ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

নাসা গ্রুপের ভুয়া সম্পত্তি মজুমদারের কিতাবি হিসাব

রহিম শেখ ও মেহেদী হাসান খাজা
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১১:৩২ পিএম

নজরুল ইসলাম মজুমদার। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর্থিক খাতের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ছিলেন স্বৈরাচারের তকমা পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ২২ ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক খাত থেকে বের করে নেওয়া অর্থ পাচার করেছেন বিভিন্ন দেশে। ওই টাকায় বিদেশে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান। ক্রয় করেছেন বাড়ি। একাধারে ছিলেন বেসরকারি এক্সিম ব্যাংক ও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান। নিজ প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপের মাধ্যমে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার, অনিয়ম ও আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এবং পাচারের অভিযোগ রয়েছে মজুমদারের বিরুদ্ধে। সম্পদ গোপন ও কর ফাঁকিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু যে সম্পদ তিনি কখনো কিনেননি সেই সম্পদ দেখিয়ে অন্তত ৪৫০ কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন তিনি। ভুয়া দলিল তৈরি করে আয়কর রিটার্নে নিজেকে মাছের খামারি বলে পরিচয় দিয়েছেন। সম্প্রতি খুলনার দাকোপ ও সাতক্ষীরার আশাসুনিতে সরেজমিন পরিদর্শন করে আয়কর গোয়েন্দাদের একটি দল মজুমদারের নামে কেনা মাছের খামারের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেওয়া তথ্যমতে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে নিজেকে মাছের খামারি বলে পরিচয় দেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। আয়কর নথিতে কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়েছে মজুমদার ফিশারিজ। এতে তিনি তথ্য দেন, খুলনার দাকোপ ও সাতক্ষীরায় ১৬০০ হেক্টর জমিতে চিংড়ি ও কার্প জাতীয় মাছ চাষ করার। মাছ বিক্রি করে এক বছরেই আয় দেখিয়েছেন ২০২ কোটি টাকা। আর খরচ দেখানো হয়েছে ৯১ কোটি টাকা। খামারের জন্য দাকোপের কালীনগরের শ্রীনগরের দুই ব্যক্তির কাছে পুকুর চুক্তি নেওয়ার দলিল আয়কর রিটার্নে জমা দেন নজরুল ইসলাম। দলিল অনুযায়ী, হরি চরণ রায়ের ছেলে যোগেশ চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে ৬১৫ বিঘা জমি লিজ নেন তিনি। তবে যোগেশ চন্দ্র জানান, এত জমি তার নেই। আর জমি কাউকে লিজও দেননি তিনি। চেনেন না নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও। যোগেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার মাত্র ১০ থেকে ১২ বিঘা সম্পত্তি আছে। তার ভেতর দিয়েও এই যে সম্পত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এখানে ২০০০ সাল থেকে ঘের বলতে কোনো কিছুই নেই।’ একই এলাকার রইচ উদ্দিন গাজীর ছেলে আব্দুর রশিদ গাজীর কাছে ৩ হাজার বিঘা জমি লিজ নেওয়ার দলিল আয়কর রিটার্নে দেখান নজরুল ইসলাম। স্থানীয়রা জানান, শ্রীনগরে ওই পরিচয়ের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। আর এত বেশি জমির মালিকও কেউ নেই। তাদের দাবি, আইলার আঘাতের পর এই এলাকায় আর বড় কোনো ঘেরই নেই। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের দাকোপ থানা বা ৬ নম্বর ও ৫ নম্বরের মধ্যে এমন কোনো ঘের নাই। এই ব্যক্তি (রশিদ গাজী) আমাদের এখানকার না। আর ৩৪ হাজার বিঘা জমির যে কথা বলা হচ্ছে সেটাও আমাদের এখানে না। এত জমির মালিক কেউ এখানে নাই।’ পরের বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরেও মৎস্য খামার থেকে ১৩ কোটি টাকা আয় দেখান নজরুল ইসলাম। এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, মৎস্য চাষের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ বৈধ করার বিষয়ে আপত্তি তোলেন অনেকেই। বিষয়টি গড়ায় আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাড় পান নজরুল ইসলাম মজুমদার। মাছের উৎপাদন বাড়াতে আয়করে ছাড় দেয় এনবিআর। তখন আয় ৩০ লাখের বেশি হলে কর ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। কর কম হওয়ায় অনেকেই এ খাতের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ বৈধ করার সুযোগ নেন।

এনবিআরের একটি বিশ^স্ত সূত্রে জান যায়, এসব ভুয়া সম্পদ দেখিয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং তার পরিবারের সদস্যরা ৪৫০ কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন। সম্প্রতি খুলনার দাকোপ ও সাতক্ষীরার আশাসুনিতে সরেজমিন পরিদর্শন করে আয়কর গোয়েন্দাদের একটি দল মজুমদারের নামে কেনা মাছের খামারের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। তথ্য গোপনের অপরাধে আয়কর আইনের ২৭২ ধারা অনুযায়ী জরিমানা দিতে হবে মজুমদার ও তার পরিবারের সদস্যদের। ৩০ শতাংশ হিসাবে মোট ১১২ কোটি এবং এই অর্থের ২০ শতাংশ সারচার্জ মিলিয়ে সর্বমোট ১৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার আয়কর পরিশোধ করতে হবে নজরুল ইসলাম মজুমদারের পরিবারকে। বছরভিত্তির হিসাবে এই অঙ্ক আরও বেশি হবে বলে আয়কর আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

৩ পদ্ধতিতে টাকা পাচার, কিনেছেন রাজার জমিও

নজরুল ইসলাম মজুমদার তিন পদ্ধতিতে দেশ থেকে টাকা পাচার করেছেন। পদ্ধতিগুলো হলোÑ আমদানি, রপ্তানি বাণিজ্য ও হুন্ডি। পাচার করা টাকায় তিনি বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। এ ছাড়া বিদেশে ১৮টি শেল কোম্পানি (বেনামি) গঠন করে সেখানে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। করেছেন মুনাফা। কিন্তু লাভের অর্থও দেশে আনেননি। এগুলোকে পাচার হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে। পাচার করা অর্থে বিদেশে গড়া সম্পদের মধ্যে তিন দেশে ৮টি সম্পদ শনাক্ত করে এগুলো উদ্ধারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬২০ কোটি টাকা। এসব সম্পদ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারের কবজায় নেওয়া হয়েছে। পাচারের আরও সম্পদের সন্ধানে তদন্ত চলছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, নজরুল ইসলাম মজুমদারের মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংকের বিদেশে দুটি এক্সচেঞ্জ হাউস রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণের নামেও জালিয়াতি করে টাকা পাচার করেছেন। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাসা গ্রুপের টাকা পাচারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে আরও জালিয়াতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন গ্রুপের জালিয়াতির ওপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সিআইডি পৃথকভাবে তদন্ত করছে। প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, নাসা গ্রুপের জালিয়াতি করা অর্থে গড়া সম্পদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সরকারের কবজায় নেওয়া হয়েছে মোট ৬ হাজার ৯৫১ কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে দেশে থাকা সম্পদ রয়েছে ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার এবং বিদেশে রয়েছে ৬২০ কোটি টাকার সম্পদ। এ সম্পদের মূল্য আগে ছিল ৬৭০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম কমায় সম্পদের মূল্যও কিছুটা কমেছে।

নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের নামে রাজধানীর তেজগাঁও, গুলশান ও মহাখালী এলাকায় ৬টি বাড়ি শনাক্ত করা হয়েছে। দলিলমূলে এর মূল্য ১৮৪ কোটি টাকা। বাজারমূল্যে চার হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পূর্বাচলে প্লট আছে ৮টি। দলিলমূলে এগুলোর দাম দেড় কোটি টাকা। বাজারমূল্যে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই দুই খাতে সম্পদের মূল্য ৪ হাজার ৬৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বিদেশে ৬২০ কোটি টাকার সম্পদ শনাক্ত করে সেগুলো ফেরত আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫টি যুক্তরাজ্যে। ইউরোপের দেশ ফান্সের নিটকবর্তী ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অধীনস্থ স্বায়ত্তশাসিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র জার্সি। এখানেও নাসা গ্রুপের একটি সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র আইল অব ম্যান। দেশটিতে নাসা গ্রুপের দুটি সম্পদের সন্ধান মিলেছে। দলিলমূলে এগুলোর দাম ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড বা স্থানীয় মুদ্রায় ৫ কোটি ৪ লাখ ডলার। আদালত কর্তৃক দেশীয় অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে ৮৯০ কোটি টাকার। আইল অব ম্যানের বার্কলে ব্যাংক পিএলসিতে ২ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডের বা স্থানীয় মুদ্রায় ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার স্থিতি পাওয়া গেছে।

বিএফআইইউ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তদন্তে নাসা গ্রুপের নামে যুক্তরাজ্য, হংকং, আইল অব ম্যান ও জার্সিতে মোট ১৮টি শেল কোম্পানি বা মালিকানার পরিচয় গোপন করে বেনামি কোম্পানি শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলোতে বিনিয়োগের তথ্য এখন অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এসব কোম্পানির মাধ্যমে আমদানি, রপ্তানি, হাউজিং ও ট্রেডিং ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। বিদেশে নাসা গ্রুপের ওইসব সম্পদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ওইসব সম্পদের হস্তান্তর ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা তোলা বা হস্তান্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ছাড়া শনাক্ত করা তিন দেশের সম্পদের বিষয়ে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে আদালত থেকে সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার রায়ের ওইসব কপি সংশ্লিষ্ট দেশের মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে। যাতে পাচারকারী ওইসব সম্পদ বিক্রি বা স্থানান্তর করতে না পারে। তবে সম্পদ এখনো পাচারকারীই ব্যবহার করছেন।

এখন সরকার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স রিকোয়েস্ট বা এমএলএআর পাঠানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনটি দেশে তিনটি এমএলএআর পাঠানো হবে। এগুলোর খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য, আইল অব ম্যান ও জার্সির সঙ্গে চুক্তি হবে। এর আওতায় আরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া দেশের আদালতে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর রায় হলে তা ওইসব দেশে পাঠিয়ে সেখানে সম্পদ উদ্ধারের মামলা করতে হবে। ওই মামলায় রায় বাংলাদেশের পক্ষে এলেই কেবল সম্পদের অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হচ্ছে সেগুলো আগামী দুই বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আরও বেশি সময় লাগবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আইনি বাধ্যবাধকতা রেখে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশে মামলা হলে সাধারণত দুই বছরের মধ্যেই নিষ্পত্তি করা সম্ভব। পাচার করা টাকা ফেরত আনতে হলে বাংলাদেশকে প্রমাণ করতে হবে ওইসব অর্থ এ দেশ থেকে বেআইনিভাবে নেওয়া হয়েছে। জালজালিয়াতি বা কর ফাঁকি দিয়ে নিলে সেটি বাংলাদেশের পক্ষে আরও ইতিবাচক হবে। বিদেশে যেসব বাংলাদেশির সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে তার সবই জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ নিয়ে করা হয়েছে।

আদালতের আদেশের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব ব্যাংকে স্থিতি হিসাবে রয়েছে ৫২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় ৫২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, দেশের ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে ৩ হাজার ৮১ ডলার বা ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ৬ হাজার ৬৪০ পাউন্ড বা ১০ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। ৫৫টি কোম্পানির ৩৬৯ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ তার স্ত্রী ও পুত্র-কন্যার নামে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

নাসা গ্রুপ দেশ থেকে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে তিনটি মাধ্যম ব্যবহার করেছে। রপ্তানির মূল্য দেশে না এনে ওইসব অর্থ পাচার করেছে। ফলে আমদানিতে বেশি দাম দেখিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। আবার খেজুর আমদানিতে দাম কম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। খেজুরের বাড়তি মূল্য হুন্ডিতে বিদেশে পাঠিয়েছে। ফল আমদানির ক্ষেত্রে নজরুল ইসলাম মজুমদার তার জামাতার কোম্পানিকে ব্যবহার করেন। তবে নাসা গ্রুপের দেশ থেকে টাকা পাচারের এখনো পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দেশ থেকে কমপক্ষে ৬-৭ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।

কারাগারে থেকে ঋণ পরিশোধ

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পগোষ্ঠী নাসা গ্রুপ জুলাই থেকে নিয়মিত বেতন দিতে পারছে না। কারণ ২২টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ৮ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর থেকেই বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা একাধিকবার আন্দোলন করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার নাসা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে। ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে নাসা গ্রুপের খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে অনুযায়ী, ঋণ পুনঃতপশিল করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লাগবে। এই অর্থ ছাড়া আমদানি-রপ্তানির এলসি খোলা এবং ব্যবসা পুনরায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। নাসার ২৫টি কারখানার মধ্যে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ৯টি চালু রেখে বাকি ১৬টি বন্ধের পরিকল্পনা করছে। এসব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৫৪ কোটি টাকার সার্ভিস বেনিফিট দিতে হবে। সব মিলিয়ে গ্রুপটির তাৎক্ষণিক স্থিতিশীলতার জন্য কমপক্ষে ২৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। নাসা গ্রুপের শ্রম অসন্তোষ নিরসনের জন্য গত ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে ত্রি-পক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় নাসা গ্রুপের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের আগস্ট মাসের বেতন ১৫ অক্টোবরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য নাসা গ্রুপের মালিকের সম্পদ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসাপেক্ষে গত ১৭ আগস্ট জেল গেটে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের সাথে নাসা গ্রুপ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংক এবং সরকারি একাধিক সংস্থার প্রতিনিধিদের এক মিটিং হয়। ওই বৈঠকে নজরুল ইসলাম মজুমদার তার স্থায়ী ও অস্থায়ী কিছু সম্পদ বিক্রির অনুমোদন ক্ষমতা দেন (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি/আমমোক্তারনামা), যেগুলো কোথাও জামানত হিসেবে দেওয়া নেই। সে অনুযায়ী, শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে।

নাসা গ্রুপের সুরক্ষায় আছেন বিএনপির নির্বাহী সদস্য!

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বর্তমানে কারাগারে আছেন। বিদেশে অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিদেশে বাড়ি থাকার অপরাধে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর, ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। তিনি জেলখানায় থাকলেও তার ব্যাবসায়িক পার্টনার হিসেবে আছেন বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও বগুড়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম। পাওয়ায় অব অ্যাটর্নি নিয়ে এখন নাসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন। রাজনীতির মাঠে বিরোধিতা করলেও ভেতরে তারা এক। নাসা গ্রুপের ব্যাবসায়িক পার্টনার হিসেবে দীর্ঘ ১৫ বছর ব্যবসা ধরে আছেন তিনি। তার ব্যাবসায়িক কার্যক্রম ও অংশীজনের নথি এ প্রতিবদকের হাতে এসেছে। রাজনীতির মাঠে সোচ্চার তিনি। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে বিএনপি থেকে আবারও বগুড়া-১ আসনের প্রার্থী হচ্ছেন রফিকুল ইসলাম।