বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’ গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচন সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা সভায় কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দেখা গেল, যখন এটা (সুপারিশ) তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) উপস্থাপন করল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে, তখন সেটায় অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে তারা যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো যেন সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, তেমনটা বলেছিলেন। এ ব্যাপারে তারা আস্থা-বিশ্বাস রেখেছিলেন। কিন্তু সেই আস্থা, বিশ্বাসের সঙ্গে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যেটা তারা তাদের কাছ থেকে আশা করেননি।’ বিএনপি সংস্কারের পক্ষের দল বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “মতভেদ থাকলেও তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। যেসব প্রস্তাব নিয়ে ভিন্নমত ছিল, সেখানে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন। জনগণ ভোট না দিলে বাস্তবায়ন করবেন না।’’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের মতভেদ থাকলেও মূল যে সনদ, সেই সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছিলাম। এটাই নিয়ম যে, আমরা যদি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাই, মানুষ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা সেই বিষয়গুলো আবার সামনে নিয়ে আসব। সেটাকে আমরা পার্লামেন্টে পাস করে দেশের যে পরিবর্তন, সেই পরিবর্তনটা নিয়ে আসব।’ বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের দল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির জন্ম হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নেই। গণভোট নির্বাচনের দিনই হবে, সে কথা তারা পরিষ্কার করে বলেছেন। সেখানে দুটি ব্যালট থাকবেÑ একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য।’ কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা গণভোটের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে, দয়া করে তারা যেন জনগণকে আর বিভ্রান্ত না করে। এই দল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। আজকে দয়া করে জনগণ যে নির্বাচন চায়, সেটার যেন বিরোধিতা তারা না করে।’
জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ যখন একদলীয় শাসনব্যবস্থার জাঁতাকলে, তখন আ স ম আব্দুর রবের মতো রাজনীতিবিদেরা দেশকে উদ্ধার করেছিলেন।’ এ সময় তিনি আ স ম আব্দুর রবের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
আগামীতে নির্বাচিত হলে বিএনপি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
একই অনুষ্ঠানে, বর্তমানে দেশ গভীর সংকটে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ভবিষ্যতে যে সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে, সেই সরকার যদি প্রতারক হয়, তাহলে আর কী করার আছে।’ মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের মতো পরিস্থিতি বর্তমানে দেশে নেই। দেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো, দ্রুত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা।’
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ দুটি নির্বাচনের ঝুঁঁকি নেওয়ার অবস্থায় নেই বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি নির্দিষ্ট বিষয়ে। তবে তারা কোনো নির্বাহী আদেশ দিতে পারে না। সেই সমর্থন আমরা তাদের দিইনি।’
শারীরিক অসুস্থতার জন্য জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। তবে তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রবীণ নেতা সব অতিথিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

