ঢাকা শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫

বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা আসবে যেকোনো সময়

রুবেল রহমান
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

নানা শঙ্কা আর অনিশ্চয়তার মধ্যেও ধীরে হলেও বইতে শুরু করেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া অনেক দিন আগেই সেরেছে। নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি তৎপরতা শুরু না হলেও দলের অভ্যন্তরে চলছে নিবিড় প্রস্তুতি, যার কেন্দ্রে রয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে তিনি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া। বিভাগভিত্তিক বৈঠক ডাকলেও তারেক রহমানের একটি ফোনকলই নির্ধারণ করছে কারা হচ্ছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। এই ফোনকলের মাধ্যমেই স্পষ্ট হচ্ছে কে পাচ্ছেন ‘গ্রিন সিগন্যাল’ আর কে বাদ পড়ছেন নির্বাচনি দৌড় থেকে। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি বর্তমানে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রতিটি আসনে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং সাংগঠনিক সক্ষমতা খতিয়ে দেখছেন। শুধু পর্যবেক্ষণ নয়, ব্যক্তিগতভাবে তিনি প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। এখন তিনি চূড়ান্ত প্রার্থীদের ফোন করে নির্বাচনি প্রচারণায় পূর্ণোদ্যমে নামার নির্দেশনা দিচ্ছেন, যা তাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করছে। তবে যাদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হচ্ছে তারাই শুধু জানছেন। সে বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ না করার কঠোর নির্দেশনা আছে।
যারা সিগন্যাল পায়নি তাদের মধ্যে যাতে দ্বন্দ্ব তৈরি না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএনপি। দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতার মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে দফায় দফায়। দেশের ১০ সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডেকে গুলশান কার্যালয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মন দিয়ে শুনছেন তাদের বক্তব্য, দিচ্ছেন নানা নির্দেশনা। কেন্দ্রের ডাক পেয়ে তৃণমূলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তারা নির্বাচনি আমেজ অনুভব করছেন। তবে গত সোমবারের বৈঠকে দলটির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান বুঝিয়েছেন মনোনয়নপ্রাত্যাশীদের। বলেছেন, সবাই যাতে এমপি হতে না চায়। বলা চলে, আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ গুছিয়ে আনছে বিএনপি। এই প্রক্রিয়ায় প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থী ঠিক করে রাখা হচ্ছে বলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের কথায় জানা গেছে। সমগ্র বাংলাদেশে আসনভিত্তিক একাধিক যোগ্য প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন। অতীতের মতো যাতে আইনি জটিলতায় প্রার্থীসংকট না হয়, তার জন্য বিকল্প প্রস্তুতি রেখেছে বিএনপি। 
নির্বাচন উপলক্ষে তারেক রহমান দলীয় নেতাদের দিয়েছেন জরুরি নির্দেশনা। মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রার্থীদের কোনো ধরনের আনন্দমিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। গত সোমবার পাঁচ বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে তারেক রহমানের মতবিনিময়ে এমন বার্তা দেওয়া হয়। ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে নেতাদের বার্তা দিয়েছে বিএনপি। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে সামনে আরও কঠিন সময় আসবে বলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সতর্ক ও সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করলে প্রতিপক্ষ সুযোগ পাবে বলেও নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সভায় তারেক রহমান বলেন, এক আসনে একজন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। সবাই মনোনয়ন পাবেন না। যারা মনোনয়ন পাবেন না, তাদের দল বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করবে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মশিউর রহমান রনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এই পরিস্থিতিতে ভুল-ত্রুটি না করার জন্য নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। ঐক্যবদ্ধভাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক, ধানের শীষের পক্ষে সব নেতাকে কাজ করার নির্দেশনাও দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।’
সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সভায় বলা হয়েছেÑ দল একজনকে মনোনয়ন দেবে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খুব তাড়াতাড়ি প্রার্থী ঘোষণা করা হবে জানিয়ে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।’
বরিশাল-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাত উল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘দল যেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে চায়, আমার সব যোগ্যতাই আছে। আশা করি, আমাকে মনোনয়ন দেবে বিএনপি। আমাকে না দিলে কষ্ট পাব সত্যি, তবে যাকেই দেবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। দলের মনোনীত প্রার্র্থীকে পাস করিয়ে আনতে হবে, এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দ্রুতই অন্তত ২০০ আসনে একক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও এখনই প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হবে না। তবে যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন তারা জানতে পারবেন। তপশিল ঘোষণার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে সব কিছু চূড়ান্ত হবে। তবে আগের মতো এবার শুধু সিনিয়রিটি বা কেন্দ্রীয় সম্পর্ক নয়, বরং মাঠের বাস্তবতা ও জনগণের পছন্দই সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। তারেক রহমানের কাছে এখন প্রতিটি আসনের বিস্তারিত রিপোর্ট রয়েছে। যাদের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে এবং যারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছেন, তারাই এই কাক্সিক্ষত ফোনকল পাচ্ছেন। এবার একই পরিবারের একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলেও দল থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। 
প্রার্থী চূড়ান্ত করা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দ্রুতই দলের পক্ষ থেকে দুই শতাধিক আসনে একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। আমরা প্রক্রিয়ার একদম শেষ পর্যায়ে আছি। শিগগিরই সবাইকে জানানো হবে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রূপালী বাংলাদেশেকে বলেন, ‘যারা এলাকায় সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে পরিচিত, তারাই এবার বিএনপির মনোনয়ন পাবেন। একই আসনে অনেক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারেন, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজে খোঁজ-খবর নিয়েছেন, এলাকার মানুষের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা বেশি।’