ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানা এলাকায় নিখোঁজ দুই শিশুর মধ্যে সিফাত (১১) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় সিফাতের ঘাড় ভাড়া ছিল।
গতকাল শনিবার সকালে পাঁচবাগ ইউনিয়নের চর শাখচূড়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে সিফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সিফাত একই গ্রামের সৌদি প্রবাসী নূরুল ইসলামের ছেলে।
অপরদিকে একই ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামে শিশু আইমান সাদাবের সন্ধান এখনো মিলেনি। শিশু সাদাব জেলার নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘুরিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আল আমিনের ছেলে। সাদাব তার মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বাস করতেন।
পাগলা থানার ওসি ফেরদৌস আলম শিশু সিফাতের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, নিহত শিশুর বাবা সৌদি প্রবাসী চর শাখচূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সিফাত গত শুক্রবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল। দিনভর তার স্বজনরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন। তবে কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও উদ্ধারে অভিযান চালায়। কিন্তু কোথাও সিফাতের সন্ধান মিলেনি। সকালে একটি পুকুরে সিফাতের মরদেহ ভাসতে দেখে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এদিকে, ফেসবুকে শিশু সিফাতের নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ করে স্বজনরা। এই সুযোগে প্রতারক চক্র অপহরণের কথা বলে নিহত শিশুটির পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের নামে কিছু টাকা আদায়ও করেছে বলেও ধারণা পুলিশের।
নিহত শিশু সিফাতের মা সাবিনা আহাজারি করতে করতে বলেন, তার ছেলেকে খুন করে পুকুরে ফেলা হয়েছে। তাদের কোনো শক্র নেই। একই গ্রামের শহিদুলের বখাটে ছেলে আরমান তার কলেজপড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে বাড়িতে এসে ঝগড়া করে এবং এরপর তাদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। শিশু নিখোঁজের পর থেকে আরমান (২৪) পলাতক।
এদিকে নিখোঁজ আরেক শিশু আইমান সাদাবের বিষয়ে ওসি ফেরদৌস আলম বলেন, নিখোঁজ আইমান নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘুরিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আল আমিনের ছেলে। তিনি সৌদি প্রবাসী হওয়ায় সাদাবকে নিয়ে মা সুমাইয়া বাবার বাড়ি পাগলা থানা এলাকায় বসবাস করতেন।
শিশু সাদাব শুক্রবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল। বাড়ির আশপাশের সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও শিশুটির খোঁজ না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। পরে রাতে দুই দফা একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে সাদাবকে ফেরত দিবে বলে ২৮ হাজার টাকা নেয়। তবে, শিশুকে ফেরত দেয়নি। এরপর থেকে ওই মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে।
নিখোঁজ সাদাবের মা সুমাইয়া আক্তার আহাজারি করে বলেন, থানা পুলিশকে আমার ছেলে নিখোঁজের বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুলিশ শুধু বাড়িতে আসে আর চলে যায়। কিন্তু আমার ছেলের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। আমার ছেলে জীবিত থাকতে ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।
ওসি ফেরদৌস আলম বলেন, শিশু সিফাতের ঘটনা অপহরণ ও মুক্তিপণের কোনো বিষয় নয়। এখানে প্রেমঘটিত বিষয় থাকতে পারে। আমরা প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। এদিকে, শিশু সাদাব নিখোঁজের পর একই নম্বর থেকে দুইবার ফোন করে শিশুকে ফেরত দেবে বলে মুক্তিপণ হিসাবে ২৮ হাজার টাকা নিয়েছে। আমরা তার লোকেশন ট্র্যাক করে তার পরিচয় জানতে পারছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। চেষ্টা করছি যেন সাদাবকে দ্রুত উদ্ধার করা যায়।
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, দুই শিশু একই সময়ে নিখোঁজ হওয়ার পর ঘাড় ভাঙা অবস্থায় পুকুর থেকে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অপর শিশু সাদাবের সন্ধানে কাজ করছে পুলিশ। যে ব্যক্তি অপহরণের নামে মুক্তিপণ নিয়েছে, তার লোকেশন আমরা ট্র্যাক করেছি। সে অনুযায়ী কাজ করছি।
আপনার মতামত লিখুন :