মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:২০ এএম

চাকরিচ্যুত পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রুহানী আত্মগোপনে থেকে রাষ্ট্রবিরোধী

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:২০ এএম

চাকরিচ্যুত পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রুহানী আত্মগোপনে থেকে রাষ্ট্রবিরোধী

পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রুহানী ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ছোট ভাই রুহানী পুলিশের পোশাককে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। বর্তমানে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। ভারতে আত্মগোপনে থেকে অনলাইন-অফলাইনে রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ বাহিনীতে নিজের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তথ্যসন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে রুহানীর বিরুদ্ধে।
গোলাম রুহানীর বড় ভাই হচ্ছে গোলাম রাব্বানী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে রুহানীর চান্স পাওয়াতে মূল ভূমিকা পালন করেন তার বড় ভাই গোলাম রাব্বানীর প্রভাব ও আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা। দ্বিতীয়ত, ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে রুহানী ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ জোনের এসি। ছাত্র-জনতা হত্যা, অত্যাচারে নির্দেশদাতা এবং ফিল্ডে এক্সিকিউট করাতে রুহানীর সরাসরি নির্দেশ, মদদ ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
গোলাম রুহানী ২০২৪-এর ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ডিএমপির রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে তার অধীনে ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। সূত্র মতে, ১১ আগস্টের পর তিনি আর কাজে যোগদান করেননি। গোপনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। যেখানে আগে থেকেই তার ভাই গোলাম রব্বানী আত্মগোপনে ছিলেন। ভাইয়ের সঙ্গে মিলে রাষ্ট্রবিরোধী তিনি নানা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। সাইবার জগতে আওয়ামী লীগ ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার হয়ে সক্রিয় হন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক সহকারী কমিশনার গোলাম রুহানী আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ায় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার হয়ে দমন-পীড়ন ও নির্যাতন এবং দুর্নীতি-অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তির মালিক বনে যান। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ছোট ভাই হওয়ায় এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দল-মত দমন ও নানান অপকর্ম করেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই অনেক স্বৈরাচারের দোসর লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। যার মধ্যে গোলাম রুহানী অন্যতম। আত্মগোপনে থেকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ে যুক্ত থাকেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় একাধিক মামলা হয় গোলাম রুহানীর বিরুদ্ধে। মূলত গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান রুহানী। 
এদিকে, পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রুহানীকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে দেওয়া প্রজ্ঞাপনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার (এসি) মো. গোলাম রুহানীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মো. গোলাম রুহানী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে ১১ আগস্ট ২০২৪ থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ২৩(ছ) ধারায় এটি পলায়ন (ডিসারশান) হিসেবে গণ্য হওয়ায় তাকে ওই দিন থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত থাকা অবস্থায় তিনি বিধি অনুযায়ী ঘোষিত ভাতাপ্রাপ্ত হবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
রুহানীর বিরুদ্ধে বিএনপির কার্যালয়ে তা-ব চালানো এবং বিভিন্ন সময়ে অবৈধ অভিযান পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে। এসব ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আরও জানা গেছে, তিনি মতিঝিল জোনের এসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে তার বড় ভাই গোলাম রাব্বানীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর ঘটনায়ও গোলাম রুহানী বিতর্কিত হন। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি টিএসসি এবং মধুর ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন স্থানে রাব্বানীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন, যা বিধিবহির্ভূত বলে গণ্য করা হয়। এসব ঘটনার পরেও গোলাম রুহানী গত ১১ আগস্ট পর্যন্ত প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক উঠেছে।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী দীর্ঘদিন ধরে নানা অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন, যার মধ্যে ক্যাম্পাসভিত্তিক চাঁদাবাজি এবং নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, তিনি তদবির করে নিজের ছোট ভাই গোলাম রুহানীকে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছেন। এএসপি গোলাম রুহানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার ভাইয়ের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় ভোটারদের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। ডাকসুর ভোটে তিনি প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন বলেও প্রার্থী ও ভোটারদের অভিযোগ ছিল। সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করলেও তৎকালীন পুলিশের শীর্ষকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর রূহানীকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়। তবুও রুহানী কর্মস্থলে যোগদান না করে ভারতে পালিয়ে যান। ২৪ এর খুনি, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন এবং অত্যাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট এই রুহানীকে এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে, তবে গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। পুলিশের ৩৬তম ব্যাচে এএসপি গোলাম রুহানী পতিত স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে পল্টন এলাকায় সে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। রূহানীকে নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে , যেমনÑ সে কি এখনো পুলিশ বাহিনীকে সার্ভ করছে? যদি সে এখনো পুলিশকে সার্ভ করে থাকে, তাকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সময় কি এখনো আসেনি। গণতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনকে তছনছ করে দিয়ে বিপ্লবীদের ভুয়া মামলা-হামলায় ফাঁসানোসহ ঢাকা শহরে যতজন পুলিশ কর্মকর্তা ফ্যাসিস্টদের সাহায্য করেছে, গোলাম রুহানী তাদের মধ্যে প্রথম সারির এবং অন্যতম। ঢাকা শহরে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দমনের লক্ষ্যে চালানো গণহত্যার অন্যতম নায়ক এবং মাস্টারমাইন্ড হিসেবেও পরিচিত রূহানী। 
পুলিশ ক্যাডার  হিসেবে মনোনীত হওয়ার আগে রুহানী ৩৪তম বিসিএসে আনসার ক্যাডার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। গোলাম রুহানীর বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। গোলাম রুহানীর বাবা এম এ রশিদ আজাদ ভূমি মন্ত্রালয়ের অধীনে কারিগরি কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে ফরিদপুরে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি রাজৈর কেজেএস হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। গোলাম রুহানী পারিবারিকভাবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান। মা মরহুমা তাছলিমা বেগম ছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও স্থানীয় ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম সামশুল হক মুন্সীর বড় মেয়ে। মরহুম সামশুল হক মুন্সী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর এবং শেখ পরিবারের একজন অন্যতম সুহৃদ। মাদারীপুর অঞ্চলে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় সামশুল হক মুন্সীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তাছলিমা বেগম ছিলেন রাজৈর কলেজ ছাত্রলীগের সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক (১৯৮৩-১৯৯১)। তিনি নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও এ এলাকায় ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাছলিমা বেগম গত ১৯ জুলাই আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!