রূপকথায় ঘুমন্ত রাজকুমারকে জাগাতে ‘সোনার কাঠি’ ছোঁয়ানোর গল্প আমাদের সবার জানা। কিন্তু বাস্তবিকই এক রাজপুত্র গত ২০ বছর ধরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাকে জাগানোর কোনো কমতি ছিল না পরিবারের। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে চিরঘুমের দেশে যাত্রা করছেন ‘ঘুমন্ত রাজকুমার’ বা ‘ঝষববঢ়রহম চৎরহপব’ নামে পরিচিত সৌদি আরবের রাজপুত্র আল ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল আল সৌদ। গত শনিবার ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমে তলিয়ে গেলেন তিনি। ২০০৫ সালে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর থেকে তিনি কোমায় ছিলেন।
যুবরাজ আল-ওয়ালিদ ১৯৯০ সালের এপ্রিলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাজপুত্র খালেদ বিন তালাল আল সৌদের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং বিলিয়নিয়ার রাজপুত্র আল-ওয়ালিদ বিন তালালের ভাতিজা। ২০০৫ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে, লন্ডনে সামরিক ক্যাডেট হিসেবে পড়াশোনা করার সময় তিনি এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। এই দুর্ঘটনায় তার মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত লাগে এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ফলে তিনি কোমায় চলে যান।
২০০৫ সাল থেকে ওয়ালিদের অবস্থার কোনো রকম উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকেরা ওয়ালিদকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার সব আশা ত্যাগ করলেও, তার বাবা খালিদের আশা ছিল ছেলে একদিন ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবে। বছর দুই আগেই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, যুবরাজকে জাগানো আর সম্ভব নয়। তবে অত্যাশ্চর্য কিছুর আশায় ছিলেন পিতা। তিনি পুত্রকে লাইফ সাপোর্ট থেকে বার করতে চাননি।
আল ওয়ালিদের পরিবার তার কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, রাজপুত্র কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি সামান্য সাড়া দিচ্ছেন। এই ভিডিওগুলো জনসাধারণের সহানুভূতি ও প্রশংসা কুড়িয়েছিল। সৌদি আরবের একটি বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রে ছিলেন রাজপুত্র আল-ওয়ালিদ। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে।
প্রিয় সন্তানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে গত শনিবার প্রিন্স খালিদ বিন তালাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আল্লাহর ফয়সালা ও তকদিরের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে গভীর দুঃখ ও শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের প্রিয় পুত্র প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ আজ আল্লাহর রহমতে ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন।’
এদিকে আল ওয়ালিদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘#ঝষববঢ়রহমচৎরহপব’ হ্যাশট্যাগটি ট্রেন্ডিং হয়। হাজার হাজার মানুষ ধৈর্য, বিশ্বাস এবং পিতার ভালোবাসার প্রতীক এই রাজপুত্রের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। একজন পিতার বছরের পর বছর ধরে সন্তানের শয্যাপাশে থাকার গল্প মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
রাজপুত্র আল-ওয়ালিদ যেখানে ছিলেন, সেই হাসপাতালের কক্ষটি একটি আধ্যাত্মিক তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছিল। দর্শনার্থীরা সেখানে গিয়ে নামাজ পড়তেন। পিতা-পুত্রের প্রতি সম্মান ও সমর্থন জানাতে নিয়মিত মানুষ আসতেন।
গতকাল রোববার আসরের নামাজের পর রিয়াদের তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ মসজিদে প্রিন্স আলওয়ালিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া তার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান গতকাল থেকে শুরু হয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে।
আপনার মতামত লিখুন :