ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পরিদর্শন

যানজটে নাকাল উপদেষ্টা বাইকে গেলেন গন্তব্যে!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম
  • সড়কপথের পাশাপাশি রেল ও নৌপথ ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ
  • ঢাকায় না থেকে ১২ কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অফিস করার নির্দেশ

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেহালদশা ও যানজট পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাওয়ার পথে নিজেই তীব্র যানজটের কবলে পড়েন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পরবর্তীতে মোটরসাইকেলে করেই গতকাল বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বিশ্বরোড মোড়ে পৌঁছান। 

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এখানে আসতে আধা ঘণ্টা লাগার কথা, কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে অনেক সময় লেগে গেল। যানজটের অন্যতম কারণই হচ্ছে ট্রাফিকের অব্যবস্থাপনা।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘সবাই খালি রাস্তা চায়। যার ফোর লেন আছে, সে বলে সিক্স লেন করতে হবে। রাস্তা রাস্তা করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। যেভাবে রাস্তা হচ্ছে, তাতে বাসাবাড়ি করার জায়গা থাকবে না, শিল্প-কারখানা করার জায়গা থাকবে না, মানুষকে কবরে দেওয়ার জন্য কোনো জায়গা থাকবে না। রাস্তা রাস্তা করলে আমরা এগোতে পারব না। রাস্তার পাশাপাশি রেলের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নৌপথ ব্যবহার করতে হবে।’

ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এখানে (সরাইল বিশ্বরোড মোড়) ফ্লাইওভার করতে হবে। এ জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে। কাজের অগ্রগতি দেখার জন্য এখানে ১২ জন অফিসার পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এখানে ক্যাম্প করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, এখানে থেকে কাজ করার জন্য। এদের কেউ যদি এখানে না থাকে, আমাকে জানালে সঙ্গে সঙ্গে বরখাস্ত করা হবে।’

এর আগে গতকাল সকালে চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সেখান থেকে সড়কপথে আশুগঞ্জ রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন। ১০টা ২০ মিনিটে তিনি আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোডের উদ্দেশে রওনা হন। পথে আশুগঞ্জের সোনারামপুর এলাকায় প্রায় দুই ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিলেন। এরপর গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। এরপর বাহাদুরপুর এলাকায় তিনি একটি মোটরসাইকেলে করে বিশ্বরোডের দিকে রওনা হন। সঙ্গে আরেকটি মোটরসাইকেলে ছিলেন উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনউদ্দীন। বেলা ১টার দিকে সরাইল বিশ্বরোডে পৌঁছান তিনি।

মহাসড়ক পরিদর্শনে উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম ও পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক এবং সড়ক ও জনপথের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসেন ও হাইওয়ে পুলিশ সুপার শাহীনুর আলম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সড়ক পরিদর্শনে এসে যানজটের কবলে পড়ে মোটরবাইকে করে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের রওনা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয় আলোচনা-সমালোচনা। মোটরবাইকে চড়ে উপদেষ্টার রওনা হওয়ার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই প্রশংসা করেন। কিন্তু উল্টোপথে বাইকে করে রওনা দেওয়ায় অনেকে সমালোচনাও করেন। 

আন্তর্দেশীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে ২০২০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শুরু হয়। প্রায় ৫ বছর কেটে গেলেও পুরোপুরি শেষ হয়নি নির্মাণ। উল্টো নানা জটিলতায় প্রকল্প কাজে ধীরগতি আর জুলাই অভ্যুত্থানের পর তিন মাস কাজ বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বাড়ে মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের।

এ অবস্থায় প্রকল্পের আওতায় পড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ চালক ও যাত্রীদের কাছে মহাদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এই দুই চত্বরে প্রতিনিয়ত যানজটের কারণে ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট রুটের যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গতকাল বুধবার চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের অগ্রগতি ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেহাল অংশ পরিদর্শনে এসে যানজটের কবলে পড়েন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশি অর্থ ও ভারতীয় ঋণে চলমান ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কাজ ফেলে দেশে ফিরে যান। তিন মাস পর তারা আবার বাংলাদেশে ফিরে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে তাদের অনেক মালামাল খোয়া যায়। এতে কাজের গতি আরও কমে যায়। তারা কাজটি একধরনের না করার মতো অবস্থায় ফেলে রাখেন। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি মেটাতে গত মাসের শেষের দিকে আরও ১৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

সওজের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা কার্যালয়সহ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘ যানজট নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে কার্যকর উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর গত শনিবার বিকেল থেকেই সরাইল বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকায় সড়ক মেরামত কাজ শুরু করে সওজ।

সেখানে তিন স্তরে ১২ মিটার প্রস্থ ও ১৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য, আর গোলচত্বর থেকে সিলেটমুখী সরাইল কুট্টাপাড়া খেলার মাঠ পর্যন্ত ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থে তিন স্তরে ইট ও বালু বিছানো হচ্ছে। ঢাকা, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তৈরি ইট আনা হচ্ছে। এখানে মোট চার লাখ ইট বিছানো হবে। শনিবার বিকেল থেকে রোববার রাত ২টা পর্যন্ত, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গোলচত্বর এলাকায় ইট বিছানোর কাজ চলে।