ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫

গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন

৩ বছর আগেই ভবনটি ঝুঁঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ০২:৩৭ এএম

রাজধানীর গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে মার্কেটের ৫ তলার একটি গোডাউন থেকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকা-ের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কেও নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে, সংস্থাটি জানিয়েছে, ৩ বছর আগেই মার্কেটটিকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরেও মার্কেটে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এদিকে, ভবনের ৫ তলায় জজ মিয়া নামের এক ব্যবসায়ীর দুটি গোডাউন পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। গোডাউন দুটিতে মোবাইল এক্সেসরিজের প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল বলে দাবি জজ মিয়ার।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) কাজী নজমুজ্জামান জানান, সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটের আগুন বিপজ্জনক ছিল। এ ছাড়া দুই-তিন বছর আগে মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল ফায়ার সার্ভিস। মার্কেটের ভেতরে ছিল না কোনো ধরনের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ভবনের নিচতলা ও চার তলাসহ ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে অনেক লোকজন ছিল। এসব লোকজনকে বারবার বলার পরেও বের হতে চাচ্ছিলেন না তারা। পরে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ সেনাবাহিনী এসব লোকজনকে ভবন থেকে বের করার চেষ্টা করে। ভবনে থাকা মানুষদের কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। আমরা যদি সঠিক সময়ে আমাদের কাজ না করতে পারি তাহলে আগুন নেভানো সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় বিপজ্জনক এই অগ্নিকা- নির্বাপণ করতে পেরেছি। 

আগুনে কী পরিমাণ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা কি জানা গেছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী নজমুজ্জামান বলেন, আমরা দুইটা দোকানের শাটার খুলে আগুন পেয়েছি। তবে কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তদন্তসাপেক্ষে এটা জানা যাবে। 

আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ভবনের ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না। এ ছাড়া ভবনে কোনো ধরনের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এই ভবনটাকে তিন বছর আগেই ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ভবনের বৈদ্যুতিক সংযোগের তারগুলো এলোমেলো অবস্থায় ছিল। এলোমেলো তারের কারণে আগুনটা একদিক থেকে অন্যদিকে চলে যায়। প্রচ- ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, এতে করে আগুন নেভাতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে।  
হতাহতের কোনো ঘটনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো হতাহতের ঘটনা নেই। 

আগুনে যে দুটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর মালিক ব্যবসায়ী জজ মিয়া কান্না করতে করতে বলেন, আমার গোডাউনে ছিল সব আইফোনের মালামাল। এক কোটি টাকার ওপরে মালামাল ছিল। সব পুড়ে শেষ। শাহ পরান নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, পঞ্চম তলায় পশ্চিম পাশে একটি গোডাউন আছে আমার। এর পাশেই জজ মিয়ার দুটি গোডাউন। জজমিয়ার গোডাউন দুটি পুড়ে গেছে। গোডাউন দুটিতে প্রায় কোটি টাকার মালামাল ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মার্কেটটির নিচ তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত পুরোটাই মোবাইল এক্সেসরিজের গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গতকাল সকাল ৯টায় কর্মচারীরা গোডাউন খুলে কাজ করার সময় হঠাৎ করেই আগুন দেখতে পায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মার্কেটে। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোডাউনের মালামাল সরানোর চেষ্টা করেন। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান দুটির মালিক জজমিয়াকেও আগুনের ধোঁয়ায় অসুস্থ অবস্থায় বের হতে দেখা যায়।