ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

ফারুক খানের অবৈধ টাকার ক্যাশিয়ার ড্রিমওয়ের রাজ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৭:৪৮ এএম
অবৈধ টাকার

মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে সিভিল এভিয়েশনের একজন কর্মী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন আবুল কাশেম রাজ। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের অবৈধ টাকার নিরাপদ ক্যাশিয়ার ছিলেন তিনি। এরপর আর তাকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় অবৈধ টাকায় গড়েছেন গ্রুপ অব কোম্পানি। যার অধিকাংশই কাগজে কলমে। সেই গ্রুপ অব কোম্পানি ড্রিমওয়ের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম রাজ। গত বছর গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে গিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করলেও জয়ী হতে পারেননি। 

সিভিল এভিয়েশন সূত্র বলছে, সোনা চারাচালান থেকে শুরু করে বিমানের নিয়োগ বাণিজ্যÑ ফারুক খানের হয়ে সবকিছ্ ুদেখভাল করতেন আবুল কাশেম রাজ। নিরাপদে টাকা পাচার করতে ড্রিমওয়ে প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ব্যানারে অফিস খুলেছেন লন্ডন ও দুবাইতে। এ ছাড়া দুবাই, লন্ডন ও কানাডায় নিজের নামে ও স্ত্রীর নামে রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরপরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এরপর থেকে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই রাজ। এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।  

জানা গেছে, মাত্র ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ড্রিমওয়ে গ্রুপ লিমিটেড। মাত্র ১০ বছরে বিস্ময়কর উত্থান এ গ্রুপের। ড্রিমওয়ের নামে আবুল কাশেম রাজ শুরু করেন আবাসন, ম্যানুফ্যাকচারিং, হোটেল, এগ্রো, ফার্নিচার, অটোমোবাইল, ক্যাটারিংসহ নানা ব্যবসা। দেশ ছাড়িয়ে অফিস খোলেন লন্ডন ও দুবাইয়ে। অন্যান্য আবাসন কোম্পানি যেখানে এ ব্যবসায় খেই হারাচ্ছেন, তখন একের পর এক বাহারি বিজ্ঞাপন তাদের ওয়েবসাইটে। ঢাকার উত্তরা, গুলশান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ধানমন্ডি, আফতাব নগর, মিরপুর ডিওএইচএসের মতো এলাকায় বিলাসবহুল অন্তত ১৮টি প্রকল্পের বিবরণ রয়েছে সেখানে। যদিও এর অধিকাংশের বাস্তবে নেই কোনো অস্তিত্ব।

এদিকে ড্রিমওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের সাবেক কর্মীরা জানান, বাহারি নাম ও ডিজাইন দেখিয়ে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো। কখনো বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার রূপায়ণ টাওয়ার আবার কখনো বনানী, কখনো গুলশান অফিস দেখানো হতো। আসলে এটি হচ্ছে মূলত বিমানবন্দর ও বিমানের ঘুষ-নিয়োগ, পদোন্নতি, ক্রয়, লিজ বাণিজ্যের ঘুষের টাকা আদায়ের কেন্দ্র। যা সরাসরি পরিচালনা করতেন সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত আবুল কাশেম রাজ। 

কর্মীরা আরও জানান, সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ফারুক খানের মেয়ে কানতারা খানকে সেখানে আসতে দেখতেন এবং যাওয়ার সময় বস্তাভর্তি টাকা আবুল কাশেম রাজ ও কানতারা খানের গাড়িতে উঠাতেও দেখেছেন। এই গাড়ি কোনো ব্যাংকে যায় না দাবি করে, ওইসব কর্মকর্তা সপ্তাহের ঘুষের টাকা তারা মূলত লন্ডন ও দুবাইয়ের অফিসে হুন্ডি করে পাচার করা হতো বলে জানান। 

অভিযোগ রয়েছে, ড্রিমওয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম রাজ ও অন্যান্য পরিচালকদের টাকাও হুন্ডির মাধ্যমে বাইরে পাচার করেছেন। এসব অপরাধকে ঢাকতে, নামেমাত্র কিছু টাকা বিনিয়োগ করে, তারা বিভিন্ন কোম্পানি খুলেছেন। এগুলো হলোÑ ড্রিমওয়ে প্রোপার্টিজ লিমিটেড, ড্রিমওয়ে হোল্ডিংস লিমিটেড, ড্রিমওয়ে এগ্রো লিমিটেড, ড্রিমওয়ে টেকনোলজি লিমিটেড, এম এস ড্রিমওয়ে কনস্ট্রাকশন, ফারমারস গোল্ড, আইকন লাইফস্টাইল, আইকন, রাজ দরবার, কফি এক্সপ্রেস, পেশওয়ার ডাইন, তারকি এক্সপ্রেস, ড্রিমওয়ে কার পয়েন্ট, ড্রিমওয়ে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, আইকন ফার্নিচার, আইকন ইনটেরিয়র অ্যান্ড আর্কিটেকচার। মূলত এর প্রত্যেকটিকে লস দেখিয়ে, বিপুল পরিমাণ টাকা বাইরে পাচার করেছেন ড্রিমওয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম রাজ। এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে অডেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।

গত বছর মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দোয়াত-কলম মার্কায় দাঁড়িয়েছিলেন ড্রিমওয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম রাজ। প্রায় ১০ কোটি টাকা এ নির্বাচনে ব্যয় করেছিলেন। ফারুক খান ও কানতারা খান প্রশাসনের সর্বশক্তি নিয়োগ করেও জেতাতে পারেনি রাজকে। 

উপজেলা নির্বাচনে রাজের এক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে অভিযোগ করে বলেন, ১০ বছরে আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে শত শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় শুধু দেশেই না, দুবাই, লন্ডন ও কানাডাতেও নামে-বেনামে নিজস্ব ব্যবসায় লগ্নি করেছেন। তার স্ত্রীর নামে কানাডাতে গড়েছেন বাড়ি। এসব অবৈধ টাকার মাধ্যমে তিনি নির্বাচনে জয়ী হতে চেয়েছিলেন।

এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার চেষ্টায় ড্রিমওয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম রাজের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।