মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৫, ১২:২৯ পিএম

আওয়ামী লীগ ও শমীপন্থিদের পুনর্বাসনে ‍‍‘টিম ইউনাইটেড‍‍’

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৫, ১২:২৯ পিএম

আওয়ামী লীগ ও শমীপন্থিদের পুনর্বাসনে ‍‍‘টিম ইউনাইটেড‍‍’

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) ২০২৫-২৭ মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদের (ইসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ মে। ১১টি পদের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৬ জন প্রার্থী।

নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে একাধিক প্যানেল গঠিত হয়েছে। তেমনি এক প্যানেল ‘টিম ইউনাইটেড’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং ই-ক্যাবের সাবেক সভাপতি শমী কায়সারপন্থিদের পুনর্বাসনের। পাশাপাশি সরাসরি ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন, এমন ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন ‘টিম ইউনাইটেড’ প্যানেলে। এর মাধ্যমে ই-ক্যাবকে ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যমুক্ত করার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ সদস্যরা। তবে অভিযুক্তদের আওয়ামী বা শমী কায়সারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে মানতে নারাজ টিম ইউনাইটেড প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিনের স্ত্রী ও এজিউর কুইজিনের প্রধান নির্বাহী জান্নাতুল হক শাপলা।
 
গত শুক্রবার জান্নাতুল হক শাপলার নেতৃত্বে নিজেদের প্যানেল ঘোষণা করে টিম ইউনাইটেড। এই প্যানেলে শাপলার সঙ্গে আছেন ডায়াবেটিস স্টোর লিমিটেডের মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, পার্পেল আইটি লিমিটেডের ছালেহ আহমদ, নিজল ক্রিয়েটিভের আবু সুফিয়ান নিলাভ ভূইয়া, বিক্রয় বাজার ডটকমের এস এম নুরুন নবী, ক্লিন ফোর্স লিমিটেডের মো. তাসদীখ হাবীব, ক্ষেত খামারের মো. নুর ইসলাম বাবু, নওরিনস মিররের হোসনে আরা নূরী, ওয়ান মল লিমিটেডের সাইফুর রহমান, এক্সপ্রেস ইন টাউন লিমিটেডের সৈয়দ উছওয়াত ইমাম এবং ইনছেপশন টেকনোলজিস লিমিটেডের মোহাম্মদ এমরান। 

প্যানেল ঘোষণার পর থেকেই সাধারণ সদস্যদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সঞ্চার হয়। সাধারণ সদস্যরা বলছেন, এই প্যানেলে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং নানা অনিয়মে শমী কায়সারের সহযোগী ছিলেন, এমন প্রার্থীরা রয়েছে। পাশাপাশি প্যানেলের নেতৃত্ব দানকারী জান্নাতুল শাপলাসহ একাধিক প্রার্থী রয়েছেন যাদের সরাসরি কোনো ই-কমার্স ব্যবসা নেই। 

ই-ক্যাবে জান্নাতুল শাপলা নিবন্ধন নিয়েছেন ‘এজিউর কুইজিন’ নামক একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসার মাধ্যমে। সূত্র বলছে, ই-ক্যাবের সাবেক বিতর্কিত পরিচালক নাসিমা আক্তার নিশার রেফারেন্সে সদস্যপদ পেয়েছিলেন তিনি। শাপলার রেস্টুরেন্টের সরাসরি কোনো ই-কমার্স বাণিজ্য নেই। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটির ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটেও খাবার সরাসরি অর্ডার করার কোনো ব্যবস্থা নেই।

বিষয়টি স্বীকার করে রূপালী বাংলাদেশকে জান্নাতুল শাপলা বলেন, ‘ফুডপান্ডা বা পাঠাও-এর মাধ্যমে গ্রাহক আমাদের রেস্টুরেন্টের খাবার অর্ডার করতে পারেন। এর বাইরে ফোনে অর্ডার নেই।’ তবে ই-ক্যাবের সদস্য পদ পাওয়ার জন্য ফেসবুক পেজ অথবা ওয়েবসাইট থাকার মতো শর্ত পূরণ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। অথচ শমী কায়সারের সরাসরি ই-কমার্স ব্যবসা না থাকার কারণে বিভিন্ন সময় তার সমালোচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই একই পথে যেন হাঁটছে জান্নাতুল শাপলা এবং তার প্যানেল ‘টিম ইউনাইটেড’।  

এই প্যানেলের আরেক সদস্য মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন। ই-ক্যাব দুর্নীতির মূলহোতা শমী কায়সারের খুবই আস্থাভাজন সাহাব উদ্দিন দুই দফা শমী নেতৃত্বাধীন ইসিতে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময়েও ই-ক্যাব কমিটিতে ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের পতনের পর ই-ক্যাবের ওই কমিটিকে পদত্যাগে বাধ্য করেন সাধারণ ই-কমার্স ব্যবসায়ী ও ছাত্র-জনতা। সেই কমিটির পরিচালক থাকা সাহাব উদ্দিন আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আসন্ন নির্বাচনে। 

এ বিষয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডালের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জিয়া আশরাফ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সবারই নির্বাচন করার অধিকার আছে। তবে যাদের সদস্যরা নামিয়ে দেওয়াতে প্রশাসক বসাতে হলো, সেই তাদের থেকে কেউ যদি আবার নির্বাচন করেন, সেটা কতটা নৈতিক, সে বিষয়টি ভাবতে হবে।’  
   
নিজল ক্রিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আবু সুফিয়ান নিলাভ ভূইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবারের ই-ক্যাব নির্বাচনে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির মূল কার্যক্রম ছবি, ভিডিও তথা ভিজুয়াল আর্টস নিয়ে। এমন প্রতিষ্ঠান নিয়ে ই-ক্যাবের সদস্যপদ পাওয়া এবং নির্বাচন করা যায় কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে আবু সুফিয়ান বলেন, ‘ই-কমার্স ব্যবসার প্রধান জিনিস হচ্ছে কনটেন্ট যেখানে টেক্সট, ছবি এবং ভিডিও থাকে। একজন গ্রাহক পণ্য সম্পর্কে প্রথম ধারণা পান ছবি বা ভিডিও থেকে। নিজল ক্রিয়েটিভ সেগুলোসহ ভিজুয়াল আর্টস সেবা দেয়। আমাদের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট রয়েছে। আমাদের ওয়েবসাইটে পেমেন্টও করা যায়। তাই আমরা যথাযথভাবেই সদস্যপদ পেয়েছি এবং নির্বাচন করছি।’ 

জান্নাতুল শাপলার পাশাপাশি ‘টিম ইউনাইটেড’ প্যানেলের আরেক নারী প্রার্থী নওরিনস মিররের হোসনে আরা নূরী ওরফে নওরিন। আওয়ামী লীগের সময়ে শমী কায়সার এবং নাসিমা আক্তার নিশার বদৌলতে ই-ক্যাবের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী সদস্যদের একজন এই নওরিন। ২০২২ সালের ই-ক্যাব নির্বাচনে শমী কায়সার নেতৃত্বাধীন প্যানেল ‘অগ্রগামী’র প্রচারের গুরুদায়িত্বে ছিলেন তিনি। নির্বাচনের পর নিজের পরিশ্রমের ভরপুর পুরস্কার পেয়েছিলেন নওরিন। শমী কায়সার নেতৃত্বাধীন কমিটিতে মেম্বার অ্যাফেয়ার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। 

এর আগের মেয়াদেও নওরিনকে করপোরেট অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক স্ট্যাডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান করেছিলেন শমী। গাড়িবাড়ির মালিক এবং বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই তথাকথিত নারী উদ্যোক্তা শমী-নিশার আশীর্বাদে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘আইডিয়া’ প্রকল্প থেকে নিয়েছিলেন সরকারি অনুদানও। সেই নওরিন এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপিপন্থি প্যানেলের হয়ে। এই প্যানেলে আরও আছেন শমী কায়সার নেতৃত্বাধীন ই-ক্যাবের ইয়ুথ ফোরামের একসময়ের প্রেসিডেন্ট তাসদীখ হাবীব।

সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ, আওয়ামীপন্থি এবং বিতর্কিত শমী কায়সার ঘনিষ্ঠরা আবারও ই-ক্যাবের নিয়ন্ত্রণ নিতে সওয়ার হয়েছেন বিএনপিপন্থি প্যানেল হিসেবে পরিচিত টিম ইউনাইটেড-এ। এজন্য মোটা অঙ্কের লেনদেন হয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। চালডালের জিয়া আশরাফ বলেন, ‘ই-ক্যাবে প্রতিটা সদস্যই গুরুত্বপূর্ণ। সবারই অধিকার আছে মনোনয়ন নেওয়ার। কিন্তু বিতর্কিতদের কোনো প্যানেলে না রাখাই ভালো। আমাদের প্যানেল ‘টিম টাইগার’-এও একজনকে নিয়ে এমন অভিযোগ এসেছিল। তাকে বাদ দিয়েই প্যানেল ঘোষণা করেছি। টিম ইউনাইটেডও এমনটা করতে পারত কিন্তু করেনি। একজন সাধারণ সদস্য হিসেবেও এমনটা অপ্রত্যাশিত। যদিও সবাইকে ‘চেক’ করেই যুক্ত করা হয়েছে বলে তাদের দাবি।’ 

এ বিষয়ে জান্নাতুল হক শাপলা বলেন, ‘ই-ক্যাব একটি পেশাদার সংগঠন, যেখানে গত ১০ বছরে বিভিন্ন সময়ে বহু ব্যক্তি পরিষদে যুক্ত ছিলেন। ২০২২ সালে সদস্যদের ভোটে পরিষদ নির্বাচিত হয়েছেন, সে পরিষদের কোনো সদস্য শুধু দুইজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এভাবে চিন্তা করলে, যারা ভোট দিয়েছেন তাদের ম্যান্ডেন্টকে প্রশ্ন করা হয়। যদি তারা সরাসরি পতিত ফ্যাসিবাদের সঙ্গে বা কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের সঙ্গে নির্বাচনে যেতাম না বা যাব না। ৪০৭টি অ্যাসোসিয়েশনে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ সম্পৃক্ত ছিলেন, সে জন্য তারা কি সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে যাবেন? বিগত পরিষদে ৩৫টি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে প্রায় চারশজন জড়িত ছিলেন। ৫০২ জন ভোটার থেকে এখন চারশজনকে কি বাদ দেওয়া যাবে? ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে বেশির ভাগ কোনো না কোনো কমিটিতে ছিল। কোনো অ্যাসোসিয়েশনে বোর্ডে থাকলে বা কাজ করলে সে সরকারি লোক হয় বলে আমার জানা নেই। 

অবশ্য যে সদস্যদের ভোটকে ম্যান্ডেট হিসবে শাপলা গণ্য করছেন, সেই সদস্যদের বিষয়েই আপত্তি সাধারণ সদস্যদের। অভিযোগ আছে, শমী কায়সার এবং সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ তমাল ভোটব্যাংক বাড়াতে নামে-বেনামে সদস্য বাড়িয়েছিলেন ই-ক্যাবে। ই-ক্যাব নির্বাচনের আগে সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় দেড় হাজার ভোটার ছাঁটাই করা হয় তালিকা থেকে। সরাসরি ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত না থেকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের বিষয়ে শাপলা বলেন, ই-ক্যাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশের যেকোনো বৈধ অনলাইন বা ডিজিটাল ব্যবসা পরিচালনাকারী সদস্য হতে পারে। অনেক সদস্য আছেন যাদের হয়তো ওয়েবসাইট নেই, তবে তারা সফলভাবে ফেসবুক বা অন্য ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবসা চালাচ্ছেন। সংগঠনের নীতিমালা মেনেই তারা এখানে ভোটার ও প্রার্থী হয়েছেন। 
 

Link copied!