রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম

ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল নামেই শুধু বিশেষায়িত

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম

ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল নামেই শুধু বিশেষায়িত

দাঁতের চিকিৎসায় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল ঢাকা ডেন্টাল কলেজ মেডিকেল হাসপাতাল। ২শ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন ২ হাজারের বেশি রোগী। প্রায় ৩০ বছর আগের কাঠামো নিয়ে গড়ে তোলা হাসপাতালটিতে পুরোনো যন্ত্রপাতির মাধ্যমেই সেবা দিতে হয় রোগীদের। নেই প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি। একমাত্র এমআরই মেশিনটি নষ্ট ৪ বছর যাবত। দাঁতের অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবার জন্য নেই মাইক্রোভাস্কুলার ও এন্ডোডন্টিক মাইক্রোস্কোপ মেশিন। চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক জনবলের সংকট, যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা এবং স্থানাভাবসহ নানামুখী সমস্যায় হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বেড সংকট, চিকিৎসা সরঞ্জামের স্বল্পতা এবং পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় প্রতিদিন প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজারো রোগী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে অনুমোদিত মোট ৩৯১টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৩০৬ জন। এর মধ্যে ১৩০টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে আছেন ১১৮ জন, ১১৮টি নার্স পদের বিপরীতে ১১২ জন, তৃতীয় শ্রেণির ৫৯টি পদের বিপরীতে আছেন ৪৪ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির ৮৪টি পদের মধ্যে মাত্র ৩৩ জন কর্মরত। আর অবসরজনিত কারণে ৫১টি পদ পুরোপুরি শূন্য। হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসাসেবার জন্য রয়েছে ৭ বেডের আইসিইউ, ১০টি অপারেশন থিয়েটার, আধুনিক ইমপ্লান্ট সেন্টার এবং ওরাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি, কনজারভেটিভ, প্রস্থোডনটিকস, শিশু দন্ত, রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত সেবা। এমআরআই ও সিবিসিটি মেশিন দুটো দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে থাকায় জটিল রোগ নির্ণয়ে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে জরুরি বিভাগ চালু থাকে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু রোগ নির্ণয়ের জন্য সার্বক্ষণিক প্যাথলজি ও রেডিওলজি বিভাগ চালু না থাকায় জরুরি রোগীদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হয় চিকিৎসকদের। জরুরি বিভাগ চালু রাখার জন্যও নেই আলাদা জনবল বা অনুমোদিত পদ। ওএমএস বিভাগের ৮ জন ও মেডিসিন-সার্জারি বিভাগের ৭ জন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করেই চলছে হাসপাতালটির সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা। জরুরি বিভাগে ২টি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও নিযুক্ত নেই কোনো অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক। যা গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। এমনকি আইসিইউতেও নেই অনুমোদিত চিকিৎসক পদ। সংযুক্তিতে কর্মরত ২ জন চিকিৎসকের মাধ্যমে চলছে আইসিইউর সব কার্যক্রম। যা ২৪ ঘণ্টার সেবার জন্য পর্যাপ্ত নয়। হাসপাতালের কনজারভেটিভ বিভাগসহ বিভিন্ন ইউনিটে আধুনিক যন্ত্রপাতিরও অভাব রয়েছে।  অনেক সময় জায়গা সংকুলানের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। 
রাজধানীর কাজলা থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বিপ্রজিত চন্দ বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে দাঁত ও মুখের ক্ষতি হয়েছে। প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এই হাসপাতালে রেফার করেছে। এখানকার ডাক্তাররা অপারেশনের কথা বলেছেন। কিন্তু অ্যানেসথেশিয়ার চিকিৎসক সংকটের কারণে অপারেশনের তারিখ পেতে দেরি হচ্ছে। এদিকে দিন দিন আমার কষ্ট বাড়ছে।
মিরপুর এলাকায় এটি একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এবং এখানে জেনারেল চিকিৎসাসেবা চালু থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে জ¦রে আক্রান্ত রোগীরাও আসছেন চিকিৎসা নিতে। হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে কথা হয় মিরপুর-১২ নম্বর থেকে আসা রোগী আহমেদ উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, একমাত্র ছেলে আহনাফের জ্বর তিন দিন ধরে। ডেঙ্গু নাকি অন্য কোনো ভাইরাসÑ বুঝতে পারছি না। এখানে এসেছি ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা করাব। কিন্তু আউটডোরে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক সংকট যে এত প্রকট, আগে জানতাম না। সকাল ৯টায় এসেছি, এখন বাজে দুপুর ১২টা। এখনো অপেক্ষা করছি। যতদূর জানি, ২টা পর্যন্ত আউটডোর চালু থাকে। এর আগে সিরিয়াল পাব কি না আল্লাহই জানেন। 
শয্যা বা চিকিৎসকের তুলনায় প্রতিদিন এখানে কয়েকগুণ বেশি রোগী আসেন এ কথা স্বীকার করে হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু তৈয়ব মো. আহসান উল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এজন্য ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। সারা দেশ থেকেই আমাদের এখানে রোগী আসে। শুধু দাঁতের বা মুখের চিকিৎসার জন্য যে তা নয়Ñ আমাদের মেডিসন এবং জেনারেল সার্জারি বিভাগও চালু রয়েছে। ফলে এখানে অন্যান্য রোগীও আসে। চাহিদা অনুযায়ী রোগীর সংকুলান করতে আমাদের কষ্ট হয়। তাই ২শ শয্যা থেকে হাসপাতালটিকে ৩শ শয্যায় উন্নীত করা জরুরি। 
তিনি বলেন, ওরাল ক্যানসারসহ মুখগহ্বরের জটিল রোগে আক্রান্তদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কেমোথেরাপি ইউনিট ও অতিরিক্ত অপারেশন থিয়েটার চালু করা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা সেবা চালু থাকলেও কোনো অনুমোদিত পদ না থাকায় আমরা বিদ্যমান চিকিৎসকদের দিয়ে সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।  চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবলের সংকট প্রকট হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জরুরি বিভাগের জায়গাটিও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় জরুরি অপারেশন পরিচালনায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সংযুক্তিতে এনেস্থেসিওলজিস্ট, চিকিৎসক ও নার্সের জরুরিভিত্তিতে পদায়ন হলে ভালো হয়। এ ছাড়াও শূন্য পদগুলো পূরণ করা জরুরি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!