ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

‘কব্জি কাটা’ গ্রুপের  মূল হোতারা অধরাই

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৮:১৭ এএম
মোহাম্মদপুর-আদাবর

রাজধানীর আদাবর এলাকায় ছেলেমেয়েকে আটকে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে, এমন খবরে সেখানে যায় আদাবর থানা পুলিশের একটি টিম। পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনাটি বোঝার চেষ্টা করছিলেন। আর পুলিশের পিকআপচালক কনস্টেবল আল আমিন গাড়ির কাছেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তার এক হাতের কব্জি ব্যাপকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এ সময় ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও। ঘটনার পরপরই যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই এলাকা থেকে ১০২ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে ৫ জন পুলিশকে কোপানোর সঙ্গে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশ হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। বাকি ৯৭ জনকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ডিএমপির আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। 

এদিকে গত সোমবার রাতের এ ঘটনার পর থেকে আদাবর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ত্রাসী গ্রুপের ভয়ে ও পুলিশি গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন তারা। জানা গেছে, পুলিশকে কোপানোর সঙ্গে জড়িত কব্জি কাটা গ্রুপের সদস্যরা। অনেককে আটক করতে পারলেও এ গ্রুপের দলনেতা জনি ও রনিকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ফলে স্বস্তির চেয়ে আতঙ্কই বেশি কাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। তারা বলছেন, এ সন্ত্রাসী গ্রুপ পুলিশকেই ছাড় দিচ্ছে না। সেখানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ তো তাদের কাছে কিছু না। এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় না আনতে পারলে এলাকার পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। যৌথ বাহিনী যেহেতু অভিযান চালিয়েছে, তাই তারা ক্ষোভে আরও ভয়ংকর রূপে হামলা চালাবে। 

আদাবর থানা পুলিশের তথ্যমতে, গত সোমবার রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ থেকে কল আসে, আদাবর থানাধীন সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় গ-গোল হচ্ছে। থানার ডিউটি অফিসার হাউজিং এলাকার টহল টিমকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। তখন টহল টিম সেখানকার একটি গ্যারেজে গিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা চালক আল আমিনকে একা পেয়ে কব্জি কাটা গ্রুপের সদস্যরা তাকে কুপিয়ে আহত করে। গাড়িতে হামলা চালায়। হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পাওয়া ওই পুলিশ কনস্টেবলকে হৃদরোগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

আদবর থানার ওসি এস এম জাকারিয়া বলেন, গত সোমবার রাতে এ ঘটনার পরপরই যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে কিশোর গ্যাংয়ের ১০২ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশ হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। 

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১০টা ৫১ মিনিটে একটি নির্মাণাধীন বাড়ির টিনশেড গেটের সামনে ২০-২৫ জন সশস্ত্র কিশোর গ্যাং সদস্য এসে জড়ো হয়। এ সময় তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল কব্জি কাটা গ্রুপের সদস্য জনি ও রনি। কিশোর গ্যাং সদস্যরা এক মিনিট পর বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে কাউকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর তারা তাকে না পেয়ে চলে যায়। 

স্থানীয়রা বলছেন, সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া ঘটনাটি মূলত পুলিশ সদস্যদের কুপিয়ে আহত করার কিছুক্ষণ আগের। তারা এ সড়ক দিয়ে গণছিনতাই করতে করতে পুরো আদাবর এলাকায় মহড়া দেয়। ওই সময় নির্মাণাধীন বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে চাঁদা দাবি করছিল। না দেওয়ায় জনি ও রনি বাড়ির কেয়ারটকারসহ যারা ছিল, তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মোহাম্মদপুর-আদাবর ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং ‘কব্জি কাটা’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য জনি ও রনি। তারা আদাবর-১০ এলাকায় বালুর মাঠে বসে পুরো আদাবর এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। কব্জি কাটা আনোয়ার জেলহাজতে থাকায় তার হয়ে এলাকায় এ দুই কিশোর গ্যাং বাহিনী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। এর আগেও বেশ কয়েকবার বহু মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। গ্রেপ্তারের কয়েক দিনের মধ্যেই জামিন নিয়ে পুনরায় তারা একই কাজ শুরু করে। পুলিশের ওপর হামলায় নাজির, ওসমান, দাঁতভাঙ্গা সুজন, কব্জি কাটা হৃদয় ও গাঁজা ব্যবসায়ী রাজুসহ অনেকে সরাসরি জড়িত ছিল। 

ঘটনার পর পরই রাতেই আদাবর এলাকায় এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে শুরু হয় যৌথ অভিযান। অভিযানে ১০২ জন সদস্যকে আটক করা হয়। তবে কব্জি কাটা গ্রুপের দলনেতারা বরাবরই অধরা রয়ে গেছে। 

তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার এ কে এম মেহেদী হাসান বলেন, আটক ১০২ জনের মধ্যে পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের পুলিশ হত্যাচেষ্টা ও পুলিশি কাজে বাধার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের রিমান্ড চাওয়া হবে। আর বাকি ৯৭ জনের বিরুদ্ধে এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে বিভিন্ন ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যেহেতু অনেক লোক, তাই মোবাইল কোর্টের রায় দিতে সময় লাগবে। এসি বলেন, এক ছেলে-মেয়েকে আটকে একটি গ্রুপ মুক্তিপণ দাবি করছে, এমন খবরে পুলিশ সেখানে গেলে ঘটনাটি ঘটে।