গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হওয়ার কারণে বাড়ানো হলো ভোটের সময়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সাধারণত সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। কিন্তু এবার সকাল সাড়ে ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনের তপশিল ৮ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে যেকোনো দিন ঘোষণার লক্ষ্যে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে নির্বাচনি কর্মকর্তা হিসেবে ইসলামী ব্যাংকসহ কোনো সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা কাউকে বিবেচনা করা হচ্ছে না। নির্বাচনের তপশিলসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন প্রধান কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ পাঁচ নির্বাচন কমিশনার।
গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশনের দশম কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকালে আধা ঘণ্টা এবং বিকেলে আধা ঘণ্টা বাড়বে। অর্থাৎ এখন ভোট শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।’ তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে একটি পরিপত্র এ সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া হবে। এটার আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। যে কেন্দ্রে যে ধরনের ফোর্স ডেপ্লয় (মোতায়েন) করা দরকার, সেটা করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে একটা সেন্ট্রাল মনিটরিং সেল স্থাপিত হবে, যেখানে সব বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের সংস্থার প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এই সেল থেকে যেকোনো অপতথ্য প্রতিরোধ করা হবে। যদিও মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য নিজ নিজ বাহিনী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সক্ষমতা আছে, বিষয়টি তারা দেখবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে আমরা বেসরকারি যে ব্যাংকগুলো আছে, সেগুলো আপাতত বিবেচনায় নিচ্ছি না। এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা রিজার্ভে থাকবেন। একান্ত প্রয়োজন না হলে তাদের নেওয়া হবে না।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এ দুই ভোট আয়োজন সফল করতে সংস্থাটি একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে জানিয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারের বিষয়ে মাঠ পর্যায় থেকে যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, সেটা নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি ব্যাংকের যারা কর্মকর্তা আছেন, তাদের আমরা এই তালিকায় সংযুক্ত করব।’
সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ পাঁচ নির্বাচন কমিশনার।
এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেছেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি সঠিক ও সুন্দরভাবে এগোচ্ছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও একই দিনে গণভোট আয়োজনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
প্রস্তুতিকালে ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও ধন্যবাদ জানান তারা।
সিইসি বলেন, ইতিমধ্যে নাগরিকেরা নির্বাচনি কর্মকা-ে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যা দেশে নির্বাচনি আমেজ সৃষ্টি করেছে।
এ সময় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে সরকার। তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে আপনারা (ইসি) চালকের আসনে আছেন। আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতিকে আমরা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছি।’
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

