ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ গোয়েন্দা তথ্যে রাজনৈতিক পরিচয় যাচাইয়ের বিধান বাতিল হচ্ছে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ০১:৫২ এএম

প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়ার বিষয়গুলো ছাড়াও বাকি বিষয়গুলোর সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়নে ধীরগতি চলছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কিছু কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। অবশ্য এখন তুলনামূলক সহজে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে কাজ চলছে। জনপ্রশাসন ও শাসনকাঠামোয় বড় রকমের পরিবর্তনের সুপারিশগুলো নিয়ে এখনো বড় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নিয়োগ-পদোন্নতিতে রাজনৈতিক যাচাই
দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পুলিশ-গোয়েন্দাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রার্থী ও পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিজের ও তার আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক পরিচয় খোঁজা হয়। এর মাধ্যমে অনেক সময় চাকরির সুপারিশ পেয়েও অনেক প্রার্থীকে ‘বিরূপ মন্তব্যের’ কারণে নিয়োগ দেওয়া হয় না। একই কারণে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি পান না। এ নিয়ে তীব্র আপত্তি থাকলেও সেটি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে।

এমন পরিস্থিতিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুলিশ বা কোনো গোয়েন্দা বিভাগের কাছে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার প্রথা বাতিলের সুপারিশ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কারণ হিসেবে কমিশন বলেছে, এই স্তর থেকেই জনপ্রশাসনে রাজনীতিকীকরণ শুরু হয়।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল, কোনো কর্মচারী যদি কোনো পদে পদোন্নতির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে যান এবং এরপর আর ইনক্রিমেন্ট না পান এবং বিভাগীয় মামলায় গুরুদ-ে দ-িত না হন, তাহলে তাকে দুই বছর পর পরবর্তী বেতন স্কেল দেওয়া।

এ ছাড়া লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল ঘোষিত হওয়ার আগে কোনো প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশন করা যাবে না। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ বিভাগের কাছে শুধু সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা আছে কি না, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন চাইবে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন চাইতে পারে।

এ বিষয়ে সোমবারের সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার বিধান করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া কমিশন বাংলাদেশি নাগরিকদের ‘দ্বৈত নাগরিকত্ব’ ছাড়া আর সব ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বিধান ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।
ইউএনওদের বিষয়ে যা হতে পারে

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের অধীন ন্যস্ত না রেখে তাকে সংরক্ষিত বিষয় যেমনÑ আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে দেখাশোনার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এর উদ্দেশ্য হলো তাকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা। এ ক্ষেত্রে একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের সচিব পদে নিয়োগ করতে বলেছে কমিশন।
এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব বা সচিবদের সমন্বয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি কমিটি গঠন করবে। এই কমিটি কমিশনের ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে।

প্রস্তাবিত ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসের’ বাইরে ৫ শতাংশ পদে সরকার বিশেষ কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক যুগ্ম সচিব বা সংস্থা প্রধান পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি ও আগের অভিজ্ঞতার কথা সভায় আলোচনা হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে বিশেষ কোটায় পার্শ্ব নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের সততা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে বলে আলোচনা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়Ñ এ নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের সমন্বয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি কমিটি করবে। এই কমিটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।

ভূমি রেজিস্ট্রেশন দপ্তর আইন মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করার সুপারিশ শিগগিরই বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে সোমবারের সভায় মতামত দেন আইন ও বিভাগের প্রতিনিধিরা। পরে সভায় আলোচনা হয়, এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।