মিরপুরের কালো মাটির উইকেটে গতকাল বাংলাদেশের স্পিনেই কুপোকাত হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের দেওয়া ২৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রিশাদ-নাসুমদের বিষাক্ত স্পিন বোলিংয়ের সামনে ১১৭ রানেই অলআউট হয় ক্যারিবিয়ানরা। ফলে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৭৯ রানে বড় ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা জয়ের রেকর্ড এটি। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড। এর চেয়ে বাংলাদেশের বড় জয় আছে কেবল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২৩ সালে ১৮৩ রানে। রেকর্ড জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল টাইগাররা। ১৯ মাস পর ওয়ানডে সিরিজ জিতলেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। গত বছরের মার্চে ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ের পর টানা চারটি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুইবার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলংকার কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারের হতাশায় পুড়েছে তারা। এবার ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচে সুপার ওভারের রোমাঞ্চ জিততে পারেনি লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। তবে গতকাল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লড়াই জমাতে দেয়নি বাংলাদেশ। দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসানের ব্যাটিং নৈপুণ্যে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে ২৯৬ রানের বড় স্কোর গড়ে তারা। জবাবে ৩০.১ ওভারে ১১৭ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। সৌম্য ৮৬ বলে ৯১ রানের ইনিংস খেলেন। আর ৭২ বলে ৮০ রান করেন সাইফ। বোলিংয়ে রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, মিরাজ, তানভির ইসলামদের স্পিনে হাবুডুবু খেয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। চারজন স্পিনার এত ভালো বল করেছেন যে, একমাত্র পেসার হিসেবে খেলা মোস্তাফিজুর রহমানকে এক ওভারও বল করতে হয়নি বাংলাদেশকে। কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে এমন অভিজ্ঞতা তার প্রথম। নাসুম ও রিশাদ তিনটি করে উইকেট নেন। দুটি করে উইকেট পান মিরাজ ও তানভির। ম্যাচসেরা হয়েছেন সৌম্য সরকার। আর সিরিজ সেরা হয়েছেন রিশাদ হোসেন।
ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের ২৫ ওভার খেলে বাংলাদেশের দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান ১৭৬ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন। এই জুটি ভাঙার পর টানা কয়েকটি উইকেট হারানোয় রানের চাকাও থমকে যায়। শেষ পর্যন্ত তিনশ রানের আগেই থেমেছে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন সৌম্য ও সাইফ। দুবার জীবন পেয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত করেন ৫৫ বলে ৪৪। দুই ওপেনার মিলে যেখানে নিয়েছেন ১৭৬, বাকি ৭ জন মিলে যোগ করেন ১২০ রান। ইনিংসের শুরুর ২৫ আর শেষের ২৫ ওভারেও থেকে যায় এমন বৈসাদৃশ্য। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুর কয়েক ওভার ছাড়া সাবলীল ছিলেন দুই ওপেনার। উইকেটে বাড়তি বাউন্স ও টার্ন দেখা গেলেও তারা মানিয়ে যান দ্রুত। আগ্রাসী ব্যাট চালিয়ে চার-ছক্কায় দ্রুত বাড়িয়ে নেন রান। ৪৫ ইনিংস পর ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে শতরানের দেখা পায় বাংলাদেশ। তাদের লম্বা জুটিতে হয়ে যায় একাধিক রেকর্ড। মিরপুরের মাঠে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি, বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটির রেকর্ডের পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেরা ওপেনিং জুটির রেকর্ড গড়েন সৌম্য-সাইফ।
রোস্টন চেজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ উঠিয়ে সাইফের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। সাইফ ৭২ বলে ৬টি করে ছক্কা-চারে করেন ৮০। চলতি বছর মাত্র চতুর্থ ওয়ানডেতে খেলার সুযোগ পাওয়া সৌম্য ছিলেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরির কাছে, পারেননি এই বাঁহাতি। ৮৬ বলে ৭ চার, ৪ ছক্কায় থামেন ৯১ রান করে। আকিল হোসেনের বলে ছক্কার চেষ্টায় বাউন্ডারি লাইনে বিদায় তার। সাইফ-সৌম্য থামার পর উল্টো পথে হাঁটা শুরু। ধুঁকতে থাকেন মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। তাওহিদ হৃদয় ২৮ রান করতে খেলেন ৪৪ বল। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ ফেরেন এক অঙ্কের ঘরে। শেষদিকে নুরুল হাসান সোহান ৮ বলে ১৬ করলে তিনশর কাছে যেতে পারে বাংলাদেশ।