ইস্টার্ন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি)-এর পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক কয়েক দিনে প্রায় ২ লাখ মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য ও আন্তর্জাতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, রওয়ান্ডা সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩ দক্ষিণ কিভু প্রদেশের উভিরা শহরের আশেপাশে হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে এম২৩ বিদ্রোহীরা উভিরার উপকণ্ঠে প্রবেশ করেছে। এই নতুন আক্রমণে কমপক্ষে ৭৪ জন নিহত হয়েছেন।
এই হামলা এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন মাত্র কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ডিআরসি ও রওয়ান্ডার প্রেসিডেন্টদের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যদিও ওই চুক্তিতে বিদ্রোহীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং তারা আলাদাভাবে ডিআরসির সঙ্গে আলোচনা করছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী, রওয়ান্ডাকে সমস্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন বন্ধ করতে হবে।
আল জাজিরার রিপোর্টার আলেইন উয়াকানি জানিয়েছেন, উভিরা কেবল একটি সামরিক কেন্দ্রই নয়, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। জানুয়ারিতে যখন সরকারি বাহিনী বুকাভু শহর থেকে সরে যায়, তখন তারা উভিরায় পুনর্গঠন করে।
তিনি আরও জানান, এটি সরকারের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল, যেখান থেকে তারা পুনরায় নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছিল। এছাড়া তারা চাইছিল বিদ্রোহীদের উভিরা থেকে বের করতে।
উয়াকানি আর জানান, বর্তমানে ডিআরসি সেনাবাহিনী শহর থেকে সরে গেছে, এবং অনেক সৈনিক তানগানাইকা প্রদেশের দিকে নৌকায় চলে গেছেন । সকালের দিকে শহরে গুলির শব্দ শোনা গেছে এবং সেনারা গভর্নরের কার্যালয় লুট করেছে।
উভিরার গুরুত্ব আরও বেশি, কারণ এটি বুরুন্ডির সীমান্তে অবস্থিত, এবং দুই বছর ধরে বুরুন্ডি সেনাবাহিনী ডিআরসিকে সমর্থন করছে।
বিদ্রোহীদের অগ্রগতি ও নাগরিকদের আতঙ্ক
উভিরার উত্তরের গ্রামগুলোতে এম২৩ বিদ্রোহীরা ডিআরসি সেনা ও স্থানীয় গ্রুপ ওয়াজারেন্ডো-র সঙ্গে লড়াই করছে। উভিরার সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি মারাফিকি মাসিমাঙ্গো জানিয়েছেন, বিদ্রোহীরা দক্ষিণ দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছে।
এক সিনিয়র কঙ্গোলিজ সেনা কর্মকর্তা এপিএ সংবাদ সংস্থাকে নিশ্চিত করেছেন যে, সৈনিকরা বিদ্রোহীদের হামলা থেকে বাঁচতে দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে বুরুন্ডির দিকে সরে যাচ্ছেন।
এদিকে, অ্যালায়েন্স ফ্ল্যুভ কঙ্গো (AFC) বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা কর্নেইল নাঙ্গা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শহর ছেড়ে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আপনারা কঙ্গোলিজ… এবং ওয়াজারেন্ডো সৈনিক। উভিরা ছেড়ে পালাবেন না। আমরা আপনাদের মুক্ত করার জন্য আসছি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক চাপ
ওয়াশিংটন ডিসিতে আন্তর্জাতিক মনিটরিং গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল কন্টাক্ট গ্রুপ ফর দ্য গ্রেট লেকস (ICG) এই নতুন সহিংসতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গ্রুপটি জানিয়েছে, এম২৩ বিদ্রোহীদের নতুন হামলা সম্পূর্ণ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
তবে এম২৩ নেতা বার্ত্রান্ড বিসিমওয়া কাতার-নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনায় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং কঙ্গসাকে আলোচনার টেবিলে আসতে বলছেন।
রওয়ান্ডা সরকার ডিআরসিতে বিদ্রোহীদের সমর্থন করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের মতে রওয়ান্ডার সমর্থনের প্রমাণ স্পষ্ট। এই নতুন সহিংসতার আগে থেকেই সংঘর্ষে প্রায় ১.২ মিলিয়ন মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।
ডিআরসি প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তশিসেকেদি সোমবার সংসদে বক্তব্যে রওয়ান্ডার অব্যাহত লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং উভয় দেশের সঙ্গে কাজ করছে।
সূত্র : আল জাজিরা




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন