ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত

ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২১

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ১২:০৪ এএম

সীমান্তে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে সীমান্ত অঞ্চলে অন্তত ২১ জন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার ভোরে শুরু হওয়া সংঘর্ষে দুই পক্ষের বেসামরিক মানুষ ও সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সীমান্তে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। এদিকে প্রায় চার দিনের সংঘর্ষের পর ৪৮ ঘণ্টার একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও তালেবান সরকার। গতকাল পাকিস্তানের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, জটিল হলেও এটি সমাধানযোগ্য সমস্যা। একটি ইতিবাচক সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এ জন্য সংলাপের মাধ্যমে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয়ই আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে।

বিগত কয়েক দিন ধরে এক সময়ের মিত্র এই দুই দেশের মধ্যে শত্রুতা ক্রমেই বাড়ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা গতকালের হামলার বিষয়ে জানিয়েছে, দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে।

এক্সে দেওয়া পোস্টে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ অভিযোগ করেন, পাকিস্তানি সেনারা আগে গুলি চালিয়ে সংঘর্ষ শুরু করে। তিনি বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী ‘হালকা ও ভারী অস্ত্র’ ব্যবহার করে আফগানিস্তানের ভেতরে হামলা চালায়। এতে ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও শতাধিক আহত হন। মুজাহিদ দাবি করেন, আফগান বাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে ‘বিশালসংখ্যক’ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। পাকিস্তানি অস্ত্র ও ট্যাংক দখল করেছে এবং তাদের সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। তবে তিনি নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেননি। স্পিন বোলডাক জেলার জনসংযোগ কর্মকর্তা আলী মোহাম্মদ হাকমাল জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি এক জেলা হাসপাতালের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে ৮০ জন নারী ও শিশু রয়েছে। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথমে তালেবানই পাকিস্তানের একটি সামরিক চৌকি ও সীমান্তের আশপাশে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং চার পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক আহত হন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সংঘর্ষে ছয়জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই সহিংসতা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে।

পাকিস্তানের চামান জেলার বাসিন্দা নাজিবুল্লাহ খান বলেন, ‘গোলাগুলির সময় সীমান্তের কাছের অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। মানুষ খুব কষ্টে আছে। গোলার আঘাতে অনেকের বাড়িঘরে আগুন লেগে গেছে।’ পাকিস্তান সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আফগান তালেবানের হামলা কার্যকরভাবে প্রতিহত করেছে। এতে ১৫ থেকে ২০ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছে। সেনাবাহিনী আরও জানায়, একই রাতে উত্তরের কুররম জেলাতেও তারা আলাদা এক তালেবান হামলা প্রতিহত করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আরও বলেছে, ‘পাকিস্তানই আগে হামলা চালিয়েছেÑ এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। পাকিস্তানের পোস্ট বা অস্ত্র দখলের কথাও মিথ্যা। দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’

উল্লেখ্য, গত শনিবার থেকেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে। সেদিনও দুই পক্ষ সীমান্তের একাধিক স্থানে গোলাগুলি চালায়, তাতেও দুই দেশের বহু মানুষ হতাহত হন।

এদিকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য খাইবার পাখতুনখোয়ার কুররম জেলার সীমান্তে আফগান সেনাবাহিনীর ৪টি সীমান্ত চৌকি ও ৬টি ট্যাংক ধ্বংস করার দাবি করেছে পাকিস্তান। গত মঙ্গলবার বিকেলে পাক সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় ফিতনা আল খারিজ গোষ্ঠী ও আফগান সেনারা। জবাবে পাল্টা আক্রমণ করে পাকিস্তান। এতে নিহত হয় বেশ কয়েকজন আফগান সেনা এবং পালিয়ে যায় অনেকে।

২০২১ সালের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষের পর চীন উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, চীন আন্তরিকভাবে আশা করে যে, উভয় দেশ বৃহত্তর চিত্রকে অগ্রাধিকার দেবে, শান্ত ও সংযম প্রদর্শন করবে এবং আরও সংঘাত এড়াতে সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের সমাধান করবে।

তিনি আরও যোগ করেছেন যে, চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে ‘গঠনমূলক ভূমিকা পালন চালিয়ে যেতে’ প্রস্তুত এবং উভয় পক্ষকে এই অঞ্চলে চীনা কর্মী, প্রকল্প এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের তিন দিন পর ইসলামাবাদে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক মিশনের প্রধানদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পাকিস্তানের অবস্থান সম্পর্কে ব্রিফিং দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালোচ ইসলামাবাদে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের সম্প্রতি পাক-আফগান সীমান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ ব্রিফিং দেন।