ব্যাংকের পরপর তিনটি সভায় বা তিন মাস কোনো পরিচালক সভায় অংশ না নিলে তার পদ শূন্য হয়ে যায়। এর মধ্যে যেটি বেশি সময় হবে, সেটিই কার্যকর হয়। কিন্তু করোনার সময় এই বিধান করা হয় স্থগিত। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিধানটি আবার কার্যকর করা হয়েছে। সময় গড়িয়েছে ১৪ মাস। কিন্তু এরপরও বেসরকারি খাতের মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন শেখ পরিবারের সদস্যরা। তারা হলেন- আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাত ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ও মামাত ভাইয়ের ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস এবং তার ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ। সরকার পতনের পর থেকেই তারা পলাতক রয়েছেন। দুইজনের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহতের ঘটনায় তাপস ছিলেন ‘প্রধান সমন্বয়ক’। শুধু এই তিনজনই নয়, মধুমতি ব্যাংকের বেশ কয়েকজন পরিচালক ও স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার- যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার পুরোপুরি বিপরীত। এরপরও ব্যাংকটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারিবারিক সম্পর্কে চলছে মধুমতি ব্যাংকের কার্যক্রম। যেমন- ব্যাংকের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর শেখ ফজলে নূর তাপসের স্ত্রীর বোনজামাই। আবার ব্যাংকের এমডি শফিউল আজম চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীরের স্কুলবন্ধু।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো পরিচালক টানা তিনটি বোর্ড সভায় বা তিন মাসের বেশি সময় অনুপস্থিত থাকলে তার পদ শূন্য হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির পরও মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বারবার তাদের ছুটি বাড়িয়ে পরিচালক পদে বহাল থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি ঋণখেলাপিরাও ব্যাংকের পর্ষদে থাকার কথা নয়। কিন্তু ব্যাংকের বর্তমান পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অর্থ পাচারের মামলা রয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর কর্মী হত্যা মামলার আসামি হিসেবেও আছে তাপসের নাম।
এছাড়া পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘প্রধান সমন্বয়কের’ ভূমিকা পালন করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে আছেন ব্যাংকটির পরিচালক আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাত ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল। ব্যাংকের পরিচালকের পাশাপাশি তিনি আবার অডিট কমিটিরও চেয়ারম্যান।
ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে আছেন- চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর, শেখ সালাহউদ্দিন, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, নিমাই কুমার সাহা, সালাহউদ্দিন আলমগীর, মোস্তফা কামাল, এ মান্নান খান, তানভীর আহমেদ মোস্তফা, মো. মাহবুবুর রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও স্বতন্ত্র পরিচালক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। তবে ওয়েবসাইটে মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানের ছবি নেই।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর ব্যাংকের কয়েকজন পরিচালক আত্মগোপনে ও বিদেশে চলে গেছেন। তাদের অনেকেই বিদেশে বসে অনলাইনে সভায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অনলাইনে অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে ছুটি নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ব্যাংকের পরিচালক থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। মধুমতি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যাংকের পরিচালক শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ও শেখ ফজলে নূর তাপস বোর্ড সভায় অংশ নিচ্ছেন না। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পরিচালক পরপর তিনটি সভায় বা তিন মাস অনুপস্থিত থাকলে তার পদ বাতিল হওয়ার কথা। দুই পরিচালক ছুটির আবেদন ই-মেইল ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠান। কখনো কখনো ছুটির আবেদন ছাড়াই চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর তাদের ছুটি বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবেই তারা এখনো পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন। মূলত এই সহায়তার পেছনে রয়েছে সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর সম্পর্কে শেখ ফজলে নূর তাপসের স্ত্রীর বোনজামাই। এ বিষয়ে মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীরের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘নিয়ম ভেঙে কেউ পরিচালক পদে রয়েছেন, এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এছাড়াও ঋণখেলাপির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো ঋণখেলাপি দেশের কোনো ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারেন না। তবে কেউ হত্যা মামলার আসামি অভিযুক্ত হলেও চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত পরিচালক পদে থাকতে পারেন।’
ঋণখেলাপি হয়েও ব্যাংকের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর :
খোদ মধুমতির চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীরের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, হুমায়ূন কবীর একটি নামমাত্র কোম্পানির মাধ্যমে শত কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করেন, যা পরিশোধ করা হয়নি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও, বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করবে বলে জানা গেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ঋণখেলাপি কেউ ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন না। কিন্তু পরিচালক পদে থাকা কেউ ঋণখেলাপি হলে তাকে অপসারণ করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য খেলাপি ঋণ নিয়মিত হলে তিনি আবার পরিচালক হতে পারবেন। তবে কেউ ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে খেলাপি থেকে অব্যাহতির পাঁচ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত আর পরিচালক হতে পারবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তথ্য অনুযায়ী, হুমায়ূন কবীরের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নর্দান হ্যাচারির অনুকূলে এনআরবিসি ব্যাংকে বর্তমানে প্রায় ১১৩ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। আর উত্তরা ফাইন্যান্সে একই প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ প্রায় ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা রয়েছে। এনআরবিসি ব্যাংক গত জুলাই মাসে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৭ ধারায় নোটিশ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিষয়টি জানিয়েছে। নর্দান হ্যাচারির পরিচালক হুমায়ূন কবীর। একই সঙ্গে ঋণের গ্যারান্টারও তিনি।
এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো পরিচালক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন এবং দুই মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও ঋণ বা কিস্তি পরিশোধ না করেন, তবে তার পরিচালক পদ শূন্য হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই নোটিশ জারি করে ঋণ পরিশোধের নির্দেশ দিতে পারে।
সূত্র বলছে, হুমায়ূন কবীর মধুমতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ব্যাংকটির বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের ৯১তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর। এ সময় পর্ষদ সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, নিমাই কুমার সাহা, সালাউদ্দিন আলমগীর, মোস্তফা কামাল, তানজিমা বিনতে মোস্তফা, সুলতানা জাহান, এ মান্নান খান, তানভীর আহমেদ মোস্তফা ও মো. মাহবুবুর রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এবং ব্যাংকের এমডি ও সিইও মো. শফিউল আজম উপস্থিত ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকের এমডি শফিউল আজম চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীরের স্কুলবন্ধু।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ‘প্রধান সমন্বয়ক তাপস এখনো পরিচালক :
মধুমতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের আরেক সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়ের করা এই মামলায় তার এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৫৩৯ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, ২৭ ব্যাংক হিসাবে ৫৩৮ কোটি টাকা ও ৫ লাখ ডলারের বেশি অর্থ সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী আফরিন তাপসের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ, ৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি ৮৯ লাখ ও ৩ লাখ ৯৫ হাজার ডলারের অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২১ আসামির মধ্যে শেখ ফজলে নূর তাপসের নামও আছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো- পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘প্রধান সমন্বয়কের’ ভূমিকা পালন করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সবুজ সংকেত’ থাকার পাশাপাশি সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ‘সরাসরি জড়িত থাকার শক্তিশালী’ প্রমাণ পাওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে এ বিষয়ক জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে। গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তদন্ত কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান এবং কমিশনের আরেক সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার এসব তথ্য দেন। ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তাপসের শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৫০০টি।
শেয়ারহোল্ডার তালিকাতেও আওয়ামী লীগের ছড়াছড়ি :
পরিচালনা পর্ষদের বাইরেও শেখ পরিবারের আরও সদস্য এবং আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মধুমতি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন গত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছেন গত আওয়ামী সরকারের সাবেক পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তার বিরুদ্ধেও অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। মধুমতি ব্যাংকের স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হিসেবে নাম আছে শেখ হাসিনার আরেক মামাত ভাইয়ের ছেলে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের। সার্বিকভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ঋণখেলাপি এবং গুরুতর আর্থিক অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের উপস্থিতি ব্যাংকিং খাতের সুশাসন এবং নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্য পরিচালকদের বিরুদ্ধেও ঋণখেলাপি ও হত্যা মামলা :
ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের পক্ষে প্রচার চালানোয় সহযোগিতার অভিযোগে একাত্তর টেলিভিশন ও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালসহ দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া মোস্তফা কামালের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ২৭ মে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
এ মান্নান খান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) একজন ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। তিনি বিআইএফসি থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিআইএফসি থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন। এ মান্নান খান ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং মধুমতি ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ইমরান হোসেন নামের এক তরুণকে হত্যার মামলায় ২৯৭ জনকে আসামি করা হয়। চলতি বছর ইমরানের মা কোহিনূর আক্তার বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় এ মামলা করেন। এ হত্যা মামলায় সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলকে আসামি করা হয়েছে।
ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে মধুমতি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার পর রাজনৈতিক কিছু ব্যক্তির পাশাপাশি ব্যাংকটির উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত হয় মেঘনা গ্রুপ, লাবিব গ্রুপ ও শারমিন গ্রুপ।
ব্যাংকটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১১ কোটি টাকা। আর গত বছর শেষে ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৬৩ কোটি টাকায়। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১৫৩ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। ব্যাংকটির তহবিল খরচ ও আয়ের বিপরীতে খরচও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
গত বছরে নিট মুনাফা করেছে ১২৬ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংকের তথ্য মতে, সারা দেশে ব্যাংকটির শাখা রয়েছে ৫২টি, এটিএম রয়েছে ৪৭টি ও এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ৬৪৩টি। ব্যাংকটির কর্মী সংখ্যা ৭৬০। ২০২৪ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইয়েলো জোনে থাকা ২৯টি ব্যাংকের মধ্যে মধুমতি ছিল অন্যতম। জানতে চাইলে মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজম মিটিংয়ে আছি বলে ফোন কেটে দেন।

