ঢাকা রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫

ফের তিনবার ভূমিকম্প আতঙ্কিত মানুষ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ০২:২০ এএম

দেশের ইতিহাসে গত শুক্রবার ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল শনিবার এক দিনেই তিনবার ভূমিকম্পে কেঁপেছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে এক সেকেন্ডের ব্যবধানে পরপর দুটি কম্পন অনুভূত হয়। এর আগে সকালে নরসিংদীতেই আরও একটি মৃদু ভূমিকম্প হয়। পরপর দুই দিনে চারবার ভূমিকম্পের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ। গতকাল তৃতীয় দফায় ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নিচে নামতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ছয় শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়। এর এক সেকেন্ড পর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এর মধ্যে একটির উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডায়, আরেকটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে। এর আগে সকালে নরসিংদীতেই আরও একটি মৃদু ভূমিকম্প হয়। জেলার পলাশ উপজেলায় সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। যদিও প্রথমে সেটির উৎপত্তিস্থল সাভারের বাইপাইল বলা হয়েছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীতে পরপর দুটি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়। এর এক সেকেন্ড পর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ৪ দশমিক ৩।

এর আগে গত শুক্রবার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে ওঠে। এতে সারা দেশে অন্তত ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী।

ঢাবির ছয় শিক্ষার্থী আহত : গতকাল সন্ধ্যায় তৃতীয় দফায় ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে শামসুন্নাহার হলে তিনজন, কুয়েত মৈত্রী হলে একজন, বেগম রোকেয়া হলে একজন ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলে একজন আহত হন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনই ছাত্রী। এর মধ্যে শামসুন্নাহার হল ছাত্র সংসদের সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। ইসরাতসহ শামসুন্নাহার হলে আহত বাকি দুজনকেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কুয়েত মৈত্রী হলের এক ছাত্রী ওপর থেকে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন বলে এই হলের আরেক শিক্ষার্থী শাহিদা আকতার প্রভা জানিয়েছেন।

বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া আনজুম শারমীন বলেন, ‘আমার হলে একজন আতঙ্কিত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। আঘাত পেয়েছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।’ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে হাতে ব্যথা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এদিকে তীব্র ঝাঁকুনির পর ভূমিকম্পের সময় করণীয় ঠিক করতে তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, ‘আজকের (গতকাল) ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্প, এটা সেগুলোর একটি।’

এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা যে রয়েছে, সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পন হলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতাহত হবে। ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ভেঙে পড়তে পারে ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ ভবন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, “বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে ওপরে রয়েছে। যে পরিমাণ শক্তি ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে জমা হয়ে আছে, সেই শক্তিটা যদি বের হয়, তাহলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এটা আগামীকালও হতে পারে, ৫০ বছর পরেও হতে পারে। কখন হবে, আমরা বলতে পারি না। তবে যেটা হবে, সেটা খুব মারাত্মক হবে। ‘সাবডাকশন জোনের’ ভূমিকম্প ভয়ংকর হয়।”