শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:৫০ এএম

পুলিশের গঠন পদ্ধতি না বদলালে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:৫০ এএম

পুলিশের গঠন পদ্ধতি না বদলালে  রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে

পুলিশের গঠন পদ্ধতি যদি না বদলায়, তাহলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলতেই থাকবে বলে মনে করেছেন বস্ত্র ও পাট এবং নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। অন্যদিকে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সতর্ক করে বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত এখন গুরুতর হুমকির মুখে রয়েছে। এ ছাড়া দেশের পরিবর্তনের লক্ষ্যে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে সংস্কার অসম্ভব। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) শীর্ষক সংলাপে গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক এক সংলাপে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে হতাশাই পাওয়ার কথা। আমরা কখনো বলিনি যে, সবার বাড়িতে গোলাপ ফুল ফুটবে। আমি খুব বেশি পারদর্শী নই, যেসব মন্ত্রণালয়ে গেছি। আমি এক বছরে চারটা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। আই হোপ আই স্টে দেয়ার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি জানান, পুলিশ চাকরি করতে চায়নি। দেশে অভ্যুত্থানজুড়ে যা ঘটেছিল তা অকল্পনীয়। এ ধরনের বিপ্লব আগে দেখা যায়নি। লিডারলেস ইয়াং, এমনকি স্কুলের বাচ্চারাও মারা গেছে। প্রায় এক মাস তারা রাস্তায় ছিল। তাদের কোনো সাহায্য ছিল না। কারা মেরেছে, বলার দরকার নেই। ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত  টানা ফোনকল পেয়েছি, কোথাও বাড়িতে আগুন, কোথাও থানায় আগুন। ৪০-৪৫টা থানা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মারা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হলো। 

তিনি আরও বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নেই, ‘দেখি পুলিশ মোটেও আগ্রহী না। তারা বলছেন আমরা চাকরি করব না। আমি আল্টিমেটাম দিলাম। এই পুলিশ এখনো স্ট্রাকচার্ড হয়নি। যদি পুলিশের গঠন-পদ্ধতি না বদলায়, তাহলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলতেই থাকবে। পুলিশ ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হলে ‘টু-স্টেজ রিক্রুটমেন্ট’ চালু করতে হবে। যেভাবে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ঢুকেছে, ভবিষ্যতেও তেমনই হবে। পুরোটা রাজনীতিকীকরণ হয়েছে। আমি প্রস্তাব দিয়েছি, জানি না বাস্তবায়ন হবে কি না।’ শ্রম মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি তখন একেবারে প্রশান্ত মহাসাগরে। কোথায় যাব, বুঝতে পারছিলাম না। দায়িত্ব নেওয়ার পরই বেক্সিমকো ইস্যু সামনে আসে। ৩৮ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। প্রতিদিন তারা অন্য গার্মেন্টসকে বিঘিœত করে। এটা আমার ঘাড়ে এসে পড়ে। আমি কিছুই করতে পারিনি, শুধু একটা কমিটি করতে পেরেছি। একটা কোম্পানি ১৬টি ব্যাংক ও ৭টি ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। কোথায় নিয়েছে, কেউ জানে না। আমরা খোঁজার চেষ্টা করেছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জনতা ব্যাংক একাই দিয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। বারবার ফাইন্যান্স করেছে, অথচ কোনো কোলেটারাল নেই। আপনি শুনেছেন কখনো, একটা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পালিয়ে গেছেন? তিনজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের মধ্যে আছেন গরিবের গভর্নরÑ তিনিও পলাতক।

অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন শীর্ষক সংলাপে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সেবার মান, নীতি বাস্তবায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে দুর্বলতা দেশের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সুস্পষ্ট সংস্কার না হলে আগামী প্রজন্মকে এর মাশুল দিতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতগুলোকে ট্রাফিক বাতির সঙ্গে তুলনা করে লাল (গুরুতর উদ্বেগের ক্ষেত্র), হলুদ (সতর্কবার্তার ক্ষেত্র) ও সবুজ (ইতিবাচক অগ্রগতির ক্ষেত্র) শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে সিপিডি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বিনিয়োগ পর্যাপ্ত নয়। হাসপাতালগুলোতে অবকাঠামোর ঘাটতি, কর্মী সংকট আর সুলভ ওষুধের অভাব এখনো প্রকট। শিক্ষা খাতেও উন্নতি নেই শিক্ষক সংকট, শিখনের নিম্নমান, শহর-গ্রামের বৈষম্য চলমান। এ ছাড়া রাজস্ব আহরণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অনেকটাই পিছিয়ে, ঘাটতি রয়ে গেছে সরকারি ক্রয়ে সুশাসনের ক্ষেত্রে। ব্যাংকিং, জ্বালানি ও ভূমি খাতের সংস্কার হচ্ছে ধীরগতিতে। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য সামাজিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

সতর্কবার্তায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের মতো বিষয়কে মধ্যম পর্যায়ের হুমকি হিসেবে গণ্য করছে সিপিডি। গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কমলেও খাদ্যদ্রব্যের মূল্য এখনো বেশি। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে খুব কম, বিশেষ করে গ্রামে ও অনানুষ্ঠানিক খাতে। পোশাক ছাড়াও ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত খাতে রপ্তানির চেষ্টা তেমন ফল দেয়নি। এই ক্ষেত্রগুলো ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে আছে। যথাযথ নীতি সহায়তা পেলে এগুলো ইতিবাচক খাতের কাতারে উঠে আসবে। ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যর্থ হলে গুরুতর হুমকির পর্যায়ে নেমে যাবে। 

রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে সংস্কার অসম্ভব উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সবাইকে সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। বক্তব্যের মাধ্যমে বিষোদগার বন্ধ করতে হবে। গণতন্ত্র মানে অন্যজনের কথা শুনে সহ্য করা, তার মতকে সম্মান দেওয়া। তিনি বলেন, মানুষের কথা বলার সুযোগ অব্যাহত থাকলে আপনা-আপনিই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের পতনের পর বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে, এই পরিবর্তন বুঝতে না পারলে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি টিকতে পারবে না। আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, বিপ্লবোত্তর যে দেশ দ্রুত নির্বাচন করেছে, তারা ভালো করেছে; যারা দীর্ঘ সময় নিয়েছে, সেখানে অন্তঃকোন্দল বেড়েছে। এই সরকারের আমলে বিনিয়োগ আসেনি মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এতে তাদের দোষ নেই। বিনিয়োগে বাংলাদেশ অনেক নিচে। সিরিয়াস ডিরেগুলেশন ও সিরিয়াস লিবারেলিজম ছাড়া দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া যাবে না। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বাজেট অব্যাহত রাখার প্রয়োজন ছিল না মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট দেওয়া।

ফ্যাসিবাদের বাজেট চালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। সরকারের অনেক দায়িত্ব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ট্রেডবডিগুলোর হাতে অনেক কার্যক্রম তুলে দিয়ে সরকারকে নির্ভার হতে হবে। ফিজিক্যাল কন্ট্রাক্ট না কমালে দুর্নীতি কমানো যাবে না। একইসাথে, দেশে যত নিয়ন্ত্রণ (রেগুলেশন) থাকবে, তত দুর্নীতি বাড়বে। অর্থনীতিকে গণতান্ত্রিক করতে হবে, এতে সবার অংশগ্রহণ লাগবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!