ঢাকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

‘হযবরল’ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলায় আনার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১২:২১ এএম

যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ‘হযবরল’ অবস্থায় রয়েছে স্বীকার করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরানোর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দ্রুত শৃঙ্খলার মধ্যে আনা না গেলে পুরো ব্যবস্থাটা অর্থনীতির জন্য গলার ফাঁসে পরিণত হবে।

গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ‘সেন্ট্রাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট সেক্টর মাস্টার প্ল্যান অব বাংলাদেশ’সংক্রান্ত প্রান্তিক মূল্যায়ন ও কৌশলগত পরিকল্পনাবিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান সড়ক, রেল, বিমান ও নৌপথÑ এই চার মাধ্যমকে টেকসই ও সমন্বিতভাবে উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন। একইসঙ্গে তিনি প্রকৃতি, পরিবেশ ও নদী রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত রেখে সমন্বিত পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এই কাজটা করতে হবে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে। নদীর ওপর কোনো আঘাত করা যাবে না, পানিকে শান্ত রাখতে হবে, মনে রাখতে হবে পানি আমাদের জন্য বিরাট সম্পদ।

বৈঠকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি প্রাথমিক কৌশলগত পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে তৈরি করেন। এই পরিকল্পনায় দেখানো হয়, পুরো দেশের সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর সংস্কার ও সংযোজনের মাধ্যমে কীভাবে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা যায়।

এতে বলা হয়, দেশে বর্তমানে থাকা রেলপথ, নৌপথ এবং সড়কপথের যথাযথ ব্যবহার ও কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়ানো গেলে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করা সম্ভব।

যোগাযোগ খাতের সব ব্যবস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা প্রণয়ন করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই পরিকল্পনার ফলে প্রাথমিকভাবে একটি শক্তিশালী ধারণা পাওয়া গেল। এখন এটিকে বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, পুরো পরিকল্পনাটা করতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে মাথায় রেখে। অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা যখন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নদীর কথা চিন্তা করব, তখন অবশ্যই আমাদের মাথায় রাখতে হবে নদীগুলো আমাদের প্রাণ।

প্রাথমিক পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনউদ্দিন বলেন, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি সামষ্টিক মডেল দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনভাবে কাজ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে যেন অর্থনৈতিক লাইফলাইনটা গড়ে ওঠে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, যেসব ক্ষেত্রে ছোট ছোট কিছু সড়ক নির্মাণ করে দিলেই পুরো অঞ্চলটাকে জাতীয় ‘কানেক্টিভিটির’ মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব, সেসব ক্ষেত্রে দ্রুত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজগুলোকে আরও পরিকল্পিতভাবে করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি ‘প্ল্যানার্স উইং’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চট্টগ্রামে আরও তিনটি নতুন বন্দর চালু হবে। এটাকে বিবেচনায় রেখে অবশ্যই এসব বন্দর থেকে সড়ক যোগাযোগ যেন সহজ ও কার্যকর হয় সে বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পদস্থ কর্মকর্তারা।