খুলনার সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। এটি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। স্বজনদের অভিযোগ, তিনি খুন হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। গত রোববার রাতে খুলনার খান জাহান আলী সেতুর (রূপসা সেতু) নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ডান হাত ও মুখম-লে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সাংবাদিক বুলু দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন।
সহকর্মী ও পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইয়ের মধ্যে ওয়াহেদ-উজ-জামান ছিলেন সবার বড়। কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার মেজ ভাই। আর ছোট ভাই আনিছুজ্জামান দুলু ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মহানগরের শিববাড়ি মোড় এলাকার ইব্রাহিম মিয়া রোডে তাদের পৈতৃক বাড়ি থাকলেও সেটি প্রায় চার বছর আগে বিক্রি করা হয়। এরপর থেকে ভাড়া বাসায় থাকতেন ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলু। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। প্রায় চার মাস আগে তার স্ত্রী নিখোঁজ হন।
সাংবাদিক বুলু খুলনা প্রেসক্লাব ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে) ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এমন প্রশ্ন রেখেছেন। তাদের ভাষ্য, যে মানুষটি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরবেন তিনি নিশ্চয়ই পিলারের বেজমেন্টের ওপর ঝাঁপ দেবেন না; যদি ঝাঁপই দেবেন তার চোখের চশমা হাতে ছিল কেন? তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কোথায়? সহকর্মীরা দাবি করছেন সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন। এ ছাড়া জানা গেছে, হরিণটানা এলাকার ব্যক্তির সঙ্গেও তার লেনদেন ছিল দীর্ঘদিনের। অনুসন্ধানে আসল তথ্য উদঘাটন হবে বলে সহকর্মীদের আশা।
সাংবাদিক বুলুর ছোট ভাই আনিছুজ্জামান দুলু বলেন, ভাইয়া গত মাসে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কিছু দিন হাসপাতালে ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে খুব বেশি কিছুই আলোচনা করতেন না। শনিবার রাতে তার সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছে। আমার কাছে বিষয়টি হত্যাকা-ই মনে হচ্ছে। সুস্থ একজন মানুষ হঠাৎ করেই এভাবে মারা যেতে পারে এটা বিশ্বাস করা কঠিন।
বুলুর এক নিকটাত্মীয় নুরনাহার পারভীন বলেন, গত শুক্রবার ভাড়া করা নতুন বাসায় মালপত্র তুলেছিলেন তিনি। এরপর যশোরে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। গত রোববার সকালে নাশতা করে বেরিয়ে যান। এ সময় তিনি এক বোতল পানি ও একটা ক্যাপ চেয়ে নেন। দুপুরে ফোন করলে সেটি বন্ধ পান। রাতে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ‘তার স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে অশান্তিতে ছিলেন। তবে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে বিশ্বাস করি না। আমরা চাই পুলিশ ভালোভাবে তদন্ত করুক।’
খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজে) সভাপতি মহেন্দ্র নাথ সেন বলেন, ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলু দীর্ঘদিন বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। তার মৃত্যুর বিষয়টির সঠিক তদন্ত দাবি করছি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার নৌপুলিশের এসআই মহিদুল হক বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সেতুর ২ নম্বর পিলারের বেজমেন্টের ওপর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। সুরতহালে দেখা গেছে মুখ থেঁতলানো, দুই হাত ও বাঁ পা ভাঙা। তদন্ত চলছে। এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর মরদেহ বেলা ৩টায় খুলনা প্রেসক্লাবে আনা হয়। সেখানে জানাজা শেষে বিকেল ৪টায় খালিশপুর গোয়ালখালী কবর স্থানে তার দাফন স¤পন্ন হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন