ভেনেজুয়েলায় সরকার উৎখাতে মার্কিন ষড়যন্ত্র নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে ক্যারিবীয় সাগরে নিজের সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করছে ওয়াশিংটন। এরই অংশ হিসেবে লাতিন আমেরিকা অভিমুখে বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ লাতিন আমেরিকায় বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ও এর সঙ্গে স্ট্রাইক গ্রুপ হিসেবে পাঁচটি ডেস্ট্রয়ার মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র সিন পারনেল বলেন, ‘সাউদার্ন কমান্ড এলাকায় (দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল) মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি এবং পশ্চিম গোলার্ধে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত ব্যক্তি ও কার্যকলাপ শনাক্ত, পর্যবেক্ষণ ও প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতাকে আরও বাড়াবে।’
তবে নতুন করে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত এ অঞ্চলে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান লড়াইয়ের ঘোষিত লক্ষ্যের বাইরেও সামরিক শক্তি জোরদার করার বিষয়টি সামনে এনেছে। এমন এক সময়ে এ ঘোষণা এল, যখন দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের রোষানলে থাকা মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমেই কঠোর অবস্থান নিচ্ছে ওয়াশিংটন।
ওই অঞ্চলে এরই মধ্যে আটটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রয়েছেন ছয় হাজার নাবিক ও মেরিন সেনা। এখন এ বহরে যুক্ত হচ্ছে ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ও পাঁচটি ডেস্ট্রয়ার। সঙ্গে যুক্ত হবেন অতিরিক্ত সাড়ে চার হাজার কর্মী।
রণতরীটি এখন ভূমধ্যসাগরে রয়েছে। কবে নাগাদ সেটি লাতিন আমেরিকায় পৌঁছাবে, তা স্পষ্ট জানানো হয়নি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবারই ভূমধ্যসাগর থেকে লাতিন আমেরিকা অভিমুখে রওনা দিয়েছে ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি ৯০টি পর্যন্ত যুদ্ধবিমান বহন করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য তিনি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে অনুমোদন দিয়েছেন। তাঁর এ নির্দেশের ফলে শিগগিরই দেশটির ভূখণ্ডে হামলা হতে পারে—এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধে জড়ানোর নীলনকশা করছে’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, তারা (ট্রাম্প প্রশাসন) একটি নতুন যুদ্ধের নীলনকশা করছে। তারা আর কখনো যুদ্ধে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন তারাই একটি যুদ্ধের নীলনকশা আঁকছে।
এদিকে ক্যারিবীয় সাগরে কথিত এক মাদকবাহী নৌযানে হামলার কথা জানিয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এতে সন্দেহভাজন ছয় মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। এ অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ হামলা চালানোর কথা জানানো হয়।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে কথিত মাদকবাহী নৌযানের ওপর মোট ১০টি হামলা চালাল। এসব হামলায় প্রায় ৪০ জন নিহত হয়েছেন। পেন্টাগন এ নিয়ে খুব সামান্য তথ্য দিয়েছে। তবে জানিয়েছে, এসব হামলার কিছু ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি চালানো হয়েছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন