জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে গতকাল বুধবার ৯ সদস্যবিশিষ্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে সরকার। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) আদেশে গঠিত কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গতকাল মুকিতুল হাসান নামের এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব পদমর্যাদার এক উপকমিশনারকে ‘রাষ্ট্রের গোপন দলিল প্রকাশ করে চাকরির শৃঙ্খলাপরিপন্থি আচরণ করায়’ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘বদলির আদেশ ছিঁড়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ’ করায় ভিন্ন আদেশে আরও ৭ জনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার আগে গত সোমবার ১৪ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। এ নিয়ে কর বিভাগের পাঁচ যুগ্ম কমিশনার ও তিন উপ-কমিশনারসহ মোট ২১ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলো। একই সঙ্গে ‘র্যানডম সিলেকশন’ পদ্ধতিতে গতকাল মোট ১৫ হাজার ৪৯৪টি আয়কর মামলা অডিটের জন্য নির্বাচন করেছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনে দুই দিনে দেশের অর্থনীতিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আইআরডির যুগ্ম সচিব সৈয়দ রবিউল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, এনবিআর, আইআরডি, ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধি হলো গত ২৮ ও ২৯ জুন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অফিস বন্ধ থাকায় রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা। দুই মাসব্যাপী শুল্ক, ভ্যাট ও কর বিভাগের কর্মচারীরা কর্মসূচি পালন করেন। তাদের কর্মসূচিতে সব কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, কাস্টম হাউস, কাস্টম বন্ড কমিশনারেট এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তরসহ অন্য দপ্তর ও কর কার্যালয়ে রাজস্ব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং এ কর্মসূচি পালনের কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম এবং সব স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ক্ষয়ক্ষতিসহ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে হবে। কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাÑ এ দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপর থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারে দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন রাজস্ব পরবর্তী সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারের পর এখন পর্যন্ত তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এনবিআরের ২ জন সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাদের অধিকাংশই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ‘র্যানডম সিলেকশন’ পদ্ধতিতে গতকাল মোট ১৫ হাজার ৪৯৪টি আয়কর মামলা অডিটের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। অডিটের জন্য আয়কর রিটার্ন নির্বাচন পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ‘রিস্ক বেজস অডিট সিলেকশন’ ভিত্তিতে সম্পূর্ণ অটোমেটেড পদ্ধতিতে অডিটের জন্য আয়কর রিটার্ন নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অফলাইনে দাখিলকৃত সব পেপার রিটার্নের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ডাটাবেজে এন্ট্রি করার জন্য আরও কিছু দিন সময় প্রয়োজন। সম্পূর্ণ অটোমেটেড পদ্ধতি না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প উপায়ে ২০২৩-২৪ কর বর্ষের দাখিলকৃত প্রত্যেক সার্কেলের রিটার্নের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ডিজিটাল উপায়ে র্যানডম সিলেকশন পদ্ধতিতে অডিটের জন্য নির্বাচন করেছে এনবিআর।
একই করদাতার আয়কর রিটার্ন যাতে বারবার অডিটের জন্য নির্বাচিত না হয়, সে লক্ষ্যে পূর্ববর্তী ২ বছরে যেসব করদাতার আয়কর রিটার্ন অডিটের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, সেসব করদাতার ২০২৩-২৪ কর বর্ষের আয়কর রিটার্ন র্যানডম সিলেকশন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ পদ্ধতিতে সারা দেশের সব কর কমিশনারেটের মোট ১৫ হাজার ৪৯৪ জন করদাতার ২০২৩-২৪ কর বছরের আয়কর রিটার্ন অডিটের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানায়। এ কাজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে আয়কর রিটার্ন অডিট নির্বাচন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করে কাক্সিক্ষত পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।