শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম

‘বাংলাদেশের উচিত শক্তিশালী আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা’ 

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অ্যান্টিভাইরাস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাস্পারস্কি। বিগত প্রায় দুই দশক বাংলাদেশেও কার্যক্রম রয়েছে রাশিয়ার মস্কোভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটির। ক্যাস্পারস্কির মতে, বাংলাদেশের উচিত এসএমই উপযোগী সমন্বিত সাইবার নিরাপত্তা সমাধান গ্রহণ করা এবং ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ফাইন্যান্স খাতের সুরক্ষায় শক্তিশালী আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। বাংলাদেশকে নিজেদের জন্য সম্ভাবনাময় এবং কৌশলগত বাজার হিসেবেও মূল্যায়ন করে প্রতিষ্ঠানটি। ক্যাস্পারস্কির হয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া ইমার্জিং দেশগুলোর হেড অব সেলস স্যাম ইয়ান। সম্প্রতি রাশিয়ায় ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল-২০২৫’ এ অংশগ্রহণকালে এই সাক্ষাৎকার নেন রূপালী বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাওন সোলায়মান

বর্তমান সময়কালে আপনি কীভাবে সাইবার জগতের দুর্বলতাকে মূল্যায়ন করবেন?

স্যাম ইয়ান: আজ আমরা বিশ্বব্যাপী দ্রুত পরিবর্তনশীল হুমকিপূর্ণ পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছি। ক্যাস্পারস্কি প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিকর ফাইল শনাক্ত করছে তার সংখ্যা থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ২০২৪ সালে ক্যাস্পারস্কির শনাক্তকরণ ব্যবস্থা প্রতিদিন গড়ে চার লাখ ৬৭ হাজার ক্ষতিকর ফাইল আবিষ্কার করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। এই ক্রমবর্ধমান হুমকির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে মূলত নতুন ও উদীয়মান প্রযুক্তির প্রতি মানুষের আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে হামলাকারীদের সক্রিয় প্রচেষ্টার কারণে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক সেবার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা। সাইবার অপরাধীরা এখন এআই সহকারী বা এআই-সম্পর্কিত থিম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলছে কিংবা নিজেদের আক্রমণকে স্বয়ংক্রিয় ও আরও ব্যাপক করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

অন্যদিকে, সাইবার নিরাপত্তা শিল্পও ক্রমাগত উন্নতি করছে- নতুন প্রযুক্তি ও এআই-চালিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে নিরাপত্তা জোরদার করছে। ফলে এটি এখন একপ্রকার ‘বিড়াল-ইঁদুরের খেলা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যেমন প্রতিনিয়ত নতুন ধরনের হুমকি শনাক্ত করছি, তেমনি হামলাকারীরাও নতুন কৌশল বের করছে। তবে ব্যক্তি ব্যবহারকারী ও প্রতিষ্ঠান যদি নির্ভরযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা সমাধান গ্রহণ করে, তাহলে তারা এসব উদীয়মান ঝুঁকির বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করতে পারবে।

ক্যাস্পারস্কির বাজার হিসেবে বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

স্যাম ইয়ান: ক্যাস্পারস্কি বাংলাদেশকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি সম্ভাবনাময় ও কৌশলগত বাজার হিসেবে দেখে। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পুরো অঞ্চলে সফল অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছি, নির্দিষ্ট শিল্প খাত ও ব্যবসা বিভাগের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা প্রদান করে আসছি। এ অভিজ্ঞতাই আমাদেরকে বাংলাদেশের গ্রাহকদের প্রয়োজন আরও ভালোভাবে পূরণ করতে সহায়তা করবে। বর্তমানে বাংলাদেশ দ্রুত ডিজিটাল প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) বিকাশে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই উদ্যোগ যেমন নতুন সুযোগ তৈরি করছে, তেমনি আনছে নতুন চ্যালেঞ্জও। একদিকে ডিজিটাল সেবার ব্যবহার বাড়ছে, অন্যদিকে ফিশিং, মোবাইল ম্যালওয়্যার ও আর্থিক প্রতারণা-এর মতো ঝুঁকি বাড়ছে। তাই বাংলাদেশের উচিত এসএমই উপযোগী সমন্বিত সাইবার নিরাপত্তা সমাধান গ্রহণ করা এবং ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ফাইন্যান্স খাতের সুরক্ষায় শক্তিশালী আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

বাংলাদেশে ক্যাস্পারস্কির ব্যবহারকারীর সংখ্যা বা ব্যবসার আকার কেমন?

স্যাম ইয়ান: ক্যাস্পারস্কি বাংলাদেশের বাজারে বি-টু-বি (বিজনেস টু বিজনেস) এবং বি-টু-সি (বিজনেস টু কনসিউমার) উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয়ভাবে উপস্থিত রয়েছে এবং বিভিন্ন শিল্পখাতে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে। আমরা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসা বাড়াচ্ছি, বিশেষ করে বিটুবি বিক্রয় খাতে, যা ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশে ক্যাস্পারস্কির সরাসরি কোনো অফিস নেই। ভবিষ্যতে অফিস এখানে চালুর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

স্যাম ইয়ান: বর্তমান পর্যায়ে বাংলাদেশে কোনো নিজস্ব অফিস খোলার পরিকল্পনা নেই। তবে দেশটি আমাদের এশিয়া এমার্জিং কান্ট্রিজ ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে আমাদের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে, যেখানে অফিস ও ট্রান্সপারেন্সি সেন্টার রয়েছে, যা আমাদেরকে বাংলাদেশের গ্রাহকদের চাহিদা দক্ষতার সঙ্গে পূরণ করতে সহায়তা করে। 

বাংলাদেশের বর্তমান সাইবার অবস্থা কেমন? তারা কি বিদেশি সাইবার হামলার বিরুদ্ধে যথেষ্ট নিরাপদ ও প্রস্তুত?

স্যাম ইয়ান: ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ক্যাস্পারস্কি ৬০ লাখেরও বেশি ওয়েবভিত্তিক আক্রমণ এবং এক কোটি ৫০ লাখের বেশি ডিভাইস ভিত্তিক হুমকি শনাক্ত করেছে, যা ব্যক্তি ব্যবহারকারী ও প্রতিষ্ঠান উভয়কেই লক্ষ্যবস্তু করেছে। যদিও ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে ওয়েব হুমকি কিছুটা কমেছে। তবুও ৯৭ হাজারের বেশি পাসওয়ার্ড চুরির প্রচেষ্টা শনাক্ত করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।

আমাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে র‌্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত ব্যবহারকারীর অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ছিল। এই ধরনের হুমকি শুধু সাময়িক ব্যাঘাত ঘটায় না; এগুলো সেবা ব্যাহত করতে পারে, প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে পারে, আর্থিক ক্ষতি করতে পারে, এমনকি বিনিয়োগকারীর আস্থাকেও নষ্ট করতে পারে।

এর বাইরে, বাংলাদেশ মিস্টেরিয়াস এলিফ্যান্ট, লাজারাস, ও সাইডউইন্ডারের মতো উন্নত স্থায়ী হুমকি (এপিটি) গ্রুপগুলোর টার্গেটে রয়েছে, যারা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করছে। বাংলাদেশের দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তর অব্যাহত রাখতে হলে, দেশের জন্য বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, হুমকি-বুদ্ধিমত্তা (থ্রেট ইন্টেলিজেস্ট) ভাগাভাগি এবং বাধ্যতামূলক ব্যাকআপ ও পুনরুদ্ধার নীতি অপরিহার্য। এগুলো ব্যবসার ধারাবাহিকতা ও দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সাইবার আক্রমণ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার যদি ক্যাস্পারস্কির সহায়তা চায়, আপনারা কি সহযোগিতা করবেন?

স্যাম ইয়ান: বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাস্পারস্কি ইন্টারপোলসহ বিশ্বের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। আমরা আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধ তদন্তে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও তথ্য সরবরাহ করি। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাস্পারস্কি ‘অপারেশন সেরেনগেটি ২.০’-তে অংশ নেয়, যেখানে আমরা তদন্তাধীন হুমকি সম্পর্কিত থ্রেট ইন্টেলিজেন্স ডেটা ও ইনডিকেটর অব কম্প্রোমাইজ ভাগাভাগি করেছি। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট যে, আমরা সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করি এবং উৎস বা উদ্দেশ্য নির্বিশেষে সকল প্রকার সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে ব্যবহারকারী ও প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দিতে বদ্ধপরিকর।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। অনেক বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য লাইসেন্সে ছাড় দেয়। ক্যাস্পারস্কি কি এমন কোনো উদ্যোগ বাংলাদেশে নিতে চায়?

স্যাম ইয়ান: ক্যাস্পারস্কি বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে এবং শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল নির্ভরতা নিয়ন্ত্রণ ও সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলার দক্ষতা গঠনে শিক্ষা উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। ২০২৫ সালের মে মাসে ক্যাস্পারস্কি বাংলাদেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রিফ্লেকটিভ টিনস এর সঙ্গে অংশীদার হয়ে ‘ইন্ট্রোডাকটরি সাইবারসিকিউরিটি’ নামে একটি অনলাইন সেশন আয়োজন করে, যেখানে ক্যাস্পারস্কির বিশেষজ্ঞরা তরুণদের তথ্য নিরাপত্তা বিষয়ে জ্ঞান দেন।

এ ছাড়া ক্যাস্পারস্কির একটি বৈশ্বিক শিক্ষা অংশীদারিত্ব কর্মসূচি রয়েছে ‘ক্যাস্পারস্কি একাডেমি অ্যালায়েন্স’ যেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও অংশ নিতে পারে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে আধুনিক জ্ঞান ও ক্যাস্পারস্কির প্রযুক্তি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন কোর্স, বক্তৃতা, প্রশিক্ষণ এবং পণ্যে ছাড়ের সুবিধা প্রদান করা হয়।

ক্যাস্পারস্কি এবং স্যাম ইয়ান সম্পর্কে:

১৯৯৭ সালে রাশিয়ার মস্কোতে ইউজিন ক্যাস্পারস্কি প্রতিষ্ঠা করেন বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ক্যাস্পারস্কি’। বর্তমানে ২০০টিরও বেশি দেশে এর কার্যক্রম রয়েছে এবং রাশিয়ার বাইরে সুইজারল্যান্ডেও এর সদরদপ্তর রয়েছে। অ্যান্টিভাইরাস এবং সাইবার সুরক্ষা সমাধানের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত ক্যাস্পারস্কি। স্যাম ইয়ান কাসপারস্কির এশিয়া এমার্জিং কান্ট্রিজ অঞ্চলের হেড অব সেলস। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রযুক্তি ও বিক্রয় নেতৃত্বে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সাইবার নিরাপত্তা, এন্টারপ্রাইজ অবকাঠামো ও কমপ্লায়েন্স সফটওয়্যারে ১৮ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্যাম এইচপি, আইবিএম, সান মাইক্রোসিস্টেমস, ওরাকল, ওকটাসহ শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন।

Link copied!