ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

কুয়েতে ভেজাল মদপানে ২৩ জনের মৃত্যু  বাংলাদেশিসহ গ্রেপ্তার ৬৭ 

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০২:২১ এএম

কুয়েতে ভেজাল মদপানে মিথানল বিষক্রিয়ায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ১৬০ জন আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই এশউয় নাগরিক, যাদের মধ্যে ৫১ জনকে জরুরি কিডনি ডায়ালাইসিস এবং ৩১ জনকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কুয়েতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত সোমবার এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে। 

এদিকে অবৈধভাবে মদ উৎপাদন ও সরবরাহের অভিযোগে ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এক বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। তাকে চক্রটির মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ, ফরেনসিক বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ দল এই অভিযান পরিচালনা করে। প্রাথমিক তদন্তের পর সালমানিয়া এলাকায় নেপালি নাগরিক ভুবন লাল তামাংকে হাতেনাতে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে বিষাক্ত মিথানল উদ্ধার করা হয়েছে।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আরও দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক বিশাল ধানয়াল চৌহান, অন্যজন নেপালি নাগরিক নারায়ণ প্রসাদ ভশ্যাল। এরাও এই বিষাক্ত তরল উৎপাদন ও বিতরণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। 

এক বিবৃতিতে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আবাসিক ও শিল্প এলাকায় ছয়টি সক্রিয় মদের কারখানা এবং আরও চারটি নির্মাণাধীন কারখানা শনাক্ত করে জব্দ করা হয়েছে। চক্রের একজন নেপালি সদস্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, কীভাবে মিথানল মিশিয়ে মদ প্রস্তুত ও বিক্রি করা হয়। 

মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় কুয়েতে অ্যালকোহল আমদানি বা উৎপাদন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে গোপনে তৈরি এসব অবৈধ মদ নিরাপত্তা বা মান নিয়ন্ত্রণের আওতার বাইরে থাকায় এগুলোতে মিথানল বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে। 

ভারতের দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে প্রায় ৪০ ভারতীয় নাগরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন, কেউ আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন এবং অনেকে সুস্থতার পথে। 

কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মিথানল মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এর সেবন মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মন্ত্রণালয় মাদক ও নেশাজাতীয় পদার্থ পাচার এবং এর সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে, দেশের নিরাপত্তা ও জনগণের সুরক্ষাকে ঝুঁকিতে ফেলে এমন যে কোনো কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

মিথানল একটি বিষাক্ত বর্ণহীন অ্যালকোহল, যা শিল্প ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি সহজে চেনা যায় না এবং এর বিষক্রিয়ার উপসর্গ দেরিতে প্রকাশ পায়। সাধারণত বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুর ঝুঁকি ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংস্থা ডক্টরস উইদআউট বর্ডার্স। মিথানল একধরনের বিষাক্ত বর্ণহীন অ্যালকোহল, যা শিল্প ও গৃহস্থালির পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি শনাক্ত করা কঠিন। বিষক্রিয়ার লক্ষণ সাধারণত দেরিতে প্রকাশ পায়, তবে এর মধ্যে বমি বমি ভাব, বমি, পেটে ব্যথা, অতিরিক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। 

মেডিকেল দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদআউট বর্ডাসের (এমএসএফ) তথ্যানুযায়ী, বিশেষ করে এশিয়ায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মিথানলের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।