- অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত
- ব্রয়লার কেজিতে অন্তত ১৫ ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত
- চালের বাজারে নেই কোনো সুখবর
শ্রাবণের প্রবল বর্ষণের মাঝে খাদ্যপণ্য সরবরাহ ঠিক থাকলেও নিত্যপণ্যের দামে ছাড় নেই। উপরন্তু বাড়ছে প্রতিদিনের অতিপ্রয়োজনীয় সবজি ও মুরগির দাম। তবে কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ীদের দাবি, বিভিন্ন সবজির মৌসুম শেষের পথে বিধায় দাম বাড়তি। ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতাদের ঝুড়িগুলো পর্যাপ্ত সবজিতে ঠাসা। তবুও অধিকাংশ সবজির দাম গত কয়েক দিনের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে দু-একটি সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ ছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার কেজিতে ১০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকার মতো।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর ও মালিবাগ বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ টাকা, বর্তমানে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। এ ছাড়া ঢাকার স্থানভেদে সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে।
ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, নিষিদ্ধ মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে। আলু ২৮ থেকে ৩০ এবং বিআর আটাশ চাল পাওয়া যাচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। তবে মাছের দাম কিছুটা কমায় স্বস্তিতে ক্রেতারা। রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, পাঙাশ প্রতি কেজিতে কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। প্রতি কেজি ইলিশ ঢাকার কাওরান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৬০০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশের মোকাম চাঁদপুর ও বরিশালে দাম কমলেও ঢাকায় দাম কমেনি, আরো বেড়েছে। ক্রেতারা জানান, ইলিশের দাম বাড়লেও অন্যান্য মাছের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। ডিমের দাম নিয়েও স্বস্তিতে ক্রেতারা। এ ছাড়া গরুর মাংস কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা আর খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের কয়েকজন ক্রেতা জানান, দিন দিন কাঁচাবাজারে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে সবজির দাম। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, চাল ছাড়া সব পণ্যের দাম এখন পর্যন্ত কম রয়েছে। শুধু চালের দাম বছরে প্রতি বস্তায় বড়েছে ১ হাজার টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, বিক্রেতাদের ঝুড়িগুলো সবজিতে ঠাসা, তবু দামে ছাড় নেই। উল্টো সব ধরনের সবজি, কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকা। গত সপ্তাহের ৩০ টাকার পটোল কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকায়। ঢেঁড়স, ঝিঙা, বরবটিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়ায় কেজিতে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অনেক কমেছে। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধন্দুল ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পটল প্রতি কেজি ৪০-৬০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ২৮-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম বৃদ্ধি বিষয়ে মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা রাজু আলম বলেন, বেশ কিছু সবজির মৌসুম এখন প্রায় শেষ। যেসব সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে সেগুলোর দাম বেড়েছে। মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে এসব সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। ফলে সবজিগুলোর দাম বেড়েছে। নতুন মৌসুমের সবজি ওঠার আগ পর্যন্ত কিছুটা বাড়তি থাকবে।
এদিকে মুদি পণ্যগুলো দাম তেমন হেরফের হয়নি। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি আগের দামে কেনা যাচ্ছে। কম দামে কেনা যাচ্ছে আলু, আদা, রসুনসহ অন্য নিত্যপণ্যও।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী রহমান রাফি বলেন, বাজারে সবজির দাম কয়েক দিন ধরে বেড়েছে। আজও বাড়তি দামে সবজি কিনলাম। কিছুদিন আগেও সবজির দাম কম ছিল, কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে বলতে গেলে সবজি দাম বাড়তি যাচ্ছে।
এদিকে চালের বাজারেও নেই সুখবর। কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দিনাজপুরে চালের দাম কমলেও ঢাকার বাজারে কমেনি। ঢাকায় প্রতি বস্তা চালের দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার গত বছর থেকে আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের শুল্কপ্রত্যাহার করে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ধাপে ধাপে শুল্ক প্রত্যাহার করেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। অন্যদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আরো চাল আমদানির কথা বলছে; কিন্তু সুফল মিলছে না। তাই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন তারা।
কিচেন মার্কেটের বাহার ট্রেডের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘সরু চালের কেজি এখন ৮০ টাকা। তবে একটু ভালো মানের চিকন চালের বস্তা (৫০ কেজি) এখন ৪ হাজার টাকা। গত বছরে এটা ২৯০০ থেকে ৩১০০ টাকায় বিক্রি করতাম। বছরে বস্তায় বেড়েছে প্রায় ১১০০ টাকা।’
ঢাকার অধিকাংশ বাজারে সাগর, ডায়মন্ড, রশিদ, মোজাম্মেলসহ বিভিন্ন প্রকারের চাল রয়েছে। প্রকার এবং স্থানভেদে এসব চালের দাম বাড়ে এবং কমে। তবে কমার চেয়ে বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে এসব চালের দাম।