- কোনো শিফটের প্রশ্ন কঠিন কোনো শিফটের প্রশ্ন সহজ হওয়ার অভিযোগ
- একক প্রশ্নে পরীক্ষা নিলে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে না বলে মত শিক্ষার্থীদের
- বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে ভেটো অধিকাংশ শিক্ষকের
- প্রতি শিফটে গার্ড দিলে একজন শিক্ষক পান ৪৩০০ টাকা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শিফট পদ্ধতিতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা একাধিক শিফটে নেওয়া হচ্ছে। তবে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভর্তিচ্ছুরা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবৎ বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবিটিও উপেক্ষিত থাকছে।
প্রতিবছর শিফটভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ফলে প্রশ্নের মানে অসামঞ্জস্য দেখা দেয় এবং কোনো শিফটের প্রশ্ন কঠিন হয়, আবার কোনো শিফটের প্রশ্ন সহজ হওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। অনেকে ভর্তি পরীক্ষা শেষে প্রশ্ন নিয়ে বের হন বা ইউনিটের অন্যান্য শিফটের পরীক্ষা শুরুর আগেই পূর্বের শিফটের প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে। একই ইউনিটের বিভিন্ন শিফটের কিছু প্রশ্ন কমন থাকায় পরবর্তী শিফটের পরীক্ষার্থীরা অনেকটা সুবিধা পান, যারা পূর্বের শিফটের প্রশ্ন হাতে পেয়ে যান বা পরিচিত কারোর কাছ থেকে শুনে নেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, চলমান শিফট পদ্ধতি বাতিল করে একক প্রশ্নে পরীক্ষা নিলে এমন বৈষম্যের সৃষ্টি হবে না। কিন্তু কোনো ইউনিটে একক প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে একক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক পরীক্ষা গ্রহণ। একক কেন্দ্র হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনিটের পরীক্ষা একবারে বা একক প্রশ্নে নেওয়া সম্ভব নয়। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এ সক্ষমতা অর্জন করাও প্রায় অসম্ভব। তাই শিফটভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার অবসান করতে হলে পরীক্ষা গ্রহণ বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।
ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা জানান, জাবির ভর্তি পরীক্ষার শিফট পদ্ধতি এক ধরনের বৈষম্য। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর মেধার সঠিক যাচাই হয় না। কোনো শিফটের প্রশ্ন সবচেয়ে সহজ হয়, আবার কোনো শিফটে প্রশ্ন কঠিন হয়। ফলে চলমান শিফট পদ্ধতি বাতিল করে একক প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তাদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির বৈঠক অনুযায়ী প্রতি শিফট থেকে সমানসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে।
তবে বৈষম্য নিরসনে এ পদ্ধতি কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান শিক্ষার্থীরা।
কেন হচ্ছে না বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা :
দীর্ঘদিন ধরে বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেছে এবারও। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির সমাপ্তি অধরাই থাকছে। বিশেষ করে যারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ইউনিটে পরীক্ষা দেন, তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। এর মাঝে যদি একই সময়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পড়ে, তবে অনেকেই অংশ নিতে পারেন না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনায় আনা হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, দেশের সার্বিক অবস্থা, প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা ও পরীক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের কথা বিবেচনা করে আগের নীতিই বহাল রাখা হয়েছে।
বাস্তবতা কী বলে :
জাকসুর শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু উসামা জানান, বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তাবে ৩৪টি বিভাগ ও ৩টি ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা ভেটো দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে জাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় মোট ৩০ শিফটের পরীক্ষা হয়েছে, যেখানে প্রতি শিফটে গার্ড দিলে প্রতিজন শিক্ষক পান ৪ হাজার ৩০০ টাকা করে। শুধু অ্যাডমিশন থেকেই একজন শিক্ষক প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো পান। এমনকি ভিসি থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এই সুবিধা পান।
বিভাগীয় শহরে ভর্তি না নিয়ে শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা চলতে থাকায় বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়। তাদের এই আর্থিক চাহিদা মেটাতে এ বছর আবেদন ফি বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ইউনিটপ্রতি অতিরিক্ত ১০০ টাকা গুনতে হবে।
অতিরিক্ত ফি গ্রহণের কারণ হিসেবে সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবং ডিন অফিসগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য এই ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
২১ তারিখ থেকেই কেন ভর্তি পরীক্ষা :
জাবির ভর্তি পরীক্ষা ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। অথচ ১৮ থেকে ২৫ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের উইন্টার ভ্যাকেশন। অনেক বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হতে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত সময় লাগবে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষার সময় আবাসনের জন্য বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু ছুটির কারণে হলগুলো বন্ধ থাকলে ভর্তি পরীক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা পায় না। অন্যদিকে যারা ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাদের প্রস্তুতিও ব্যাহত হয়।
তবে জাকসুর পক্ষ থেকে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হল সংসদের প্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। তিনি জানান, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সকল সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি হেল্প ডেস্ক, অবৈধ দোকান অপসারণ এবং সম্ভাব্য সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনাও রয়েছে।

