ঢাকা রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

ঢাকার অপরাধ জগতের নতুন ত্রাস

‘সন্ত্রাসী রনি’ এখন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস?

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ১২:১৬ এএম

রাজধানীর পুরান ঢাকায় লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করে আরেক শীর্ষসন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার পর নতুন ত্রাস হিসেবে উঠে এসেছে ‘পর্দা রনি’ নামে এক সন্ত্রাসীর নাম। অবশ্য তার বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রনি। প্রথমে মুদি দোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। বর্তমানে ঢাকার অপরাধ জগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। রনিকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছে ডিবি।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রনি মূলত মুদি দোকানি ছিলেন। শীর্ষসন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তার মাধ্যমে অপরাধচক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও নিজের আধিপত্য বাড়াতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধ জগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।’

ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষসন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দেন রনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক, রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না। ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।  হত্যার পর তারা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তার বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধ জগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তার এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষসন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২ লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।

পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকা- আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যারা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধ জগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধ জগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তার সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার অপরাধ জগতের নতুন ত্রাস ইমনের সহযোগী সন্ত্রাসী রনিকে ধরতে আমরা তৎপরতা বাড়িয়েছি। তাকে খুঁজে বের করা হবে এবং আইনের আওয়তায় তাকে আসতে হবে। সন্ত্রাসী রনি এখন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস এবং পুলিশের চোখে অপরাধী। সে কারণে কোন অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের কী ধরনের আচারণ হতে পারে, সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। রনিকে ধরার পরে বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে।