ঢাকা শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৮২২৬ কেন্দ্র, ঝুঁকিপূর্ণ ২০৪৩৭টি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এরই মধ্যে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেগুলোর মধ্য থেকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৮ হাজার ২২৬টি কেন্দ্র আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ২০ হাজার ৪৩৭টি। শুধু তাই নয়, সংস্থাগুলোর আশঙ্কা আসন্ন নির্বাচনে আসতে পারে অবৈধ অস্ত্রের জোগানও। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ এসেছে।

সূত্রগুলোর মতে, সম্প্রতি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

কেন্দ্র বিষয়ে সম্প্রতি ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, দেশের ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯। এ ছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি।

ইসি সচিব জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি এবং ৫০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়।

এসবি জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৮ হাজার ২২৬টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ভোটকেন্দ্রের ৬৭ শতাংশই এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্থাটি ভোটকেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো, থানা থেকে দূরত্ব, কেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রভাবশালীদের বাসস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় কেন্দ্রের ধরন নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী ভোটকেন্দ্র, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত ভোটকেন্দ্রের তালিকাও শনাক্ত করেছে।

সুপারিশে এসবি বলেছে, মাঠ কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনে বাহিনীর আন্তঃকমান্ড নির্বাচন কমিশন হতে নির্ধারণ করা যেতে পারে। নির্বাচনকালীন অবৈধ অস্ত্রের জোগান আসতে পারে। তাই অবৈধ অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সিআইডিকে দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এসবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তারা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ফোর্স মোতায়েন করে থাকেন। তারা ঝুঁকিপূর্ণ শব্দটির পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। আগের নির্বাচনগুলোর মতো এবারও এসবির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিভিন্ন বাহিনীর কতজন সদস্য ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে তা নির্ধারণ করা হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাড়ে ১০ হাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এতে তিনজনের মতো অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার সেভাবেই বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন বাহিনী থেকে তাদের প্রস্তুতির কথা ইসিকে জানানো হয়েছে।

আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন করতে চায় কমিশন। এ জন্য এখন থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে সংস্থাটি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক  এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সংঘাত-সহিংসতাসহ সব ধরনের অগণতান্ত্রিক প্রসঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখন থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সমন্বিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং রাজনৈতিক দল ও জনগণকে সম্পৃক্ত করে সব অগণতান্ত্রিক অপশক্তিকে মোকাবিলা করার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতিজরুরি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মব সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি ও জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ গ্রহণ ও গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।