সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক ও শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ১২:৫৯ এএম

স্বজনদের কান্নায় ভারী ঈশ্বরকাঠির আকাশ

রূপালী প্রতিবেদক ও শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ১২:৫৯ এএম

স্বজনদের কান্নায় ভারী  ঈশ্বরকাঠির আকাশ

‘দুপুর ১২টার দিকে আবুল কালামের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছে। সে বলছিল, দু-এক দিনের মধ্যে বাড়িতে আসবে এবং আমি যেন ইলিশ মাছ কিনে রাখি। আমার ভাই আর এলো না....’Ñ এমন আহাজারি করে দেবরের জন্য গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছেন রাজধানীর ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশন এলাকায় বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের মেজ ভাবি আছমা বেগম। শুধু আসমা বেগম নন, তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আবুল কালামের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রাম। তার এমন অকালমৃত্যু মানতে পারছেন না স্বজনেরা ও গ্রামের মানুষ।

সরেজমিন ঈশ্বরকাঠি গ্রামে গিয়ে গতকাল দেখা যায়, গ্রামের বাড়িতে চার ভাইয়ের টিনের চারটি বসতঘর রয়েছে। গ্রামে এলে একটি ঘরে থাকতেন আবুল কালাম। সেই ঘর তালাবদ্ধ। তার বড় ভাই খোকন চোকদারের ঘরে বসে কাঁদছিলেন বড় বোন সেলিনা বেগম, ভাবি আছমা বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও। কালামের মৃত্যুর খবর শুনে স্বজনদের পাশাপাশি গ্রামের মানুষ ও এলাকার বন্ধুবান্ধব বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছেন।

স্বজনেরা জানান, ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে আবুল কালাম। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে আবুল কালাম ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। ২০ বছর আগে কিশোর বসয়ে তার বাবা ও মা মারা যান। এরপর তিনি বড় হন বড় ভাই ও বোনদের কাছে। কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় যান আবুল কালাম। সেখান থেকে ফিরে ২০১৮ সালে পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের ছয় বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সি এক মেয়েসন্তান রয়েছে। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে আবুল কালাম নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন। ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতেন। ওই কাজের জন্যই প্রতিদিন তিনি নারায়ণঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াত করতেন।

প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে আসেন আবুল কালাম। এরপর কাজের জন্য সেখান থেকে বের হন। আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে যায়। সেটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান আবুল কালাম। এরপর গণমাধ্যমের সংবাদে পরিবারের সদস্যরা তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন।

গতকাল বিকেলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের সামনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ৩৬ বছর বয়সি কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া। এক ছেলেকে কোলে নিয়ে তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আজকে (কালামকে) আমি বিদায় দিতে চাইনি। দরজা লাগাতেও যাইনি। আমার বাচ্চাদের কী হবে?’

আবুল কালামের বড় বোন সেলিনা বেগম বলছিলেন, আমার ভাইটি সারা জীবন কষ্ট করেছে। কিশোর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়েছে। আজ দুই শিশুসন্তান রেখে সে নিজেও না ফেরার দেশে চলে গেছে। এখন এই শিশু দুটির কী অবস্থা হবে? কে তাদের পিতৃস্নেহ দেবে? তার বিধবা স্ত্রী কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে? আল্লাহ, তুমি আমার ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে এমন কেন করলা?

আবুল কালামের বড় ভাই খোকন চোকদার বলেন, ‘ওটাই যে আমার ভাইয়ের শেষযাত্রা হবে, আমি বুঝতে পারিনি। এখন সে ফিরবে প্রাণহীন দেহ নিয়ে। আমরা স্বজনেরা অপেক্ষায় আছি তার প্রাণহীন দেহটার জন্য। আমাদের পরিবারের সঙ্গে কেন এমন হলো? আমার ভাইটি তো কারও কোনো ক্ষতি করেনি! তাহলে কেন অকালে তাকে প্রাণ হারাতে হলো? তার স্ত্রী-সন্তানকে এখন কে দেখবে?’

নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি চোকদার বলেন, ‘আবুল কালাম খুব পরিশ্রমী ও ভদ্র স্বভাবের মানুষ ছিলেন। এমন আকস্মিক মৃত্যু আমাদের জন্য এক অসম্ভব বেদনার বিষয়। সরকারের অবহেলার কারণে আমার ভাই মারা গেল। এখন তার পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে?’

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘রাজধানীতে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমাদের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের সন্তান আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। পরিবারটির পাশে থাকতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকার থেকেও আর্থিক সহায়তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লাশ আনা থেকে দাফন-কাফন পর্যন্ত আমরা পরিবারটির সঙ্গে আছি এবং ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকব।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!