ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানের পরও বাংলাদেশে রেকর্ড বিদেশি বিনিয়োগ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৫, ০৪:৩৪ এএম

‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী’ প্রথম বছরে বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। সাধারণত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, তবে বাংলাদেশ এই ধারা ভেঙে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১ দশমিক ২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ আর ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইয়ের ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।

এ বিষয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভূত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুণ একটা প্রতিফলন। সাধারণত গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টো দেখছি। সঠিক নীতিনির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিরই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। আর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।