দেশের সর্বস্তরের মানুষ ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য প্রার্থনায় মগ্ন হয়েছেন। তার শারীরিক সংকটপূর্ণ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সারা দেশে দোয়া-মাহফিল, প্রার্থনা ও সমাবেশ চলছে। বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অসুস্থতার খবর জানতে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও সাধারণ মানুষ হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন।
বেগম জিয়ার সুস্থতা ও রোগমুক্তি কামনায় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দলসহ দলের সকল অঙ্গ সংগঠন সারা দেশে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করছে। একই সঙ্গে জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার, এবি পার্টি, বাম দলসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল তার সুস্থতা কামনায় দোয়া করছে। তার সুস্থতা কামনায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং বিশ^বিদ্যালয়ে দোয়ার আয়োজন চলছে। এছাড়া সারা দেশের মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একই সঙ্গে দোয়া হয়েছে দেশের বাইরেও। সর্বস্তরের মানুষ তার সুস্থতায় দোয়া করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করা হচ্ছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির জানান, ঢাকাসহ দেশের সব মসজিদে বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজ শেষে গণতন্ত্রের মা হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে মোনাজাতের আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে এর আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেছেন সাধারণ মুসল্লিরা।
খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র উত্তরণের এই সন্ধিক্ষণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। মহান আল্লাহর নিকট তার সুস্থতা এবং একই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করি।’
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চান। তিনি খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। তিনি বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যেন কোনো ধরনের ঘাটতি না থাকে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে সরকার প্রস্তুত। গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সময়ে বেগম খালেদা জিয়া জাতির জন্য ভীষণ রকম অনুপ্রেরণা। তার সুস্বাস্থ্য দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
রাজনৈতিক দলগুলোও তার জন্য দোয়া চেয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার অবনতিশীল শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অত্যন্ত চিন্তার কারণ এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে নিয়মিত তার খবর নেওয়া হচ্ছে। আল্লাহর কাছে বেগম জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে দেন, তার কষ্ট লাঘব করেন এবং সর্বোত্তম ব্যবস্থার ব্যবস্থা করে দেন।
গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য দোয়া চান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক খোঁজ নিতে গতকাল এভারকেয়ার হাসপাতালে যান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। দেশবাসীর কাছে দোয়াও চান তিনি। তার সুস্থতা কামনায় দোয়া চায় দেশের সব রাজনৈতিক দল। যাদের মধ্যেÑ গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, হেফাজত ইসলাম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, জাতীয় পার্টিÑ জেপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলÑ জাসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলÑ জেএসডি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলÑ বাসদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিÑ বিজেপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশসহ আরও অনেক দল।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘সিসিইউতে পূর্বের মতোই চিকিৎসাধীন’ জানিয়ে তার চিকিৎসা নিয়ে কারো বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। গতকাল তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানান ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছেÑ এতে কেউ যেন কান না দেয়। রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন, তিনি শুধু বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেত্রীও নন। আজ সারা দেশের মানুষÑ পেশাজীবী, সুশীল সমাজ, ছাত্র, যুবক, শ্রমিক ও কৃষকÑ সবাই তার জন্য দোয়া করছেন। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে গোটা জাতি আজ এক বেদনাবিধুর অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বন্দি থাকা অবস্থায় নিজের সন্তান হারিয়েছেন। অনেক নিপীড়ন ও নির্যাতন সহ্য করেছেন। তবুও তাকে নিজের দেশ থেকে সরাতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে অনেক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হয়েছে, অনেক নির্যাতন হয়েছে। একটি ভগ্নস্তূপের মতো জেলখানায় তাকে বছরের পর বছর রাখা হয়েছে। তারপরও তাকে এই দেশ ও মাটি থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। সারা জাতি তার জন্য দোয়া করছে।

