আওয়ামী লীগ আমলে ওপরমহলকে খুশি করতে সাজানো হয় অনেক জঙ্গি নাটক। এসব করে পদোন্নতি বাগান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। আবার প্রতিবাদ জানানোয় রোষানলেও পড়েন অনেকে। গুম-খুন সমর্থন না করলেও সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশের বাইরে যেতে পারেননি অনেকে। গত দেড় দশকের গুমের ঘটনা নিয়ে কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাহিনীর ভেতরে দ্বন্দ্ব, যন্ত্রণা ও মতবিরোধ।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের গুলি করে হত্যার পর ক্রসফায়ারে নিহতের দাবি করত বাহিনী। আলামত নষ্ট করতে নদীতে ফেলা হয় অনেক মরদেহ। গুমবিষয়ক কমিশনের দ্বিতীয় প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব ভয়াবহ তথ্য। গুম কমিশনের প্রতিবেদনে কুশীলব হিসেবে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ২৭ জনের নাম উঠে এসেছে।
কমিশন বলছে, গুমের শিকার অনেক ব্যক্তিকে গুলি না করে ইনজেকশন প্রয়োগে হত্যা করা হয়। মরদেহ নিশ্চিহ্ন করতে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ইটের ভাটায়। এ ছাড়া, ট্রেন ও বাসের নিচে ফেলে হত্যার পর সাজানো হয় দুর্ঘটনার নাটক।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, যে বর্ণনাগুলো দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যক্ষদর্শীদের। ওই সব অপারেশনে যারা যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যকার কথা কিন্তু এটা। এগুলো কিন্তু ভুক্তভোগীদের কথা না। ওই সব অপারেশনে যেসব সৈনিক বা জুনিয়র অফিসার ছিলেন, তাদের বক্তব্য এগুলো।
আবার গুমের নির্দেশ অমান্য করায় কিংবা ভুক্তভোগীকে সহায়তা করায় অনেক কর্মকর্তাকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, অনেক অফিসার নিরুপায় ছিলেন, কারণ তাদের বাধ্য করা হয়। তবে যারা কিলিং অপারেশনে জড়িত ছিলেন, তাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করা হতো।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দায়মুক্তির সংস্কৃতি ও কাঠামো এখনো বহাল আছে, যা তদন্তে বাধা তৈরি করছেÑ বলছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জুনিয়র কিছু অফিসারের মধ্যেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ ক্ষোভ ছিল, তারা এটা মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু তারা নিরুপায় ছিলেন। তাদের বাধ্য করা হতো। তারা বাধ্য হয়েছেন, কারণ তাদের চাকরির ব্যাপার আছে, জীবনের নিরাপত্তা আছে, পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও রয়েছে। আমাদের এই রিপোর্টে এগুলো বিস্তারিত উঠে এসেছে।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, পুলিশ-র্যাব-ডিজিএফআইÑ এদের অনেক কর্মকর্তা, অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং সেগুলো যাচাই-বাচাই পর্যায়ে রয়েছে। কমিশন এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ থেকে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :