতার পাশাপাশি সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগও বিশেষভাবে প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের ভূমিকাও কম নয় বলে উল্লেখ করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি। যা বছর শুরুর আগেই করতে হয়। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে আমরা তা দেখছি না।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন