অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আয়তন বৃদ্ধি এবং নিরাপদ পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবিতে দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে কয়েকশ যানবাহন আটকে গিয়ে ভোগান্তির সম্মুখীন হয় যাত্রীরা। আধা ঘণ্টা পরে শিক্ষার্থীরা সরে গেলে পুনরায় সড়ক যোগাযোগ সচল হয়। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে আবারও আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে নতুন করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শঙ্কায় ফেলেছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারসহ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে শহরের নথুল্লাবাদে ছাত্র-জনতার সাত দিনের বেশি সড়ক অবরোধ এই অঞ্চলের মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এখনো শোনা যায়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আয়তন বৃদ্ধি এবং নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তিনটি যৌক্তিক দাবি অনেকে আগে থেকেই জানানো হয়েছে। গত আট দিন ধরে এই দাবির সপক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। কিন্তু এ নিয়ে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নড়চড় নেই, যা শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল দুপুর দেড়টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
তারা আরও বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নে উদ্যোগী না হয়, তাহলে সোমবার (আজ) দুপুরে মহাসড়ক অবরোধের মধ্যে দিয়ে গোটা দক্ষিণবঙ্গ অচল করে দেওয়া হবে। মহাসড়ক অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে সংশ্লিষ্ট মহলের অনীহা সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের দাবিকে ঘিরে মহাসড়ক অবরোধ এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শঙ্কা নিয়ে রাজনৈতিক ও সুশীল মহলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সমাজকর্মী কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি দিনভর সড়ক আটকে আন্দোলন করা এক ধরনের ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এতে যানবাহন আটকে সাধারণ মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, চলতি মাসের শুরুর দিকে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারসহ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে শহরের নথুল্লাবাদ এলাকায় সাত দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অবরোধ করে রাখেন ছাত্র-জনতা। সেই সময় মানুষের দুর্ভোগ লক্ষ্য করা গেছে, যা নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কিছুদিন না যেতেই ফের মহাসড়ক অবরোধ করে গোটা দক্ষিণাঞ্চল অচল করার হুমকি দিয়েছেন বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল তারা আধা ঘণ্টার জন্য মহাসড়ক অবরোধ করেন, এতে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে যায়, দেখা দেয় ভোগান্তি। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশ^বিদ্যালয় কিংবা প্রশাসনের তরফ থেকেও কোনো উদ্যোগ লক্ষ্যণীয় ছিল না, যা নাগরিক সমাজের জন্য অস্বস্তিকর এবং হতাশাজনক বটে।
মহাসড়ক অবরোধ এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) তৌফিক আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা ১০-১৫ মিনিটের প্রতীকী অবরোধ করেছে, এতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
শিক্ষর্থীদের দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটামের বিষয়ে ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো অনুসন্ধানে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু কাজ শেষে হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা যে দাবির কথা বলছেন, তা বাস্তবায়ন হতে অন্তত ৬ মাস সময় লাগবে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অমিয় মন্ডল, আবু বক্কর সিদ্দিক এবং রিপন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেও বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে যৌক্তিক দাবিগুলো যতবার উপস্থাপন করা হয়, ততবারই দেখি, দেখছি করে কালক্ষেপণ করেছে। সবশেষ শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামেন, রোববার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে, সোমবার (আজ) দুপুরের পর থেকেই দক্ষিণবঙ্গ অচল কর্মসূচি শুরু হবে।
তবে এই বিষয়ে কিছু জানেন না বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক রায়হান কাওসার। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সড়ক অবরোধ জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি করে, এই ধরনের আন্দোলন থেকে সবার বিরত থাকা উচিত। কোথাও যদি সমস্যা থাকে তা দূরীকরণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি অবশ্যই বরিশাল জেলা প্রশাসক গুরুত্বের সাথে দেখবেন, প্রয়োজনে ভিসিসহ তিনি আন্দোলনরতদের সাথেও বসবেন।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন